থার্টি ফার্স্ট নাইট হারাম নাকি ইসলাম কি বলে।। এইচ বি ফিরোজ।। ইংরেজি ক্যালেন্ডার হিসেবে একটি বর্ষ শেষ হবে এবং আরেকটি বর্ষ শুরু হবে। আগামীকাল তারিখ লিখতে বছরের ঘরে লেখা হবে ২০২৪। চলতি তারিখ লিখতে গিয়ে আর কখনোই লেখা হবে না ২০২৩। সুতরাং বিদায় বন্ধু ‘দুই হাজার তেইশ’!
এই বন্ধুটি আমাদের জীবনে একবারই মাত্র এসেছিল। আর এই যে বিদায় নিল আর কখনোই সে ফিরে আসবে না। ক্যালেন্ডারে সংখ্যার এই যে আসা-যাওয়া প্রকৃতপক্ষে এ তো আমাদেরই জীবনের কাব্য। যে এসেছে, শুধু একবারের জন্যই এসেছে। আর যে বিদায় নিয়েছে, চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছে!
ক্যালেন্ডার থেকে একটি সংখ্যার বিদায় আসলে কি সংখ্যার বিদায়? না, সংখ্যার বিদায় নয়, আমাদের জীবনকালের একটি অংশের বিদায়। আর এ কারণেই যে কোনো ক্যালেন্ডারে বর্ষশুরু ও বর্ষশেষ উৎসবের ব্যাপার নয়, চিন্তা-ভাবনা ও হিসাব-নিকাশের ব্যাপার।
কীসের হিসাব-নিকাশ? বিনিয়োগ ও লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ। জীবনকাল মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ পুঁজি। আর তার বিনিয়োগক্ষেত্র হচ্ছে তার নিজের কর্ম। জীবনকাল ভালো কাজে ব্যয় হলে তা ফেরৎ আসবে মুনাফাসহ।
আর মন্দ কাজে ব্যয় হলে তা বয়ে আনবে পরিতাপ ও ক্ষতিগ্রস্ততা। যে কণা পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখতে পাবে। আর যে কণা পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সে-ও তা দেখতে পাবে। -সূরা যিলযাল (৯৯) : ৭-৮
দিন-রাতের গমনাগমন আসলে সতর্ক করছে খরচ হয়ে যাওয়া জীবনকাল সম্পর্কে। প্রতিটি সন্ধ্যা এই বার্তা দিচ্ছে যে, তোমার জীবন থেকে একটি দিবস ফুরিয়ে গেল। প্রতিটি ভোর এই বার্তা দিচ্ছে যে, আরো একটি রাত জীবন থেকে বিদায় নিল।
থার্টি ফার্স্ট নাইট হারাম নাকি ইসলাম কি বলে
- আরো পড়ুন: কঠিন ৭০ টি বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
- আরো পড়ুন: সানা বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ আরবী
- আরো পড়ুন: তারাবির নামাজ কত রাকাত, নামাজের নিয়ম ও দোয়া
কাজেই ব্যয় হয়ে যাওয়া দিবস ও রজনী যদি ভালো কাজে ব্যয় হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহর শোকরগোযারি, যদি মন্দ কাজে ব্যয় হয়ে থাকে তাহলে ভবিষ্যতের জন্য সংশোধনের সংকল্প- এই তো উপায় মুক্তির ও উন্নতির।
আর এতে কালক্ষেপণ নয়। কারণ এরপর আর প্রত্যাবর্তনের সুযোগ না-ও হতে পারে। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন-সন্ধ্যায় উপনীত হলে প্রভাতের অপেক্ষা করো না। আর প্রভাতে করো না সন্ধ্যার অপেক্ষা।… কারণ, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার তো জানা নেই কী হবে তোমার বিশেষণ আগামীকাল (জীবিত না মৃত!) -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩৩
কুরআন মাজীদে দিনরাতের গমনাগমন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবসকে পরস্পরের অনুগামীরূপে; তার জন্য যে উপদেশ গ্রহণ করে ও কৃতজ্ঞ হতে চায়। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৬২
থার্টি ফার্স্ট নাইট হারাম নাকি ইসলাম কি বলে
রাত-দিনের আসা-যাওয়া একটি ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ব্যাপার, যা সময়ের চলমানতা সম্পর্কে সচকিত করে। চিন্তাশীল মানুষ উপলব্ধি করেন যে, দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছরের রূপে বস্তুত তার নিজের আয়ুই নিঃশেষ হয়ে চলেছে। কাজেই আর অবহেলা নয়, এবার ব্রতী হতে হবে সৎকর্মে এবং ত্যাগ করতে হবে সকল বালখিল্যতা। পরিণত বয়েসীর অপরিণত কর্ম সম্পর্কে এক জ্ঞানীর আক্ষেপ-
তোমার প্রিয় জীবনকালের চল্লিশটি বছর কেটে গেছে। কিন্তু তোমার স্বভাব-বাল্য এখনো কাটল না!
বাল্য ও অপরিপক্কতা কী? কর্মের পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও উদাসিনতাই নয় কি? আর তাই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
বুদ্ধিমান তো সে, যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কর্ম করে। আর অক্ষম সে, যে প্রবৃত্তির অনুসারী হয় আর আল্লাহর প্রতি (অলীক) প্রত্যাশা পোষণ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৯
প্রতিটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত আমাদের জানাচ্ছে জীবনের ক্ষয় সম্পর্কে। কিন্তু আমাদের সমাজে একশ্রেণির মানুষের জীবনে বর্ষশেষ ক্ষয়ের বার্তা নিয়ে আসে না, আসে অবক্ষয়ের অনুষঙ্গ হয়ে। এই অসঙ্গতি ও অস্বাভাবিকতা এখন সঙ্গত ও স্বাভাবিক। বহুল চর্চা ও ব্যাপক রেওয়াজের কারণে এগুলো অস্বাভাবিক বলেই মনে হয় না।
বস্তুত বক্রতার যখন বিস্তার ঘটে তখন বাঁকাকে আর বাঁকা বলে মনে হয় না। কিন্তু মনে না হলেই কি বক্রতা দূর হয়? আমাদের চারপাশে এখন কত বক্রতার ছড়াছড়ি! চিন্তার বক্রতা, কর্মের বক্রতা, রীতি-নীতির বক্রতা! সেই বক্রতা সঠিকভাবে উপলব্ধি করলে প্রতিদিনের নামাযে-আমাদের পরিচালিত করুন সরল পথে)- এই প্রার্থনার যথার্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সকল বক্রতা ও অস্বাভাবিকতা থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক চিন্তা, যথার্থ কর্ম ও ভারসাম্যপূর্ণ স্বভাবের অধিকারী হওয়া একজন মানুষের প্রতিমুহূর্তের প্রয়োজন। এই যথার্থতা ও ভারসাম্য তথা সীরাতে মুসতাকীমের দিশাই রয়েছে কুরআন মাজীদে এবং সুন্নাহ ও সীরাতে। তাই কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী খুব সহজেই মুক্ত থাকে চিন্তা ও কর্মের বক্রতা থেকে।
থার্টিফাস্ট নাইটের অনাচার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এই মহা নিআমত এবং সচেতন করে আদর্শহীন মানুষের অবলম্বনহীনতা সম্পর্কে। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে এ সম্পর্কে জানিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,’ যে ব্যক্তি ইসলাম(ইসলামী রীতিনীতি) ছাড়া অন্য কোন ধর্ম অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না।
থার্টি ফার্স্ট নাইট হারাম নাকি হালাল
পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৮৫). রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,’ যে ব্যক্তি অন্য জাতের আচার-আচরনে, সভ্যতা সংস্কৃতিতে সামাঞ্জস্য করবে সে ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ). তাহলে আপনিই বলুন থার্টি ফার্স্ট নাইট হারাম নাকি হালাল হবে।
আমরা মহান আল্লাহর শোকরগোযারি করি আর ‘থার্টিফাস্ট’গ্রস্ত বন্ধুদের চিন্তা ও কর্মের স্বাভাবিকতার জন্যও তাঁরই সকাশে প্রার্থনা করি। লেখক; মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।