পঞ্চম শ্রেণি | বাংলা ব্যকরণ | প্রবন্ধ রচনা ১৬-২০ | PDF: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়টির প্রবন্ধ রচনা অংশ হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা সমুহ নিয়ে আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
১৬. বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ
সূচনা : বীরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ অবদানের কারণে কয়েকজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠর মর্যাদা। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ তেমনই একজন।
জন্মপরিচয় : নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৩ সালের ২৬-এ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই বাবা-মা হারা হন তিনি।
ছেলেবেলা : ছেলেবেলায় খুব দুরন্ত ছিলেন নূর মোহাম্মদ শেখ। নাটক, থিয়েটার আর গানের প্রতি ছিল প্রবল অনুরাগ।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান : ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও তাঁর সাথী মুক্তিযোদ্ধারা আক্রান্ত হন পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা। নূর মোহাম্মদ শেখ হালকা একটা মেশিনগান নিয়ে গুলি ছুঁড়ছিলেন। কৌশল হিসেবে বার বার অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন তিনি।
এক সময় মর্টারের গোলার আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। এ অবস্থায় সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে একাই শত্রæদের প্রতিরোধ করে যান। অবিরাম গুলি চালাতে চালাতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
উপসংহার : যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই অকুতোভয় বীর। বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ আমাদের অহংকার, আমাদের অনুপ্রেরণা।
১৭. বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন
সূচনা : বীরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ অবদানের কারণে কয়েকজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠর মর্যাদা। বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন তেমনই একজন।
জন্মপরিচয় : বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ১৯৩৪ সালের জুন মাসে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বাঘচাপড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান।
কর্মজীবন : বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন দেশকে ভালোবাসতেন। তাই বেছে নিয়েছিলেন নৌবাহিনীর চাকরি। ১৯৫৩ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ডাক এলে ২ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন মোহাম্মদ রুহুল আমিন। ১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের নৌজাহাজ বিএনএস পলাশ আর পদ্মা খুলনা দখলের উদ্দেশ্যে ধেয়ে আসছিল। বিএনএস পলাশে অবস্থান করছিলেন রুহুল আমিন।
আরো দেখুন
খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি আসামাত্র শত্রæর বোমারু বিমান থেকে জাহাজ দুটির ওপর বোমা এসে পড়ে। দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত আহত অবস্থায় জাহাজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন তিনি। কিন্তু তীরে অপেক্ষমান রাজাকাররা নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁকে। শহিদ হন তিনি।
উপসংহার : খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন। তিনি আমাদের অহংকার। দেশমাতৃকার জন্য তাঁর অসামান্য অবদান তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
১৮. শহিদ বুদ্ধিজীবী
অথবা, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস
সূচনা : শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়, তবে বুদ্ধিজীবীরা জাতির মস্তিষ্ক। তাঁদের মেধা, শ্রম ও দেশপ্রেম জাতিকে আলোর পথ দেখায়, জাতি গঠনে সহায়তা করে। আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির মূলে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের বিশেষ অবদান রয়েছে।
পাকিস্তানি হানাদারদের তান্ডব : স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা যেমন হারিয়েছি অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, তেমনি হারিয়েছি শত শত দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীকে। দেশদ্রোহী রাজাকার, আলবদর ও আল-শামসদের সহায়তায় পাক হানাদার বাহিনী অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের বরেণ্য মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের একেবারে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তারা এই হত্যাকাণ্ড চালায়।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পটভ‚মি : পাকিস্তানি বাহিনী যখন বুঝতে পারে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য নীলনকশা প্রণয়ন করে। নীলনকশা অনুযায়ী ৭ থেকে ১৪ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। বেছে বেছে শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীদের হত্যা করে। এ ঘটনার স্মরণে প্রতিবছরই ১৪ই ডিসেম্বর আমরা ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছি।
বুদ্ধিজীবী হত্যার পর্যায় : ১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব ১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চ থেকে ৩০-এ নভেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ১লা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। প্রথম পর্বে যাঁদের হত্যা করা হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্বী শিক্ষক অধ্যাপক এম. মুনিরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, সুরসাধক আলতাফ মাহমুদ, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. যোগেশচন্দ্র ঘোষ, কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নতুনচন্দ্র সিংহ প্রমুখ। সাংবাদিক মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভিন, শহীদ সাবের প্রমুখরাও এই রাতে শহিদ হন।
দ্বিতীয় পর্বের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে আলবদর বাহিনী। এ পর্বে যাঁদের হত্যা করা হয় তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ও বিশিষ্ট নাট্যকার অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রাশীদুল হাসান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
সাংবাদিকদের মধ্যে শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামউদ্দীন আহমদ, আ.ন.ম. গোলাম মোস্তফা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক বুদ্ধিজীবীর লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়ের বাজার বধ্যভ‚মিতে।
উপসংহার : বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশের জন্য ত্যাগের মহা আদর্শ স্থাপন করে গেছেন তাঁরা। সেই আদর্শ অনুসারে আমরা নিজেদের যোগ্য মানুষরূপে গড়ে তুলব।
১৯. স্যার জগদীশচন্দ্র বসু
অথবা, একজন বাঙালি বিজ্ঞানী
ভূমিকা : মেধা ও নিরলস সাধনার মাধ্যমে যে সকল বিজ্ঞানী পৃথিবীকে আলোর পথ দেখিয়েছেন তাঁদের মধ্যে স্যার জগদীশচন্দ্র বসু অন্যতম। বিজ্ঞান জগতে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তিনি একজন বাঙালি বিজ্ঞানী, আমার প্রিয় বিজ্ঞানী।
জন্ম পরিচয় : জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০-এ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের মুন্সীগঞ্জের রাঢ়িখাল গ্রামে।
শিক্ষাগ্রহণ : জগদীশচন্দ্র বসুর পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় বাড়িতে। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে ১৮৭৪ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৮ সালে এফএ এবং ১৮৮০ সালে বিজ্ঞান শাখায় ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে বিলেতে যান ডাক্তারি পড়তে। ১৮৮১ সালে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস্ পাস করার পর লন্ডন থেকে কৃতিত্বের সাথে বিএসসি পাশ করেন।
কর্মজীবন : ১৮৮৫ সালে জগদীশচন্দ্র বসু দেশে ফিরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
আবিষ্কার ও অবদান : বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো ‘গাছেরও প্রাণ আছে’ এটি প্রমাণ করা। ক্রেস্কোগ্রাফ, রিজোনাস্ট রেকর্ডার ইত্যাদি যন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দেন যে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনের মধ্যে অনেক মিল আছে। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং তার ছাড়াই তা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রেরণে সফলতা অর্জন করেন। তারই প্রয়োগ ঘটছে আজকের বেতার, টেলিভিশন, রাডারসহ বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান-প্রদান এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
অবদানের স্বীকৃতি : জগদীশচন্দ্র বসুর আশ্চর্য সব আবিষ্কার দেখে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টইন বলেছিলেন, “জগদীশচন্দ্র বসুর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞানজগতে এক একটি বিজয়স্তম্ভ।” বিজ্ঞান শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর সফলতাকে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বলে স্বীকৃতি দেয় লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা।
স্বদেশপ্রেমের নমুনা : অল্প সময়ের মধ্যে করা জগদীশচন্দ্র বসুর পরীক্ষণগুলো ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমকে দেয়। এসবের ভিত্তিতে তিনি দেশে বিদেশে বক্তৃতা প্রদান করে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ বক্তৃতা শুনে বিখ্যাত বিজ্ঞানী অলিভার লজ ও লর্ড কেলভিন তাঁকে বিলেতে থেকে অধ্যাপনা করার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু দেশের কল্যাণে তিনি সেই লোভনীয় প্রস্তাব গ্রহণ না করে ফিরে আসেন।
লেখালেখি : জগদীশচন্দ্র বসু মূলত বিজ্ঞানী হলেও লেখালেখিতেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ছোটদের জন্য তাঁর লেখা ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’ বাংলা ভাষায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। ‘অদৃশ্য আলোক’ নামক বইটিও ছোটদের জন্য তাঁর চমৎকার একটি রচনা।
পুরস্কার ও সম্মাননা : ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ-ভারত সরকার জগদীশচন্দ্র বসুকে ‘নাইট’ উপাধি দেয়। ১৯৩৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই বিজ্ঞানীকে ‘ডিএসসি’ ডিগ্রি প্রদান করে।
উপসংহার : মহান এই বিজ্ঞানী ১৯৩৭ সালের ২৩-এ নভেম্বর ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একজন সফল বিজ্ঞানী। বাঙালির গৌরব।
আরো পড়ুনঃ
-
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ভাবুক ছেলেটি গল্প প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | অবাক জলপান নাটকটির প্রশ্ন উত্তর | PDF
২০. একটি ঐতিহাসিক স্থান
অথবা, উয়ারী-বটেশ্বর
অথবা, মাটির নিচে যে শহর
[সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা; ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ, ঢাকা]
ভূমিকা : উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতœস্থান। এখানে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল বিস্ময়কর এক নগর সভ্যতা। এখান থেকে মাটি খুঁড়ে মিলেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
পরিচয় : উয়ারী-বটেশ্বর বলে যা শোনা যায় তা আসলে দুটি গ্রামের নাম। ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় গ্রাম দুটি অবস্থিত। প্রতœতাত্তি¡করা এখান থেকে প্রাচীন এক নগর সভ্যতা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।
আবিষ্কার : ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকেরা মাটি খনন করার সময় একটা পাত্রে জমানো কিছু মুদ্রা পান। এগুলো বঙ্গদেশের এবং ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা ছিল। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান সেগুলো সংগ্রহ করেন। উয়ারী-বটেশ্বরের প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন সংগ্রহের সেটাই ছিল প্রথম প্রচেষ্টা। এরপর নানা সময়ে মাটি খুঁড়তে গিয়ে এখান থেকে বিভিন্ন নির্দশন পাওয়া যায়। ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এখানে খনন কাজ শুরু করা হয়।
প্রাপ্ত নিদর্শন : উয়ারী-বটেশ্বর থেকে পাওয়া গেছে অনেক মূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মুদ্রা ভাণ্ডার, প্রাচীন দুর্গনগর, ইটের স্থাপত্য, বন্দর, রাস্তা, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর ইত্যাদি।
ধর্মীয় নিদর্শন : উয়ারী-বটেশ্বর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিবপুর উপজেলার মন্দিরভিটায় একটি বৌদ্ধ পদ্মমন্দির আবিস্কৃত হয়েছে। এছাড়া জানখারটেকে একটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
প্রাচীনত্ব : উয়ারী বটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে গবেষকগণ ধারণা করেছেন যে, প্রাচীন এই সভ্যতা অন্তত আড়াই হাজার বছরের পুরনো।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব : প্রতœতত্ত¡বিদদের মতে, উয়ারী-বটেশ্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে ভ‚মধ্যসাগর অঞ্চলের সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ‘উয়ারী-বটেশ্বর’ রাজ্যের সাথে যোগাযোগ ছিল বলে ধারণা করা হয়।
দুর্গ প্রাচীর, ইটের স্থাপত্য, মুদ্রা, গহনা, ধাতব বস্তু, অস্ত্র থেকে শুরু করে জীবনধারণের যত প্রতœবস্তু পাওয়া গেছে তা থেকে সহজেই বলা যায়, এখানকার মানুষ যথেষ্ট সভ্য ছিল। প্রাচীন বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রে এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
উপসংহার : উয়ারী-বটেশ্বরের প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনগুলো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সুবর্ণ সাক্ষী। তাই স্থানটির যথাযথ সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য আমাদের উয়ারী-বটেশ্বরসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করা প্রয়োজন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।