নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২৬-৩১ | PDF: বাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক হতে গুরুত্বপূর্ণ সব সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক এর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
প্রশ্ন\ ২৬\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাজবলভ : আপনারা তর্কের ভেতর যাচ্ছেন আলোচনা শুরু করার আগেই। খুব সংক্ষেপে কথা শেষ করা দরকার। বর্তমান অবস্থায় এই ধরনের আলোচনা দীর্ঘ করা বিপজ্জনক।
জগৎশেঠ : কথা ঠিক। কিন্তু নিজের স্বার্থ সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়ে একটা বিপদের ঝুঁকি নিতে যাওয়াটাও তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাফ করবেন বেগম সাহেবা, আমি খোলাখুলি বলছি। অঙ্গীকার করে লাভ নেই যে, শওকতজঙ্গ নিতান্তই অকর্মণ্য। ভাংয়ের গেলাস এবং নাচওয়ালি ছাড়া সে আর কিছুই জানে না। কাজেই শওকতজঙ্গ নবাব হবে নামমাত্র। আসলে কর্তৃত্ব থাকবে বেগম সাহেবার এবং পরোক্ষে তাঁর নামে দেশ শাসন করবেন রাজবলভ।
রায়দুর্লভ : ঠিক এই ধরনের একটা সম্ভাবনার উলেখ করার ফলেই হোসেন কুলি খাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
জগৎশেঠ : আমি তা বলছিনে। তা ছাড়া এখানে সে কথা অবান্তর। আমি বলতে চাইছি যে, শওকতজঙ্গ নবাবি পেলে বেগম সাহেব এবং রাজা রাজবলভের স্বার্থ নির্বিঘœ হবে আমাদের তেমন আশা নেই। কাজেই আমাদের পক্ষে নগদ কারবারই ভালো।
ক. ক্লাইভ এবং ওয়াটস কী ছদ্মবেশ ধারণ করে?
খ. মিরজাফররা সিরাজের পতন চায় কেন?
গ. উদ্দীপকের রাজবলভ এবং জগৎশেঠ চরিত্রের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ষড়যন্ত্রকারীদের কারণেই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের নির্মম এবং করুণ পরিণতি ঘটে। ”মন্তব্যটি বিচার কর।
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৮ | PDF
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৯-১৭ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৮-২৫ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২৬-৩১ | PDF
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১১-২০ | PDF Download
২৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ক্লাইভ এবং ওয়াটস মহিলাদের ছদ্মবেশ ধারণ করে।
খ. নবাব সিরাজের পতন হলে মিরজাফরসহ আরও অনেকের স্বার্থ উদ্ধার হবে এজন্যে তারা সিরাজের পতন চায়।
মিরজাফর ইংরেজদের প্ররোচনায় ধীরে ধীরে বাংলার মসনদের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ক্ষমতার লোভে তার সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যার ফলে তিনি সিরাজের পতনের জন্যে অন্যান্যদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। কারণ তারাও চায় সিরাজের পতন হোক।
রাজবলভ, উমিচাঁদ, মানিকচাঁদ, ঘসেটি বেগম প্রমুখ মনে করেন সিরাজের পতন হলে যে যার জায়গা থেকে লাভবান হবে। এই সুযোগ গ্রহণ করে ইংরেজরা। তারাও এই দলে যোগ দিয়ে সবাই মিলে নবাব সিরাজের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
গ. উদ্দীপকের রাজবলভ ও জগৎশেঠ চরিত্রের মাঝে রয়েছে গভীর সাদৃশ্য।
স্বার্থচিন্তা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। জাগতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্যে এরা মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে অন্যের সর্বনাশ করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। উদ্দীপকের রাজবলভ ও জগৎশেঠ এ ধরনের চরিত্রের দুজন মানুষ।
রাজবলভ এবং জগৎশেঠ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। এরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। রাজবলভ বিক্রমপুরের লোক। সে ছিল বাঙালি বৈদ্য এবং জাহাজের কেরানি।
হোসেন কুলি খাঁর মৃত্যুর পর ঢাকার দেওয়ান হয়। পরবর্তীতে ঘসেটি বেগমের সাথে মিলিত হয়ে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। জগৎশেঠ হলো উপাধি। তার আসল নাম মহতাব চাঁদ।
নবাব সরফরাজ খাঁকে হটিয়ে বাংলার মসনদে আলীবর্দী খাঁকে বসানোর পেছনে জগৎশেঠের হাত থাকলেও স্বার্থের জন্যে নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কেননা তিনি চেয়েছিলেন সিরাজকে তার হাতের মুঠোয় রাখতে। সেটা যখন পারলেন না তখন সিরাজের পতনের জন্যে অন্যান্যদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. “উদ্দীপকের ষড়যন্ত্রকারীদের কারণেই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের নির্মম ও করুণ পরিণতি ঘটে।” মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।
সিরাজউদ্দৌলা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। কিন্তু তার সিংহাসনে বসার পর থেকেই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। উদ্দীপকের জগৎশেঠ ও রাজবলভ সেসব ষড়যন্ত্রকারীর মধ্যে অন্যতম।
নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা বাংলার মসনদে বসেন। এই মসনদের অন্যতম দাবীদার ঘসেটি বেগম ও তার পালিত পুত্র বিষয়টি ভালোভাবে মেনে নিতে পারেন না।
তাছাড়া নবাব স্বাধীনচেতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, সর্বোপরি প্রজাবৎসল হওয়ায় কিছু মানুষের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করে। যার ফলে তারা নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
নবাব সিরাজ তারুণ্যের পূজারী ও নির্ভীক হওয়ায় অন্যায়কে কখনোই প্রশ্রয় দিতেন না। এদেশে ব্যবসার জন্যে আশা ইংরেজদের ধৃষ্টতা এবং চারপাশের লোকজনের স্বার্থান্বেষী কর্মকাণ্ডকে তিনি কঠোর হাতে দমন করতে চেয়েছিলেন। এজন্যে ক্রমে তার শত্র“ বাড়তে থাকে।
সঙ্গে ক্ষমতালোভী আত্মীয় পরিজনদের প্রতিহিংসা তার পতনের পথকে ত্বরান্বিত করে। একসময় তিনি ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে পড়েন। ষড়যন্ত্রকারীরা ছলে বলে কৌশলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বদ্ধপরিকর হয়।
উদ্দীপকের রাজবলভ ও জগৎশেঠসহ খালা ঘসেটি বেগম, বেনিয়া ইংরেজরা, সেনাপতি মিরজাফর প্রমুখদের ষড়যন্ত্রের কারণে তার জীবনের নির্মম পরিণতি ঘটে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যুক্তিযুক্ত।
প্রশ্ন\ ২৭\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মাস্টার দা সূর্যসেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এ দেশের গণমানুষকে জাগিয়ে তুলতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। তাঁরই নির্দেশে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল হামলার পর ব্রিটিশ শাসকদের টনক নড়ে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে ১০,০০০/- টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। অর্থের লোভে জনৈক ব্যক্তি তার অবস্থান জানিয়ে দিলে তিনি ধরা পড়েন। অতঃপর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ক. সিরাজউদ্দৌলা কোন স্থানে বন্ধি হন?
খ. ‘এ-পীড়ন তুমি দেখলে না?’ কে, কেন বলেছে এ কথা?
গ. উদ্দীপকের মাস্টার দা সূর্যসেন ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের সূর্যসেন এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা একই পরিণতির শিকার হয়েছেন।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
২৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নবাব সিরাজউদ্দৌলা বন্দি হন ভগবানগোলা নামক স্থানে।
খ. কথাটি বলেছেন নবাব সিরাজ তার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার উপরে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে।
নবাবকে বন্দি করে জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায় নিক্ষেপ করা হয়। তাকে হত্যা করার জন্যে মোহাম্মদি বেগকে নির্দেশ দেয় মিরজাফরের পুত্র মিরন। তার হুকুমে মোহাম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করতে যায়। সে প্রথমে সিরাজকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তিনি লুটিয়ে পড়েন।
মাথা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন তিনি। তিনি স্খলিত কন্ঠে তখন বলে উঠেন লুৎফা, খোদার কাছে হাজার শুকরিয়া, এ-পীড়ন তুমি দেখলে না।
গ. উদ্দীপকের মাস্টার দা সূর্যসেন ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের প্রতিনিধি।
মাস্টার দা সূর্যসেন একজন স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী ছিলেন। এদেশের স্বাধীনতার জন্যে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। দেশের প্রতি অসীম ভালোবাসার তাগিদে তিনি নিজের সমস্ত কিছু উজাড় করেছেন।
উদ্দীপকে দেখা যায় মাস্টার দা সূর্যসেন ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এজন্যে তারই নির্দেশে ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল হামলার পর ব্রিটিশ শাসকের টনক নড়ে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে ইংরেজরা পুরস্কার ঘোষণা করলে জনৈক লোভী ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি ধরা পড়েন ও নিহত হন।
নাটকের নবাব সিরাজ এমনই দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বাধীনতা। তিনি এ দেশের মানুষের মুক্তি চেয়েছেন। এজন্যে তাকেও নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়। এখানেই রয়েছে উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের সূর্যসেন এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলা একই পরিণতির শিকার হয়েছেন।” মন্তব্যটি যথার্থ।
দেশপ্রেমিকের কোনদিন মৃত্যু হয় না। সমস্ত দেশ ও জাতি তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। উদ্দীপকের মাস্টার দা সূর্যসেন ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা এমনই দেশপ্রেমিক পুরুষ। তাঁরা দেশের জন্যে নিজের জীবনের সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়েছেন। এজন্যে আজও তাঁরা জাতির চেতনাতে বেঁচে রয়েছেন।
উদ্দীপকে দেখা যায় মাস্টার দা সূর্যসেন এদেশের দখলদার ব্রিটিশদের শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এদেশের জনগণকে জাগিয়ে তুলতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। তাঁরই নির্দেশে বিদ্রোহীরা চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল হামলা চালায়। এতে ব্রিটিশরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই একই ধরনের পরিণতিকে বরণ করতে দেখি নাটকের নবাব সিরাজকে।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজও চেয়েছেন দেশ ও দেশের জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীন রাখতে। তাই তিনি ইংরেজদের মোটেও সহ্য করতে পারতেন না। তিনি প্রাণপণে দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে তিনি করুণভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তাই বলা যায় প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও সূর্যসেন ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা একই পরিণতির শিকার হয়েছেন। তাই বলা যায় মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ২৮\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
উড : শালা বড় হারামজাদা, দাফনের টাকা নিবি তুই… শালা বড় বজ্জাত (জুতার গুতা প্রহার) শ্যামচাঁদকা সাৎ মূলাকাৎ হোনেসে, হারামজাদ্কি সব ছোড় যাগা।
রাই : (সক্রোধে) ও দাদা, তুই চুপ দে, ঝা ন্যাকে দিতে চাচ্ছে ন্যাকে দে। ক্ষিদের চোটে নাড়ি ছিঁড়ে পড়লো, সারা দিনডে গ্যাল; নাতিও পালাম না খাতিও পালাম না।
আমিন : কই শালা ফৌজদারি করলি নে। (কানমলন)
রাই : (হাঁপাইতে) মরলাম, মাগো! মাগো!
উড : ব্লডি নিগার, মারো বাঞ্চৎকো। (শ্যামাচাঁদাঘাত)
ক. ‘আমার বৌকে ওরা খুন করে ফেলেছে হুজুর’ একথাটি কে বলেছে? ১
খ. ‘আমাকে শেষ করে দিয়েছে হুজুর- ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকের রাই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখা কর। ৩
ঘ. “উদ্দীপকের উড ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনা এক সূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটি বিচার কর।
২৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কথাটি বলেছে উৎপীড়িত ব্যক্তি।
খ. ‘আমাকে শেষ করে দিয়েছে হুজুর’ কথাটি বলেছে ইংরেজ দ্বারা অত্যাচারিত জনৈক উৎপীড়িত ব্যক্তি।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে লবণ চাষের ইজারা দেন। ইজারা পেয়ে ইংরেজরা জোর করে সাধারণ মানুষের উপর জুলুম শুরু করে। কোম্পানির লোকেরা কম দামে চাষীদের কাছ থেকে লবণ কিনে আবার তাদের কাছেই বেশি দামে বিক্রয় করতো।
তাদের নির্ধারিত দামে কোনো চাষী লবণ বিক্রয় করতে অস্বীকার করলে তাদের উপর চরম নির্যাতন চালাতো। যেমন চালিয়েছে উৎপীড়িত ব্যক্তির উপর। ইংরেজরা তার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে হত্যা করেছে। এজন্যে উক্ত কথার মাধ্যমে নবাব সিরাজের কাছে তার মনবেদনা জানিয়েছে।
গ. উদ্দীপকের রাই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তির প্রতিনিধি।
ইংরেজরা ভারতবর্ষে আসে বাণিজ্য করতে। ক্রমে তারা এদেশের ধন-সম্পদের লোভে উপনিবেশ গড়তে স্বপ্ন দেখে। এর জন্যে তারা প্রথমে আঘাত করে এদেশের জনগণের তথা শাসন ব্যবস্থার উপর। উদ্দীপকের এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায় রাই ইংরেজদের দ্বারা চরমভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। সে দাদনের টাকা নিয়ে নীল চাষ কেন করেনি এজন্যে ইংরেজরা তাকে কুঠিতে ধরে এনে অত্যাচার করে। না খাইয়ে রাখে। চাবুক মারে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। রাইয়ের মতো অত্যাচারিত হতে দেখি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে জনৈক উৎপীড়িত ব্যক্তিকে।
সে ইংরেজদের কাছে তাদের নির্ধারিত দামে লবণ বিক্রয় না করার জন্যে তারা তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তার স্ত্রীকে পাশবিক অত্যাচার করে হত্যা করে। এমনিভাবে সাধারণ প্রজারা ইংরেজদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়। রাই এবং নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তির এখানেই সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. “উদ্দীপকের উড এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনা এক সূত্রে গাঁথা।” মন্তব্যটি যথার্থ।
ইংরেজ বেনিয়ারা এদেশে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এলেও ক্রমে তারা এদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। ক্রমে ক্রমে এদেশের সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সচেষ্ট হয়।
উদ্দীপকের ‘উড’ ইংরেজদেরই একজন প্রতিনিধি। তাকে দেখি নিজেদের ব্যবসায় সফলতা অর্জনের জন্যে এদেশের জনগণের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে। এখানে দেখি তারা এদেশের চাষীদের দাদন দিয়ে জোর করে নীল চাষ করতে বাধ্য করে। এ ক্ষেত্রে তাদের সকলেরই চেতনা একই ধারায় প্রবাহিত। যার প্রতিফলন লক্ষ করি নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনাগত বৈশিষ্ট্যে।
নাটকের প্রথম থেকেই লক্ষ করি ইংরেজদের নির্লজ্জ অসামঞ্জস্য আচরণ। তারা নিজেদের স্বার্থে এদেশের সাধারণ মানুষের উপর অমানুষিক অত্যাচার করে। দাদন দিয়ে লবণ চাষের মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের উপর তাদের অত্যাচার শুরু করে।
ক্রমে তারা এদেশের শাসন ব্যবস্থার দিকে হাত বাড়ায়। ছলে বলে কৌশলে তারা এদেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এখানেই উদ্দীপকের উড এবং নাটকের কোম্পানির প্রতিনিধিদের চেতনা এক সূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ২৯\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রবীন্দ্রনাথের মতে সমগ্র ইংরেজ জাতটা এই ভারতবর্ষকে লইয়া সমৃদ্ধি সম্পন্ন হইয়া উঠিয়াছে। ……. কিন্তু প্রতিটি ইংরেজ জানে তারা এদেশের অধিবাসী নয়। বহু দূর থেকে তারা শাসনের নাম করে শোষণ করার জন্য এখানে এসেছে। এখানে তাদের বিচারক কেউ নেই। ……… ইংরেজরা জানতো ভারতবর্ষ তাদের ভাড়ার ঘর। ……. ভারতরাষ্ট্রীয় ও ইংরেজদের মাঝে ছিল এই হৃদয়ের ব্যবধান। তাই শোষক ও শোষিতের সম্পর্কই তাদের শেষ পরিচয় রয়ে গেল।
ক. নবাব সিরাজ কাকে আলিনগরের দেওয়ান নিযুক্ত করলেন?
খ. ‘শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্যই হাসিল হবে।’ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথের মতটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের স্বার্থান্বেষী মনোভাবকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
২৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নবাব সিরাজ মানিকচাঁদকে আলিনগরের দেওয়ান নিযুক্ত করলেন।
খ. ‘শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্যই হাসিল হবে’ কথাটি দ্বারা সিরাজের শত্র“দের স্বার্থান্বেষী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয় যে কীভাবে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়। উমিচাঁদ, জগৎশেঠ, মানিকচাঁদ, রায়দুর্লভ, রাজবলভ, মিরজাফর, ঘসেটি বেগম সবাই চান সিরাজের পতন।
তারা মনে করে সিরাজের জায়গায় শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলেরই স্বার্থসিদ্ধি হবে। তাদের সকলের ইচ্ছা পূরণ হবে। এজন্যে বলা হয়েছে শওকত জঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্য হাসিল হবে।
গ. উদ্দীপকটির সাথে নবাব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের স্বার্থান্বেষী চেতনা ও শোষণনীতির বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।
ইংরেজদের প্রগতিশীলতার অগ্রদূত হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিতি রয়েছে। দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য সকল ক্ষেত্রে তাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করা হলেও তাদের স্বার্থান্বেষী স্বভাবের কথাও কারো অজানা নয়। স্বার্থসিদ্ধির জন্যে তারা যে কোনো কাজ করতে পারে।
উদ্দীপকে ইংরেজদের আচরণের নির্লজ্জ দিকটি আলোচনা করা হয়েছে। হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা ভারতবর্ষে ব্যবসা করতে এসে এদেশের মানুষের উপর শোষণনীতি গ্রহণ করে। শাসন ক্ষমতা হস্তগত করার পরে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
এদেশের মানুষকে তারা কখনোই ভালোবাসেনি। এদের তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে ব্যবহার করেছে। উদ্দীপকের ইংরেজদের এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় নাটকের ইংরেজেদের চরিত্রে। তারা বাণিজ্যের নামে এদেশে প্রবেশ করলেও ক্রমে তারা এদেশের সাধারণ মানুষের তথা শাসন ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপ করে এবং কৌশলে তা হস্তগত করে। তারপর শুরু করে শোষণনীতি। উভয় ক্ষেত্রে এখানেই সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের রবীন্দ্রনাথের মতটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজদের স্বার্থান্বেষী মনোভাবকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।
ইংরেজদের আচরণ উপর থেকে স্বাভাবিক, মানবিক মনে হলেও উপমহাদেশে তাদের উপস্থিতি এবং এদেশের মানুষের সাথে তাদের ব্যবহারই বলে তারা কতটা স্বার্থপর। সারা বিশ্বে তাদের উপনিবেশ প্রসারিত করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে তাদের জুড়ি নেই।
উদ্দীপকের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ইংরেজদের সম্পর্কে এমনই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে ইংরেজ জাতি ভারতবর্ষে এসে সমৃদ্ধি সম্পন্ন হয়ে উঠেছে। তারা এদেশে শাসনের নামে শোষণ করে স্বার্থ হাসিল করেছে। তারা ভারতবর্ষকে মনে করতো ভাড়ার ঘর। তারা কখনোই এদেশের মানুষকে আপন ভাবেনি। ইংরেজদের এই স্বভাব পরিলক্ষিত হয় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে।
নাটকে ইংরেজদের এই ন্যাক্কারজনক চেহারা পরিলক্ষিত হয়। প্রথম থেকেই তাদের এই নির্লজ্জ চেহারাটা আমরা দেখতে পাই। তারা এদেশে বাণিজ্য করার জন্যে এসে এদেশের নবাবের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এদেশের স্বার্থান্বেষী মানুষদের সাথে হাত মিলিয়ে নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করে এদেশের শাসন ব্যবস্থায় নিজেদের কর্তৃত্ব এবং শোষণনীতি প্রতিষ্ঠা করে। যা উদ্দীপকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বক্তব্যে বলে গেছেন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ৩০\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আবু : আমি তো বলেছি, ফসল উঠলেই খাজনা ওসুল করে দিব। তবু আমার বলদ জোড়া ধরে নিয়ে এল। আজ আমার এত
হেনেস্তা। আমিতো একটা মানুষ। আমার মাথার ওপরে আলাহ, পায়ের নিচে মাটি।
জমিদার : চোপরও হারামজাদা। আবতক হামারা সামনে মুখ খুলকে বাৎ করতা হায়। জামাল, হারামজাদসে পঞ্চাশ রূপেয়া জরিমানা আদায় কর।
আবু : পঞ্চাশ টাকা আমার নাই হুজুর।
জমিদার : নাই?
আবু : আলার কসম।
জমিদার : জানিস আমি কে?
আবু : আপনি গরিবের বাপ মা হুজুর।
ক. কলকাতার নাম আলিনগর কে রাখেন?
খ. ‘এ তো ডাকাতি’- কে, কেন একথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকের জমিদারের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটির যৌক্তিকতা নিরূপণ কর।
৩০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কলকাতার নাম আলিনগর রাখেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
খ. উৎপীড়িত ব্যক্তির প্রতি ইংরেজদের অত্যাচারের কারণ শুনে মিরজাফর উক্ত উক্তিটি করেছেন।
নবাবের দরবারে ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে আসে উৎপীড়িত এক ব্যক্তি। সে একজন লবণ প্রস্তুতকারক। তার কাছে জানা যায় লবণের ইজারাদার কুঠিয়াল ইংরেজ স্থানীয় লোকদের তৈরি যাবতীয় লবণ তিন/চার আনা মণ দরে পাইকারী হিসেবে কিনে নেয়। তারপর এখানে বসেই এখানকার লোকদের কাছে সেই লবণ দুই টাকা লাড়াই টাকা মণ দরে বিক্রি করে। ঘটনাটি শুনে মিরজাফর উক্ত কথাটি বলেন।
গ. উদ্দীপকের জমিদারের সাথে ‘সিরাজউদ্দৗলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
জমিদারি আমলে প্রায় জমিদারই ছিলেন প্রজাপীড়ক। তারা সাধারণ মানুষের উপর নানাভাবে শোষণ, অত্যাচার করতো। সারাক্ষণ তারা সুরা, নারী নিয়ে মেতে থাকলেও সাধারণ মানুষের দুর্দশার অন্ত ছিল না। নানারকম খাজনা কর পরিশোধ করতে তারা হিমশিম খেত। তার পরেও তারা অত্যাচার থেকে রেহাই পেতো না।
উদ্দীপকের জমিদার এই ধরনের চরিত্রের একজন মানুষ। তাকে দেখা যায় সাধারণ দরিদ্র প্রজার উপর নিপীড়ন করতে। খাজনা দিতে না পারায় তার উপর অত্যাচার করতে। তার জমি চাষের বলদ ধরে এনে তাকে সর্বস্বান্ত করেও তাকে নিস্তার দেয়নি, বৌ-ধরে এনে অত্যাচার করেছে। জমিদারের এই চরিত্রের বিপরীত চরিত্র নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
তিনি ছিলেন একজন প্রজাদরদী শাসক। প্রজাদের তিনি খুব ভালোবাসতেন। প্রজাদের সুখ দুঃখের খোঁজ নিতেন। ইংরেজরা সাধারণ প্রজার উপর অত্যাচার চালালে তাদের শাস্তি দিতেও দেখা যায়। জমিদারের সাথে এখানে সিরাজের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি যথার্থ নয়।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ একটি ঐতিহাসিক নাটক। নাট্যকার সচেতনভাবে ইতিহাসকে আশ্রয় করে নাটকের প্লট নির্মাণ করেছেন। এখানে তিনি বহুমুখী ভাবের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। বাংলা ও বাঙালির জীবনাচরণ এতে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে শুধু তার একটি ভাবের প্রকাশ ঘটেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায় প্রজাপীড়ক জমিদার এবং অত্যাচারিত এক প্রজার জীবনাচরণের চিত্র। জমিদার খাজনা দিতে না পারায় দরিদ্র প্রজাটির চাষের সম্বল তার বলদ ধরে আনে। তারপরেও ক্ষান্ত হয় না সে। প্রজাটিকে ধরে এনে খাজনা আদায় করার জন্যে অত্যাচার করে। উদ্দীপকের এ ভাবটি শুধু নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রজাদরদী স্বভাবকে আমাদের মনে করিয়ে দেয় মাত্র অন্য কোনো ভাবের ইঙ্গিত এখানে নেই।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বহুমুখী বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে। সেখানে রয়েছে বেনিয়া ইংরেজদের এদেশে আগমন, এদেশে তাদের বাণিজ্যের প্রসারতা, সাধারণ মানুষের প্রতি অত্যাচার, নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ, নবাবের পারিষদদের চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতা, এর ফলে নবাবের পরাজয় ও নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ, ইংরেজদের স্বার্থ উদ্ধার প্রভৃতি বিষয় যার রেশ উদ্দীপকের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
প্রশ্ন\ ৩১\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জমিদার বসন্ত রঞ্জন চৌধুরী তার পুত্র শরৎচন্দ্রকে একজন মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিলেন। লেখাপড়া শিখিয়ে একজন খাঁটি মানুষ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু শরৎ সে পথে হাঁটে নি। যৌবনে কুসঙ্গে পড়ে একেবারে বখে যায়। সারাক্ষণ জমিদারের বাগানবাড়ি পড়ে থাকে বাইজীদের সাথে। জলসা ঘরে বাইজরি নাচ গানের মধ্যে সারাক্ষণ ডুবে থাকে আর কীভাবে পিতাকে সরিয়ে জমিদারির সমস্ত ক্ষমতা হস্তগত করবে সে চক্রান্তের জাল বুনতে থাকে।
ক. মিরন কার ছেলে?
খ. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজকে হিংসা করতো?
গ. উদ্দীপকের শরৎচন্দ্র চরিত্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রের ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদৌলা’ নাটকের কতটুকু ভাব ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে? তোমার পক্ষে যুক্তি দাও।
৩১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মিরন মিরজাফরের ছেলে।
খ. সিরাজের জন্যে তার এতদিনের লালিত স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার কারণে ঘসেটি বেগম সিরাজকে হিংসা করেন।
ঘসেটি বেগম সিরাজের বড় খালা। আলীবর্দী খাঁ’র জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি স্বপ্ন দেখতেন নবাবের মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠপুত্র শওকত জঙ্গ বাংলার নবাব হবেন। কিন্তু সমস্ত ক্ষমতা থাকবে তার হাতে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় নবাব আলীবর্দী খাঁ’র সিদ্ধান্তে। তিনি দেখলেন তার চোখের সামনে দিয়েই ছোটবোন আমেনার পুত্র সিরাজ বাংলার মসনদে বসলেন। তারপর থেকে তিনি নবাব সিরাজকে হিংসা করতে শুরু করেন। কারণ সিরাজই তার সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।
গ. উদ্দীপকের শরৎচন্দ্রের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের পুত্র মিরনের চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
তৎকালীন জমিদার, বা রাজা বাদশাদের একটা অভ্যাস ছিল বাইজীদের নাচ দেখা, অনৈতিক জীবনযাপন করা। এসব বিষয় একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু কেউ কেউ এই ঘৃণ্য জীবনযাত্রা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে, কেউ বা এটাকে জীবনের একমাত্র সম্বল বলে ধরে নিয়ে ধ্বংস হয়েছে।
উদ্দীপকের শরৎচন্দ্র চরিত্রে দেখা যায় দুশ্চরিত্র ব্যভিচারী জীবন কাটাতে। পিতা তাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলেও সে কুসঙ্গে পড়ে বখে যায়। সারাক্ষণ বাইজীদের নিয়ে মগ্ন থাকে এবং কীভাবে পিতার জমিদারির সর্বময় ক্ষমতা হস্তগত করা যাবে সে চক্রান্ত করে।
এ ধরনের একটা চরিত্রের সন্ধান পাই ‘সিরাজউদৌলা’ নাটকে মিরন চরিত্রের মাঝে। নির্লজ্জ বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের ছেলে সে। সে দুশ্চরিত্র, ব্যভিচারী, নিষ্ঠুর এবং চক্রান্তকারী।
তারই ষড়যন্ত্রে এবং ব্যবস্থাপনায় মোহাম্মদি বেগ নবাব সিরাজকে হত্যা করে। সেও সারাক্ষণ সুরা, নারী দিয়ে বাইজীর ঘরে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকতো। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. আমার মতে, উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আংশিক ভাব ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।
বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ একটি ঐতিহাসিক নাটক। বাংলার রাজনীতির পট পরিবর্তন ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণ, চক্রান্তজালে আটকা পড়া, ইংরেজদের সাথে সংঘর্ষ এবং পরাজিত হওয়ার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
উদ্দীপকটিতে প্রকাশিত হয়েছে একজন জমিদার পুত্রের ব্যভিচারী জীবনের ঘৃণ্য চিত্র। সে হলো শরৎচন্দ্র। সে সারাক্ষণ জলসা ঘরে বাইজীদের নিয়ে সময় কাটায় এবং পিতার সম্পত্তি বা জমিদারী কীভাবে হস্তগত করা যায় সে সম্পর্কে চক্রান্ত করতে থাকে।
উদ্দীপকের এ ভাবটিতে নাটকের মাত্র একাংশের প্রতিফলন ঘটেছে। সেটা হলো মিরজাফর পুত্র মিরনের ব্যভিচারী ও চক্রান্তকারী ক্ষমতালোভী মনোভাবের প্রকাশের মাধ্যমে।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের অভিযোজিত অনেকগুলো ভাবের মধ্যে এটি মাত্র একটি দিক। নাটকে আলোচিত হয়েছে নবাব সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইংরেজদের সাথে দ্ব›দ্ব।
তাদের সাথে সংঘর্ষ, পরিজনদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত, সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতা, বাংলার সাধারণ মানুষের উপর ইংরেজদের অত্যাচার, নবাবের চারিদিকের চক্রান্তের ফলে পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয়, মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ, নবাবের নির্মম মৃত্যু প্রভৃতি চিত্র যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। একটিমাত্র দিক ছাড়া কোনোটিই উদ্দীপকে উঠে আসেনি।
পরীক্ষা-প্রস্তুতি যাচাই অংশ
এ অংশে সৃজনশীল প্রশ্নব্যাংক ও গল্পভিত্তিক বহুনির্বাচনি মডেল টেস্ট সংযোজিত হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীরা এ অংশটির উত্তরপত্র তৈরি করে শ্রেণিশিক্ষককে দেখাতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি ও দক্ষতা যাচাই হয়ে যাবে।
প্রশ্ন ১. উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আতা খাঁ। গুপ্তচর তার সবকিছু দেখাতে বাধ্য নয়। তোমাদের যাতে প্রয়োজন শুধু তাই দেখতে পাবে। নাও, এই দেখো, ভালো করে দেখো। সেনাপতির নিজ হাতের স্বাক্ষরযুক্ত ছাড়পত্র।
রহিমা। মশালে আলোতে উলটে পালটে পাঞ্জাখানা দেখে ঠিক আছে। আপনাকে খামাখা তকলিফ দিলাম। আপনি যেদিকে খুশি যেতে পারেন।
ক. রাইসুল জুহালা কার ছদ্ম নাম?
খ. ‘তবু ভয় নেই সিরাজউদ্দৌলা বেঁচে আছে’ বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকের আতা খাঁ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ দিককে উপস্থাপন করেনি। মন্তব্যটি যাচাই কর।
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
ক. রাইসুল জুহালা নারায়ণ সিংহের ছদ্মনাম।
খ নারায়ণ সিংহের এই কথাটির মাধ্যমে নবাব সিরাজের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসার ভাবটি প্রকাশিত হয়েছে।
পলাশি যুদ্ধে নবাব সিরাজের পরাজয়ের পর তার বিশ্বস্ত গুপ্তচর রাইসুল জুহালা ওরফে নারায়ণ সিংহ মিরজাফরদের হাতে বন্দী হন। নবাব সিরাজের গুপ্তচর হওয়ার অপরাধে ক্লাইভ তাঁকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়।
নারায়ণ সিংহ নবাব সিরাজকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থান করেও তাদের নবাব সিরাজ যে এখনও বেঁচে তাতে তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেন এবং সবাইকে নির্ভরবাণী শুনিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
টিপস
গ. প্রথমে উদ্দীপকের আতা খাঁর চরিত্র বিশ্লেষণ করবে। তারপর ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের গুপ্তচর রাইসুল জুহালা ওরফে নারায়ণ সিংহের চরিত্র বিশ্লেষণ করে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য দেখাবে।
ঘ. উদ্দীপকটি পড়ে এর আলোচিত বিষয়টি অনুধাবন করে প্রশ্নের উত্তরে উপস্থাপন করবে। তারপর ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বহুমুখী দিক তুলে ধরে প্রশ্নের মন্তব্য অনুযায়ী নিজের মতামত উপস্থাপন করবে।
প্রশ্ন ২. উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
তৎকালীন বেশিরভাগ জমিদার ছিল অত্যাচারী, প্রজাপীড়ক। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তিনি ছিলেন প্রজাঅন্তঃপ্রাণ। তাঁর রাজ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জনগণ বসবাস করতেন। কৃষ্ণচন্দ্র কোমল হৃদয়ের রাজা হলেও দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন।
ক. সিরাজউদ্দৌলার মায়ের নাম কী?
খ. উমিচাঁদ কেন পাগল হলেন?
গ. উদ্দীপকের কৃষ্ণচন্দ্র চরিত্রে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে কোন চরিত্রের প্রতিফলন দেখা যায়?
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মন্তব্যটি যাচাই কর।
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
ক. সিরাজউদ্দৌলার মায়ের নাম আমিনা বেগম।
খ ইংরেজদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে টাকার শোকে উমিচাঁদ পাগল হলেন।
ইংরেজরা এদেশের বিশ্বাসঘাতকদের সাথে চুক্তি করে যে, সিরাজ-উ-দ্দৌলার পতন ঘটাতে পারলে প্রত্যেককে বিশাল অঙ্কের টাকা দেয়া হবে। এজন্য তারা একটি নকল দলিলও তৈরি করে এবং এতে প্রত্যেকে সই করে।
সেখানে উলেখ থাকে সিরাজের পতন হলে উমিচাঁদকে বিশ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। সিরাজের পতনের পর উমিচাঁদ শর্তানুযায়ী টাকা চাইতে গেলে ইংরেজরা সেটা অস্বীকার করে। তখন টাকার শোকে উমিচাঁদ উন্মাদ হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে পাগল হয়ে যায়।
টিপস
গ. প্রথমে উদ্দীপকের কৃষ্ণচন্দ্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধর। তারপর ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের দেশপ্রেম ও প্রজাদের প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি উপস্থাপন করে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. প্রথমে উদ্দীপকের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপস্থাপন করবে। তারপর নাটকের বিভিন্ন দিকের আলোচনা করে দেখাবে উদ্দীপকের ভাবটি তার মধ্যে অন্যতম। তারপর মন্তব্য দাঁড় করাবে।
প্রশ্ন ৩. উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নিঃসন্তান জামাল সাহেব তাহের নামের একটি ছেলেকে পোষ্যপুত্র হিসেবে লালন-পালন করেন। লেখাপড়া শিখিয়ে তাকে দশজনের একজন করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাহের ছিল লোভী এবং হীন চরিত্রের ছেলে। সে জামাল সাহেবের বিশাল সম্পত্তি হস্তগত করার চেষ্টায় সারাক্ষণ মশগুল থাকে। একদিন সে জামাল সাহেবকে সন্ত্রাসী দ্বারা অপহরণ করে জোর করে তার সম্পত্তি লিখে নিয়ে এই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়।
ক. সিরাজকে হত্যা করতে মোহাম্মদি বেগ কত টাকা নেয়?
খ. মিরন কেন জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায় প্রবেশ করেন?
গ. উদ্দীপকের তাহের সিরাজউদ্দৌলা নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের জামাল সাহেব এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ একই কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। মন্তব্যাটি যাচাই কর।
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
ক. সিরাজকে হত্যা করতে মোহাম্মদিবেগ দশ হাজার টাকা নেয়।
খ সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুদণ্ডাদেশ শোনাতে মিরন জাফরাগঞ্জ কয়েদখানায় প্রবেশ করেন।
পলাশি যুদ্ধে নবাব সিরাজের পরাজয়ের পর পাটনায় যাওয়ার পথে তাঁকে বন্দী করা হয় এবং জাফরাগঞ্জ কয়েদখানায় রাখা হয়। এদিকে ইংরেজ কর্নেল ক্লাইভ চান না সিরাজ বেঁচে থাকুক। তার প্ররোচনায় মিরজাফর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দণ্ডাদেশ শোনাতে তার পুত্র মিরন জাফরাগঞ্জ কয়েদখানায় প্রবেশ করেন এবং নবাব সিরাজকে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ শোনান।
টিপস
গ. প্রথমে উদ্দীপকের তাহের চরিত্র বিশ্লেষণ কর। তারপর নাটকের মোহাম্মদি বেগ চরিত্র উপস্থাপন করে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. প্রথমে তুমি উদ্দীপকটি পড়ে জামাল সাহেবের চরিত্র এবং পরিণতি উপলব্ধি কর। দেখবে নাটকের সিরাজ চরিত্রের পরিণতি একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। এবার উভয় পরিণতির কারণ উপস্থাপন করে মন্তব্য দাও।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।