HSC | তাহারেই পড়ে মনে | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ৬-১০ | PDF : বাংলা ১ম পত্রের তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি হতে যেকোনো ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের তাহারেই পড়ে মনেকবিতাটি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটির প্রকাশকাল কত?
খ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটির ছন্দবৈশিষ্ট্য লেখ।
গ. অনুচ্ছেদে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোনো ভাবটিকে অবলম্বন করা হয়েছে?
ঘ. “তাহারেই পড়ে মনে ভুলিতে পারি না কোনো মতে”- পঙ্ক্তিটির আলোকে উপরের চিত্রকল্পের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
খ. বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান মহিলা কবি বেগম সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত।
এ কবিতায় ৮ ও ১০ মাত্রার পর্ব লক্ষ্য করা যায়। তবে স্তবক বিন্যাসে কিছুটা বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। অক্ষরবৃত্ত ছন্দরীতি অনুযায়ী কবিতায় সুললিত ছন্দ ও মার্ধুযতার ছাপ রয়েছে।
গ. কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকাশিত ভালোবাসার অনুভবের সাথে মিল আছে উদ্দীপকের চিত্রকল্পের।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয় হারানোর বেদনার যে সুর ধ্বনিত হয়েছে, ভালোবাসার যে প্রগাঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে তার সাথে সম্পর্ক আছে উদ্দীপকের। উদ্দীপকে তাজমহলের ছবির মধ্য দিয়ে সম্রাট শাহজাহানের প্রয়াত প্রিয়তমার প্রতি ভালোবাসা এবং স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়ও আমরা কবির তার প্রয়াত স্বামীর প্রতি গভীর প্রেম এবং স্মৃতিকাতরতা লক্ষ করি। প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে, বসন্ত বরণ করে নিতে চারিদিকে সাজসাজ রব কিন্তু কবি যোগ দিতে পারছেন না সেই উৎসবে। তার হৃদয়ের সমগ্রটা জুড়ে প্রয়াত স্বামীর জন্য শোক।
তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্য সাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণœতা। কবির মন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাকে আচ্ছন্ন করে আছে সেই বিষাদমর রিক্ততার সুর। এ রিক্ততা যেন তাজমহলের স্রষ্টা সম্রাট শাহজাহানের হৃদয়ের রিক্ততা। উভয়ই একীভূত হয়ে আছে প্রিয়জন হারানোর বেদনায়।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার উলিখিত উক্তিতে প্রিয়জন হারানোর যে বেদনা ও শূন্যতাবোধ ফুটে উঠেছে তা-ই এ কবিতার মূলসুর।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি সুফিয়া কামাল রচিত এ কবিতায় কবির ভালোবাসার অনুভূতির মাঝে প্রকৃতি ও জীবনের আর সব আয়োজন যেন অর্থহীন হয়ে গেছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ব্যক্তি কবির প্রিয়জনের প্রতি স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততা আর বিষণœতা। কবির হৃদয় দুঃখে ভারাক্রান্ত তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
তাই বসন্ত তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার মনে কোনো আবেদন জাগাতে পারছে না। কবি তার প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে কিছুতেই মুছে দিতে পারছেন না হৃদয় থেকে। বার বার তাকে তাড়িত করছে সেই স্মৃতি। কবি তাই উদাস।
কবিভক্ত তাই আজ বসন্তের আনন্দ উৎসবে যোগ দিতে বললেও মনোব্যথা প্রকৃতির প্রতিক‚লে। হৃদয়ের দুঃখভারাকে তাই প্রকাশ করেছেন এই বাণীর মধ্য দিয়ে “তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”
ঠিক একই বিষয় প্রকাশিত হয়েছে তাজমহল গড়ার পেছনেও। সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা পত্মীর বিয়োগ ব্যথায় কাতর হয়ে তার স্মৃতিকে হৃদয়ে অমলিন করে রাখার জন্য গড়ে তুলেছিলেন তাজমহল। যমুনার তীরে গড়ে ওঠা এ সমাধিসৌধ তাজমহলের অস্তিত্ব প্রতিনিয়ত তার স্ত্রীর কথা স্মরণ করিয়ে দিতো সম্রাটকে।
এক মুহূর্তের জন্যও তিনি বিস্মৃত হতে পারতেন না প্রিয়তমা স্ত্রীকে। তাজমহল প্রতীকের মধ্যে শাহজাহানের এ মনোভাব আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মনোভাবের মধ্যে এ স্মৃতিকাতর দিকটি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কেতকীর ক্ঞ্জুবনে গুঞ্জরিল মধুপের গান।
…………………
হেমন্ত ফুটাতে চাহি হাসি শীর্ণ কেতকীর মুখে
চমকি ফিরিয়া এল বিস্ময়ে সে ব্যথাভরা বুকে,
এত দুঃখভার
কোন দানে মুছাবে সে এ ব্যথিতা মূর্ছিতা কেয়ার।
গন্ধে হলো ভারাক্রান্ত সে নিশীতে কেয়া কুন্তবনে,
রূপগন্ধ বিকশিত। ব্যথা তার রহিল গোপন।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কী কী ফুলের উলেখ আছে?
খ. ‘অর্ঘ্য বিরচন’ কথাটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’:অংশটুকুর সাথে ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’ অংশটুকুর তুলনা কর।
ঘ. “অনুচ্ছেদটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তু পরিস্ফুটিত হয়েছে”- মন্তব্যটির পক্ষে/বিপক্ষে তোমার অবস্থান তুলে ধর।
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বাতাবি লেবুর ফুল, আমের মুকুল, মাধবী কুঁড়ির উলেখ রয়েছে, এর সবগুলোই বসন্তের ফুল।
খ. “অর্ঘ্য” অর্থ হচ্ছে অঞ্জলি বা উপহার আর “বিরচন” শব্দটির অর্থ হলো রচনা করা।
প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেয়। কেউ স্মরণ করুক বা না করুক প্রকৃতি ঠিকই আপন রীতিতে বরণ করে নেয় বসন্তকে। এ বিষয়টিই প্রকাশিত হয়েছে অর্ঘ্য বিরচন কথাটির মধ্য দিয়ে।
গ. কবি বেগম সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’ কথাটির মধ্যে বসন্তের যে সৌন্দর্য সমৃদ্ধির আভাস রয়েছে তার সাথে ভাবগত মিল আছে অনুচ্ছেদের ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’:অংশটুকুর।
অনুচ্ছেদটিতে প্রকৃতির আনন্দমুখর সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। হেমন্ত প্রকৃতির এক শস্যনির্ভর বর্ণিল আবর্তন। ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’ কথাটি কর্তৃক প্রকৃতির আনন্দ ঘন পরিবেশের বার্তা অভিব্যক্ত। হেমন্তের আগমনে এক শস্য সমৃদ্ধ সময়ের আগমনবার্তা ধ্বনিত হয়। ঘরে ঘরে আনন্দ উপলক্ষ নিয়ে আসে হেমন্ত।
হেমন্তের সমৃদ্ধ আভাসের মতো ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়ও “ফাগুন যে এসেছে ধরায়” কথাটির কর্তৃক প্রকৃতির উৎসবমুখর ক্ষণকে নির্দেশ করা হয়েছে। চারদিকে ফাগুনের আগমনে সাজসাজ রব। প্রকৃতি যেন নানা অর্ঘ্যে অভিনন্দন জানাচ্ছে বসন্তকে। ফাগুনের পরশে যেন প্রকৃতি হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধির প্রতিচ্ছবি।
সুতরাং, বলা যায় অনুচ্ছেদের ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’ আর কবিতার ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’ একই সুরে গাঁথা।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির প্রিয় হারানোর বেদনার সাথে অনুচ্ছেদের উলিখিত কবিতাংশের বেদনার সুরটি যেন একই ভাব থেকে উৎসারিত।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের ব্যক্তিগত দুঃখ যেন সমস্ত পাঠকের প্রিয় হারানোর বেদনায় রূপান্তরিত হয়েছে। প্রকৃতির উৎসবের মাঝে নিজের একান্ত দুঃখ চর্চা করলেও কবি যেন সমস্ত মানবসত্তাকেই ছুঁয়ে গেছে। উপরের অনুচ্ছেদেও তাই। প্রিয় হারানোর বেদনা প্রকাশে অনুচ্ছেদ আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি যেন একই ভাবাপন্ন।
অনুচ্ছেদে লক্ষণীয় কেতকী অর্থাৎ কেয়ার দুঃখ ভারাক্রান্ত মন। প্রকৃতির আনন্দমুখর পরিবেশে কেতকী বিষণœ, তার হৃদয় শোকাচ্ছন্ন। কোনো গোপন ব্যথা লুকানো তার মনের গহীনে। তাই সে আনন্দময় প্রকৃতিতে সাবলীলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। থেকে থেকে বেজে উঠছে তার ব্যথার বীণা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় লক্ষ করা যায়, ব্যক্তি কবি শোকে মুহ্যমান। প্রকৃতির কোনো আয়োজনই তাঁকে আলোড়িত করতে পারছে না। কবিভক্তের শত অনুরোধেও তিনি কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করতে পারছেন না।
বাইরের প্রকৃতি যতই বর্ণিল হোক না কেন প্রকৃতির বিষাদ স্মৃতি তাকে ঘিরে রয়েছে। এক্ষেত্রেও যেন “ব্যথা তার রহিল গোপন।” সুতরাং বলা যায়, অনুচ্ছেদের সাথে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তুগত গভীর মিল রয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অনন্যার বয়স পাঁচ বছর। সে ধনীর ঘরের একমাত্র আদুরে কন্যা। পাশের বাড়ির অর্নব তার খেলার সাথী। কিন্তু অনন্যার বাবার তাতে ঘোর আপত্তি। অর্নবের মতো দরিদ্রশ্রেণির বাচ্চাদের সাথে মেলামেশা করবে কেন তার মেয়ে? অনন্যার বাবা তাই তাকে অর্নবদের বাসায় যেতে, নিষেধ করে দেন। অনন্যার তাই মন খারাপ। বাবা মন ভালো করার জন্য অনেক দামি দামি খেলনা এনে দেন, উৎসবের আয়োজন করেন কিন্তু অনন্যার মন খারাপ ভালো হলো না।
ক. “বসন্তরে আনিতে বরিয়া” এখানে ‘বরিয়া’ শব্দটির চলিত রূপ কী।
খ. “হে কবি, নীরব কেন?” এখানে কবি ‘নীরব কেন’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. অনুচ্ছেদের অনন্যার সাথে কবিমনের তুলনা কর।
ঘ. অনুচ্ছেদটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তু প্রতিফলিত মন্তব্যটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত আলোচনা কর।
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘বরিয়া’ শব্দটির চলিত রূপ হলো ‘বরণ করে’।
খ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতিচারণমূলক একটি কবিতা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শুরুতেই কবিভক্ত কবিকে প্রশ্ন করছেন, কবি নীরব কেন, “ফাগুন যে এসেছে ধরায়।” কবির নীরবতা এখানে উদাসীনতাকে ইঙ্গিত করছে। কবি কেন কাব্য এবং গান রচনায় সক্রিয় হচ্ছেন না সেটাই প্রশ্ন রাখা হয়েছে।
গ. কবি সুফিয়া কামাল বিরচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি তাঁর স্মৃতিচারণমূলক একটি শোকগাঁথা।
প্রিয়জন হারানো শোকার্ত মনে জাগতিক কোনো কিছুই প্রশান্তি এনে দিতে পারে না। এ কবিতায় কবিমনের উপলব্ধিতে তাই প্রকাশিত হয়েছে।
অনুচ্ছেদের পাঁচ বছরের অনন্যা নামের মেয়েটির সখ্যতা গড়ে উঠেছিল পাশের বাড়ি অর্নবের সাথে। কিন্তু সামাজিক অবস্থানে সমান না হওয়ায় অনন্যার বাবা তাকে অর্নবের সাথে মিশতে নিষেধ করে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই অনন্যার মন দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
বাবা তাকে অনেক খেলনাদি এনে দিলেও তার মন পড়ে রয় অতীতের স্মৃতিতে। ঠিক ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবিমনের মতো। কবিমনও বসন্তের আগমনে জেগে উঠতে পারে নি। যোগ দিতে পারে নি উৎসব আনন্দে। তার সমগ্র মন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন। এখানে অনন্যা এবং কবিমনের অবস্থা একই সুরে গাঁথা।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি কবি সুফিয়া কামালের ব্যক্তিজীবনের দুঃখ বেদনার একটি রূপালেখ্য।
কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের আগমন লগ্নে দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে অতীত হয়ে যাওয়া শীতের স্মৃতিচারণ করেছেন। মানুষের মন সাধারণত প্রগতিশীল। অর্থাৎ সামনের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু কবির বেলায় তার ব্যতিক্রম ঘটে। অনুভূতিশীল কবিহৃদয় অতীতের শোকস্মৃতি ভুলতে পারে না কিছুতেই।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যকর অভিব্যক্তি পেয়েছে। সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানবমনের অফুরন্ত উৎস। বসন্ত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যে মনে আনন্দ শিহরণ জাগাবে তথা তিনি তাকে ছন্দে ফুলে ফুটিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত।
কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা-ভারাতুর থাকে তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্তে¡ও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারে না। কবিমন সত্যিই প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন।
তাই তাকে কোনো আনন্দই স্পর্শ করতে পারছে না ঠিক যেন অনুচ্ছেদের অনন্যার ছোট্ট হৃদয়ের মতো। তার পিতা তার জন্য আনন্দ উৎসবের আয়োজন করলেও সে উৎফুলিত নয়, তার ছোট্ট হৃদয় জুড়ে রয়েছে খেলার সঙ্গী হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন।
সুতরাং অনুচ্ছেদটিতে কবিতার ভাববস্তুর পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে বলা যায়। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় বিষয়বস্তুর বেদনাঘন উপস্থাপন রীতির মাধ্যমে গীতিময়তা প্রধান্য পেয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বউটার খবর? ওর কথা বলো না আর। রাহাত মুখ বাঁকাল। অন্য আর এক জায়গায় বিয়ে করেছে। সে কি! এর মধ্যে বিয়ে করে ফেলল মেয়েটা? তপু ওকে কত ভালোবাসতো। নাজিম বিড়বিড় করে বলে উঠল চাপা স্বরে। সানু বলল, “বিয়ে করবে না তো কি সারা জীবন বিধবা হয়ে থাকবে না কি মেয়েটা।”
ক. ‘সমীর’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. “পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে” কথাটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘বউ’ -এর সাথে ব্যক্তিকবির সাদৃশ্যবৈসাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির কার কথা মনে পড়েছে? এবং কেন মনে পড়েছে? এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের ছায়াপাত ঘটেছে কি? আলোচনা কর।
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘সমীর’ শব্দটির অর্থ হলো বাতাস।
খ. ‘পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে’ কথাটি কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে।
কবি উলিখিত চরণের মাধ্যমে শীতের বিদায়কে ভাবমণ্ডিত করে উপস্থাপন করেছেন। শীতে প্রকৃতি রিক্ততার রূপ নেয়। গাছের পাতা ঝরে পড়ে। গাছ হয় পুষ্পশূন্য। বসন্তের বিপরীতে শীতের এ রূপকে কবি উপস্থাপন করেছেন। কবি বুঝিয়েছেন, সর্বাধিক সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর পড়ে পত্রপুষ্পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে শীত। ঠিক যেভাবে চলে গেছে কবির প্রাণপ্রিয় স্বামী নীরবে, নিভৃতে।
গ. অনুচ্ছেদ তপুর বউ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
তপু মারা যাওয়ার কিছুকাল পর বউটা অন্যত্র বিয়ে করে। এটা যেন তপুর বন্ধুরা সহজে মেনে নিতে পারছে না।
তপুর বন্ধুদের কাছে তপুর বউকে পাষাণ হৃদয়ধারী বলে অনুভূত হয়। তাদের প্রশ্ন ভালোবাসার মানুষটির মৃত্যুর কিছু দিনের মধ্যে কিভাবে সে অন্যের সাথে ঘর বাঁধতে পারে। তপুর ভালোবাসার স্মৃতিকে তাকে কখনোই আলোকিত করে না।
কিন্তু ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় দৃশ্যত হয় বিপরীত অবস্থা। কবি মন এখানে কিছুতেই তার প্রয়াত স্বামীকে ভুলতে পারছেন না। প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে এসেছে তার জীবনে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে নেমে এসেছে এক দুঃসহ বিষণœতা। প্রকৃতিতে বসন্ত আসলেও তাই কবি তাতে যোগ দিতে পারছেন না।
অনুচ্ছেদের তপুর বউ এবং কবিতার কবিমনের মধ্যে এর ফলে বৈপরীত্য অবস্থা দৃশ্যমান।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি প্রিয়জন হারানোর বেদনায় দুঃখ ভারাক্রান্ত। প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি তাকে বার বার তাড়িত করছে।
এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখকর ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্য সাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণœতা।
কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। পুরো কবিতাকে আচ্ছন্ন করে আছে সেই বিষাদকর রিক্ততার সুর। তাই বসন্তের আগমনেও কবির উন্মাদনা। বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে আছে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা। কবিআত্মা তাই শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে।
পরিশেষে কবির ভাষায়, “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে ভুলিতে পারি না কোন মতে।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘তোমার কাছে এসেছিলাম পদ্য শুনবো বলে। ‘কবিতা’ বললে মনে হয় ওটা আর্যদের শব্দ। আমার জন্য অনার্য পদ্যই বলো তুমি। বসন্ত তো তোমার অপেক্ষায়:তোমার দরজায় আসীন। তুমি তাকে ব্যর্থ করে দিওনা। স্বাগত জানাও তাকে। তাতে তাকে বন্দনা করা হবে। আমার পদ্য শোনাতে হবে।’
কবি নিরুত্তর বেশ কিছুক্ষণ। তারপর কাঁপা গলায় বললেন- বৃথা হবে কেন, ফুলতো ফুটেছে। ঋতুরাজ বসন্ত ফুলের আরতি পেয়ে ধন্য। মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধের উপস্থিতি। বসন্ত বৃথা হয়নি। আমি বরণ করলাম না বলে ফাগুন তো তার গতি হারায়নি।
ক. ঋতুচক্রে শেষ ঋতুর নাম কী?
খ. মধুর বসন্ত কবিকে আকর্ষণ করতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপক অবলম্বনে বসন্তের বর্ণনা দাও।
ঘ. কবিভক্ত ও কবির মনস্তত্ত¦ বিশ্লেষণ কর।
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ঋতুচক্রে শেষ ঋতুর নাম বসন্ত।
খ. বসন্ত সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে কবিকে। বসন্ত প্রকৃতিকে রঙে রঙিন করে দিয়ে অতঃপর প্রকৃতিকে দিয়ে আক্রমণ করায় জনচিত্তকে-কবিচিত্তকে। কবিচিত্ত যদি হয় সুন্দরের অধিষ্ঠানের জন্য পোষক ক্ষেত্র তাহলে প্রকৃতি তাকে ছাড়ে না। কবিকে দিয়ে লিখিয়ে নেন বন্দনাগীতি।
এখানে কবি হৃদয়ের সাথে বসন্তের প্রণয় সাধিত হয়। কিন্তু কবিচিত্ত যদি হয় বেদনায় বিমূঢ় তাহলে সুন্দরকে আনন্দকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারেন না। হৃদয়ের চার চেয়ালে থাকে বেদনার আবরণ। বেদনার সে আবরণ সরিয়ে আনন্দ সেখানে অনুরণন জাগাতে পারেনা।
কবি সুফিয়া কামালের প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের মৃত্যুর পর বেদনায় ভেঙে পড়েন তিনি। মনের চারদিকে ছিল দীর্ঘশ্বাসের কুণ্ডলী। সেসব ছাপিয়ে ফুল ফাগুনের মরসুম সেখানে পৌঁছতে পারেনি। মূলত বেদনার আপেক্ষিকতা বেশি হওয়ায় বসন্ত কবিকে তার দিকে টানতে পারেনি।
গ. প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মেনেই বসন্ত এলো। দখিনা সমীরের সাথে গলাগলি করে, আমের মুকুলের গন্ধ আর বাতাবি লেবুর গন্ধের সাথে হাত ধরাধরি করে ফাগুন এলো। প্রতি বছর একই মাহাত্ম্যে আর্দ্র হয়ে ফাগুন আসে। আনন্দ সঞ্চারে নৈর্ব্যক্তিক পক্ষপাত থাকে বলে তার অবদান ও আবেদন কোন কিছুর সাপেক্ষ নয়।
কোন সুন্দর যদি ফাগুনকে বরণ করতে অসমর্থ হয় তাহলে তাকে কিছু বলতে পারে না বসন্ত। শুধু বসন্তোৎসবের গীতি ঝঙ্কার শুনিয়ে দিতে পারে। তাই আপাতদৃষ্টিতে, কারো অংশগ্রহণ না থাকায় বসন্ত উৎসব অসফল হল বা বসন্ত ব্যর্থ হল এরকম মনে হলেও, বসন্ত আসলে ব্যর্থ হয় না। বসন্তের যা কাজ তা সে যথাযথভাবে পালন করে।
ডগায় ডগায় ফুল ফুটায় বসন্ত। এবং বসন্ত ধন্য হয় সে ফুলের আরতি পেয়ে। আমের জামের মুকুল উঁকি দেয়:। বাতাবি লেবুর ফুল ফোটে। গন্ধে গন্ধে বসন্ত হয় ব্যাকুল। মাধবী ফুলের কুঁড়ির বুকে গন্ধের লুকোচুরি। এ সবই বসন্তের উস্কানিতেই হয়। বসন্ত ব্যক্তিক নয়:নৈর্ব্যক্তিক আনন্দের গীতিকার।
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | PDF Download
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | বহু নির্বাচনি প্রশ্নসমুহ | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ১-৫ | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ৬-১০ | PDF
ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপকে নাটকীয় সংলাপের আদলে সুন্দরপিয়াসী দুটি সত্তার অন্তর্লোক উন্মোচিত হয়েছে। একটি সত্তা হল কবিভক্ত। অন্যটি হলো একজন কবি।
কবিভক্ত বসন্তকে সফল করার জন্য নিবেদিত। মধুর বসন্ত এসেছে। সুন্দরের লীলা চলবে এবং সে আনন্দ যজ্ঞে তার নিমন্ত্রণ।
বসন্ত এসেছে আনন্দের বার্তা নিয়ে। এমন একটা মহতী উদ্যোগ যে নিয়ে এসেছে, তাকে কি বরণ করে নিতে হবে না। তাই সে ছুটেছে তার কাছে যার বসন্ত বরণের মত অর্ঘ্য আছে। কবির কাছে তাই তার মিনতি স্বাগত জানাও তাকে। কবিভক্ত মনের দিক দিয়ে পরিশ্র“ত।
কারণ সে সুন্দরের পূজারী। সুন্দর বসন্তকে অন্য এক সুন্দর বরণ করে নিক। সুন্দর কেন ফিরে যাবে বন্ধ দুয়ার থেকে? সুন্দরকে সম্মান জানানোর জন্য ব্যাকুল সে। সুন্দরের স্পর্শে, সুন্দরের প্রচেষ্টা আর একটি সুন্দর সম্ভব হয়ে উঠুক এটি তার ঐকান্তিক প্রার্থনা।
কবিও সুন্দরের প্রত্যাশী। তার মনও বসন্তের জন্য প্রস্তুত। সুন্দরের সাথে তার বিরোধ নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত কষ্টের কারণে উচ্ছ¡ল বসন্তের সাথে তার সহাবস্থান সম্ভব হচ্ছে না। সুন্দরের অধিষ্ঠান হয় মনের অন্দর মহলে। কিন্তু কবির মনটা সুন্দরকে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয়।
তাই বসন্তকে হৃদয়ে অনুভব করে সুন্দরের সৃজনে তাঁর অক্ষমতা আছে। আবার আনন্দ যজ্ঞে অংশ নিলেন না বলে বসন্ত ব্যর্থ হলো এমনটা মনে করেন না। তিনি বরং যখন দেখলেন ফুল ফুটেছে; প্রকৃতির প্রাঙ্গন জুড়ে প্রসূনের প্রসন্ন পীড়ন, তখন মনের দিক দিয়ে তৃপ্ত হলেন তিনি।
কবি ভক্তের মনস্তত্তে¦র সার সংক্ষেপ কবিভক্ত আবেগী।
সুন্দরের প্রতি অনুরক্ত
সুন্দরের ম্লানিমায় বিচলিত
কবির মনস্তত্তে¦র সার সংক্ষেপ নিয়ন্ত্রিত আবেগ কবির।
সুন্দরের প্রতি বিদ্বিষ্ট নন।
মনোগত সীমার ঊর্ধ্বে উঠতে চাননি।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।