HSC | তাহারেই পড়ে মনে | জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর | PDF : বাংলা ১ম পত্রের তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি হতে যেকোনো ধরনের জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের তাহারেই পড়ে মনেকবিতাটি হতে গুরুপূর্ণ জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
রিভিশন অংশ
আলোচ্য অংশে জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাড়ির কাজ, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকণিকা, জ্ঞানমূলক.এবং অনুধাবনমূলক.আরও কিছু প্রশ্নোত্তর উলেখ.করা হয়েছে। এ অংশটি অনুশীলনের মাধ্যমে পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও জবারংরড়হ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
বাড়ির কাজ
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ঔদাসীন্য ও একাকিত্বের স্বরূপ তুলে ধর।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির যে শোক-বেদনার পরিচয় ফুটে উঠেছে তা বিশ্লেষণ কর।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি চিত্তের যে দ্ব›দ্বময় সত্তা রূপায়িত হয়েছে তা বিশ্লেষণ কর।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির প্রতি কবিভক্তের নিবেদন প্রকাশ পেয়েছে কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকণিকা
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি আবর্তিত হয়েছে কবি ও কবিভক্তের সংলাপের মধ্য দিয়ে। কবিভক্ত কবির কাছে বসন্ত বন্দনা শুনতে চেয়েছেন, জানতে চেয়েছেন কবি কেন উন্মনা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বাতাবি নেবুর ফুল ও আমের মুকুল ফোটার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে মাধবী কুঁড়ির গন্ধের কথা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্ত ঋতুকে ঋতুরাগ.বলা হয়েছে। কবিতায় মাঘ.ও ফাল্গুন মাসের উলেখ.রয়েছে। মাঘ.মাসকে সন্ন্যাসী বলা হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক.মোহম্মদী’ পত্রিকায়।
টেক্সট বুক অ্যানালাইসিস
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কবি সুফিয়া কামাল কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর\ কবি সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
২. সুফিয়া কামালের জন্মের সময় কাদেরকে গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হতো?
উত্তর\ সুফিয়া কামালের জন্মের সময় বাঙালি মুসলমান নারীদেরকে গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হতো।
৩. সুফিয়া কামালের জন্মের সময় পরিবারে কোন ভাষার প্রবেশ একরকম বন্ধ ছিল?
উত্তর\ সুফিয়া কামালের জন্মের সময় পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম বন্ধ ছিল।
৪. সুফিয়া কামালের স্বামীর নাম কী ছিল?
উত্তর\ সুফিয়া কামালের স্বামীর নাম ছিল সৈয়দ নেহাল হোসেন।
৫. পারিবারিক নানা উত্থান-পতনের মধ্যে সুফিয়া কামাল কেমন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন?
উত্তর\ পারিবারিক নানা উত্থান-পতনের মধ্যে সুফিয়া কামাল স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিলেন।
৬. সাহিত্য সাধনায় সুফিয়া কামালের প্রধান উৎসাহদাতা কে ছিলেন?
উত্তর\ সাহিত্য সাধনায় সুফিয়া কামালের প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন।
৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার কততম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর\ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার ষষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন কীসে আচ্ছন্ন হয়ে যায়?
উত্তর\ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন রিক্ততার হাহাকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
৯. কবিকে বসন্ত-বন্দনা রচনা করতে বলেছে কে?
উত্তর\ কবি-ভক্তরা কবিকে বসন্ত-বন্দনা রচনা করতে বলেছে।
১০. ‘অলখ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর\ ‘অলখ’ শব্দের অর্থÑ অলক্ষ বা দৃষ্টির অগোচর।
১১. ‘উন্মনা’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর\ ‘উন্মনা’ শব্দের অর্থÑ অন্যমনস্ক।
১২. যবদ্বীপের রাজধানীর নাম কী?
উত্তর\ যবদ্বীপের রাজধানীর নাম বাটাভিয়া।
১৩. কোন ঋতুর দিকে চেয়ে কবি রিক্ত ও বিষণ হয়ে আছেন?
উত্তর\ শীত ঋতুর দিকে চেয়ে কবি রিক্ত ও বিষণœ হয়ে আছেন।
১৪. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কোন ফুলের উলেখ আছে?
উত্তর\ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় মাধবী ফুলের উলেখ আছে।
১৫. ‘আঁখি’ শব্দের বুৎপত্তি নির্দেশ কর।
উত্তর\ আঁখি < অক্ষি।
১৬. ‘সাজ’ শব্দের বুৎপত্তি নির্দেশ কর।
উত্তর\ সাজ < সজ্জা।
১৭. সুফিয়া কামাল কত খ্রিস্টাব্দে জš§গ্রহণ করেন?
উত্তর : সুফিয়া কামাল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে জš§গ্রহণ করেন।
১৮. শীতের রিক্ততার সাথে কবি কিসের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন?
উত্তর : শীতের রিক্ততার সাথে কবি নিজ জীবনের অনন্ত শূন্যতার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন।
১৯. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
২০. সুফিয়া কামাল কোথায় জš§গ্রহণ করেন?
উত্তর : সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের বরিশাল জেলার শায়েস্তাবাদে জš§গ্রহণ করেন।
২১. ‘বরিয়া’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : বরিয়া শব্দের অর্থ বরণ করে।
২২. কবি সুফিয়া কামালের প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন কবে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে।
২৩. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার গঠনরীতির দিক থেকে প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় গঠনরীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সংলাপ নির্ভরতা।
২৪. ‘সমীর’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : সমীর শব্দের অর্থ বাতাস।
২৫. কবি সুফিয়া কামালের পিতার নাম কি?
উত্তর : কবি সুফিয়া কামালের পিতার নাম সৈয়দ আবদুল বারী।
২৬. সুফিয়া কামালের পেশাগত জীবনের শুরু হয়েছিল কীভাবে?
উত্তর : শিক্ষকতা দিয়ে সুফিয়া কামালের পেশাগত জীবনের শুরু হয়েছিল।
২৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি কোন গান বাজার কথা জানতে চেয়েছেন?
উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি আগমনী গান বাজার কথা জানতে চেয়েছেন।
২৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার কততম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার ষষ্ঠতম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
২৯. কবি সুফিয়া কামালের কাব্য সাধনার প্রেরণাপুরুষ কে ছিলেন?
উত্তর : কবি সুফিয়া কামালের কাব্য সাধনার প্রেরণাপুরুষ ছিলেন কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন।
৩০. তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন কিসে আচ্ছন্ন হয়ে যায়?
উত্তর : ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন রিক্ততার হাহাকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
৩১. কবি সুফিয়া কামালের যখন জন্ম হয় তখন বাঙালি রমণীরা কীভাবে দিন কাটাত?
উত্তর : কবি সুফিয়া কামালের যখন জন্ম হয় তখন বাঙালি রমণীরা গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটাত।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির যে বিষাদঘন একাকিত্বের বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর\ কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটিতে মানবমনের বেদনামথিত শোকের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে।
প্রিয়জন হারিয়ে একাকী জীবনযাপন করতে থাকা কবি এতটাই উদাসীন হয়ে পড়েন যে, প্রকৃতিতে শীত চলে গিয়ে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবি টের পান না।
কবি-ভক্তরা তাঁকে বসন্ত বন্দনামূলক গান রচনা করতে অনুরোধ করলেও সাড়া দেন না কবি। কারণ কবির মনে যে বিষাদময় স্মৃতি বার বার ফিরে আসে, তা কিছুতেই ভুলতে পারেন না কবি। কবির এই বিষাদময়তা ও একাকিত্বের প্রভাব তাঁর কাব্য সৃষ্টিতেও পড়েছে।
২. “অলখের পাথার বাহিয়া”- চিত্রকল্পটির মর্মার্থ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর\ সুদূরতম ইঙ্গিত প্রদান করার লক্ষ্যে কবি “অলখের পাথার বাহিয়া” চিত্রকল্পের অবতারণা করেছেন।
“অলখের পাথার বাহিয়া”Ñবাক্যটির আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় দৃষ্টিসীমার বাইরে সমুদ্রপথে ছুটে চলা কোনো কিছু। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় স্মৃতিভারাক্রান্ত কবির মনে বসন্তের আগমনের দৃশ্যটির দূরত্ব বুঝাতে এই চিত্রকল্পটি ব্যবহৃত হয়েছে। কবির হৃদয়ে যেন বসন্তের আগমনের মতোই সুদূর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে কোনো এক সুখকর স্মৃতি দুয়ারে এসে হানা দেয়। এখানে প্রিয়-মানুষটির চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টির প্রতিও ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
৩. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর\ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসীর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
শীত ঋতুতে চারদিকে নিঃস্বতা ও রিক্ততার যে ছবি দেখা যায় তাতে প্রকৃতিকে সন্ন্যাসীর মতো অলংকারহীন মনে হয়। কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ত ও জরাজীর্ণতাকে বোঝাতে শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসী বলে উলেখ করেছেন। শীত ঋতুতে চারদিকে পাতাবিহীন গাছের যে প্রাকৃতিক নান্দনিকতা তৈরি হয়, তা দৃশ্যত সন্ন্যাসীর মতোই মনে হয়।
৪. প্রিয়জন হারানোর বেদনা কীভাবে মানুষের মনে ছায়াপাত করে?Ñ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাবলম্বনে তা বর্ণনা করো।
উত্তর\ প্রিয়জন হারানোর বিষাদঘন বেদনা মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দেয়।
কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় তাঁর ব্যক্তিজীবনের এক মর্মান্তিক বেদনার স্মৃতিকেই তুলে ধরেছেন। প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষকে ক্রমান্বয়ে বিষণœ ও উদাস করে তোলে। কবি ও কবি-ভক্তের সংলাপে কবির নিরাসক্ত উদাস ভাবটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবি শীতের রিক্ততা ভুলতে পারেন নি। কারণ তাঁর মনোজগতে প্রিয়জন হারানোর ব্যথা গভীর হয়ে বার বার উঁকি দিচ্ছে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর বেদনা তাই কবিকে করে তুলেছে জীবনবিমুখ, নিরাসক্ত এক বিষণœ মানুষ।
৫. “হে কবি নীরব কেন?” Ñকবি কোন কারণে নীরব?
উত্তর\ প্রিয়জন হারানোর বিষাদময় স্মৃতি ভুলতে না পেরে নিঃস্ব কবিকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়।
প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবির মনোজগৎ জুড়ে বিরাজ করছে শীতের রিক্ততা ও বিষণœতার ছবি। কবির মন দুঃখ-ভারাক্রান্ত। শীতের করুণ বিদায় কবির মনে যে বেদনার ছায়াপাত রেখে গেছে, তা কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
এখানে প্রকৃতি ও মানব মনের মিলের দিকটি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। কবির নীরবতার কারণটি যেন প্রকৃতির চিরাচরিত পরস্থিতির মাঝেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। মূলত প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কাতর কবি স্বাভাবিকভাবেই নিঃস্ব, রিক্ত এবং নীরব হয়ে পড়েন।
৬. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি নাটকীয় গুণসম্পন্ন। সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কবিতার মধ্যে যখন নাটকীয় গুণ থাকে তখন তাকে নাটকীয় গুণসম্পন্ন কবিতা বলে। নাটকীয় কবিতার মধ্যে একাধিক চরিত্র বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাব ফুটে ওঠে। বেগম সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় নাটকীয়তার ভাব সুস্পষ্ট।
গঠনরীতির দিক থেকে এটি একটি সংলাপধর্মী কবিতা। কবিতাটি নির্মিত হয়েছে কবি ও কবিভক্তের মধ্যে নাটকীয় সংলাপের ভিত্তিতে। এভাবে কবিতার সবকটি চরণ দ্বৈত ছন্দোবদ্ধ কথোপকথনের রীতিতে রচিত হয়েছে।
কবিতায় এ ধরনের নাটকীয়তা খুব কমই লক্ষ করা যায়। কবি সুফিয়া কামাল এ নাটকীয়তা সৃষ্টির মাধ্যমে কবিতাটিকে ভিন্নমাত্রায় ভ‚ষিত করেছেন। কবিতায় নাটকীয় সংলাপের ভাব থাকায় একে নাটকীয় গুণসম্পন্ন কবিতা বলা যায়।
৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের আগমনে কবি উদাসীন কেন?
উত্তর : বসন্তের নয়নলোভা সৌন্দর্য থাকা সত্তে¡ও কবিমনে আজ তীব্র উদাসীনতা, আচরণে অনাকাক্সিক্ষত বিষণœতা। কেননা বসন্তের আগমনের কিছুকাল পূর্বেই যাবতীয় রিক্ততা, শূন্যতা আর নিঃস্বতা নিয়ে শীত ঋতু হারিয়ে গেছে পুষ্পশূন্য দিগন্তে। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা হয়েছে পত্রহীন, পুষ্পীন, পাণ্ডুর এবং শ্রীহীন। এর আগমন ও বিদায়ে প্রকৃতি থেকেছে নীরব। শীতের এই উদার্য কবির কাছে শীতকে মহিমান্বিত করেছে। তাই কবি শীতকে ভুলতে পারেন নি।
শীতের রিক্ত ও নিঃস্বভাব কবিচিত্তে যে বেদনার সঞ্চার করেছে তার আবেগেই তিনি নির্মোহ এবং নিশ্চল। একটি চরম দুঃখবোধ বা কিছু হারানোর বিলাপ কবির মানসে পূর্ণ আসন দখল করেছে। তাই কখন চুপিসারে তাঁর দ্বারে বসন্তের আগমন ঘটেছে তা তিনি লক্ষ্য করেন নি। তিনি উদাসীনভাবে বসন্তকে উপেক্ষা করেছেন। ফলে বসন্তের আগমনকে তিনি স্বাগত জানাতে পারেন নি।
৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও কবির মনের অবস্থার মধ্যে কোনটি প্রধান হয়ে উঠেছে বলে তুমি মনে কর? কেন?
উত্তর : এ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ও তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি লাভ করেছে। কবিতার বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলে আপাতদৃষ্টিতে তাকে প্রকৃতি বিষয়ক কবিতা বলেই মনে হয়। নিঃস্বর্গ অর্থাৎ প্রকৃতি বিষয়ক কবিতার সমস্ত বৈশিষ্ট্য এতে রয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতির মধুর রূপরাশির বর্ণনা করাই কবির একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বসন্তের আবেদন তার হৃদয় দুয়ারে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কবির মন দুঃখভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার অর্থহীন মনে কোন আবেদন জানাতে পারছে না।
প্রসঙ্গত উলেখ্য তার প্রথম স্বামী ও কাব্য সাধনার প্রেরণা পুরুষের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষণœতা জাগে তারই সুস্পৃষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে।
ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে ফুলে ফুলে সাজানো, সৌরভমুখর মাদকতাময় প্রকৃতির প্রতিশ্র“তি নিয়ে। কিন্তু বসন্তের নয়নলোভা সৌন্দর্য কবিকে মুগ্ধ করতে পারে নি। কেননা কবি শীতের রিক্ততার জন্য বেদনাহত। শীতের প্রভাব তার হৃদয় থেকে মুছে যায় নি। তিনি উদাসীনভাবে বসন্তকে উপেক্ষা করছেন।
৯. “তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।” Ñ পঙ্ক্তি দুটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : কবি অকাল বৈধব্যের শিকার। তাঁর হৃদয় দুঃখে-শোকে মুহ্যমান। কবির সে শোকদগ্ধ মনে ঋতুরাজ বসন্তের অপরূপ সমারোহে আগমন কোনো আনন্দের বাণী নিয়ে আসে নি।
কবি এতই আনমনা যে, তিনি খেয়ালই করেন নি প্রকৃতিতে কখন ঋতুরাজের আগমন ঘটেছে। কবির চেতনা আজ বিমূঢ়। ফুলের সুবাস ও পাখির কলরব তাঁর চিত্তে পুলক শিহরণ জাগায় নি। তাঁর বিরহকাতর ব্যথাদীর্ণ হৃদয়ের অনন্ত হাহাকারের জন্যই কবি এসবের সন্ধান রাখেন না।
কবি এত ফুলের সৌরভ, দখিনা সমীকরণ দেখে এতটুকুও আবেগকম্পিত হন নি। অন্তরে তাঁর কোনো শিহরণ জাগে নি। তিনি মৌন, তিনি উদাসীন হয়ে আছে। কবির অনুরাগী জনৈক ভক্তের বসন্তকে বরণ করে নেয়ার মিনতি জানানোর পর কবি জানতে চাইলেন দিগন্তের পথ বেয়ে সৌন্দর্যের পসরা বোঝাই তরীখানি এসেছে কি না। বসন্তের কোনো আগমনী বাণী তিনি শুনতে পান নি। কেননা কবির মন শীতের ঋতুতেই আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
১০. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা অবলম্বনে সংক্ষেপে বসন্ত ঋতুর বর্ণনা দাও।
উত্তর : সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানব মনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। সেই অফুরন্ত আনন্দের উৎস হিসেবে পৃথিবীতে বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে। প্রকৃতিতে ঘটে গেছে এক অনিন্দ-হিন্দোল। দখিন দুয়ার খুলে গেছে। বাগানে ফুটেছে বাতাবি লেবুর ফুল।
ফুটেছে আমের মুকুল। দখিনা সমীর গন্ধে গন্ধে অধীর-আকুল হয়েছে। নতুন ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়েছে তার পূর্ণ রূপ মাধুর্য দিয়ে। মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ ছড়িয়েছে। দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে। সঙ্গে এনেছে পৃথিবীর সমস্ত সৌরভ।
আমের মুকুলে মৌমাছির গুঞ্জরণ, মাধবী ফুলের কুঁড়ির নাচন আর বনে বনে ফুলের আসরে নানা পাখ-পাখালীর কণ্ঠে বসন্তের এ আগমন যেন মানবমনকে আনন্দে শিহরণে উদ্বেলিত করে তুলেছে। বনভ‚মি নতুন পত্রপলবে বিচিত্র ফুলের বাহারে হয়ে উঠেছে রঞ্জিত, নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে পুলকিত স্বচ্ছলতার এক প্রগাঢ় নিকুঞ্জ।
১১. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ততার মধ্যে কবির অতীত জীবনের যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় তা লেখ।
উত্তর : শীত ঋতু প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা পত্রহীন, পুষ্পহীন পাণ্ডুর এবং শ্রীহীন হয়ে যায়। এমন রিক্ত নিঃস্ব প্রকৃতিকে তাই সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো মনে হয়। রিক্ত শীতের সাথে রিক্ত সন্ন্যাসীর অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন কবি তাঁর প্রিয়জন হারানো রিক্ত নিঃস্ব অনিকেত জীবনে। শীতের রিক্ততার মত কবির হৃদয় বেদনাবিধুর।
কারণ কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে অনির্বচনীয় শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর কাব্য সাধনায় ছন্দপতন ঘটতে থাকে। এক দুঃসহ বিষণœতায় কবির মন আচ্ছন্ন হয়ে আছে রিক্ততার হাহাকারে। যে রিক্ততা রয়েছে শীত প্রকৃতিতেও। তাই কবি তাঁর অতীত জীবনের রিক্ততার আশ্চর্য সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন নিঃস্ব রিক্ত শীতের মধ্যে।
১২. “কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে !”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। দখিনা দুয়ার আজ খোলা। চারিদিকে প্রকৃতি সেজেছে নবোঢ়া কন্যার মতন। কবির পরিচয় এই বসন্তের গান গাওয়াতে বসন্তকে “ঈড়সব, মবহঃষব ংঢ়ৎরহম! বঃযবৎপধষ সরষফহবংং! পড়সব”. এই বলে থমসন একদিন যে উক্তি করেছিলেন জগতের কবিকুলের তাইং শাশ্বত ধ্যান ধারণা। অথচ আমাদের কবি তা থেকে অন্যথা।
কবিমন এই দ্বিধাদ্ব›দ্ব এবং বসন্ত সমাগমনে ভ্রƒক্ষেপহীনতার কারণ বিশ্লেষণ করে বলেছেন। কবি আজ বহুদিন ধরে প্রিয়জন বিরহিত। তাই শীতের জীর্ণতা আর রিক্ততার মাঝে কবি খুঁজে পান নিজের জীবনের সাদৃশ্য। কবির প্রথম জীবনের আলোর দিশারী, বর্তমান সম্পদপূর্ণ সুখী জীবনে আর নেই।
যে দিয়েছে কবিকে অনুপ্রেরণা, কবিকে প্রস্ফুটিত ও বিকশিত করার জন্য যার আয়োজন ছিল ব্যাপক, সে রিক্ত শীতের মতন পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে হারিয়ে গেছে। কবির বসন্ত দিনে সেই সর্বশক্তি মাঘের সন্ন্যাসী গভীর বিষাদের রাগিনী ধ্বনিত করেছে দিক হতে দিগন্তে।
তাইতো কবি বসন্ত বন্দনায় নিজেকে করেন নি ব্যাপৃত। ফিরে গেছেন অতীত জীবনের স্মৃতির কাছে। তাই চারিদিকের পুষ্পিত ফাল্গুন মনে হয় কবির কাছে èানবিধূর। স্মৃতির দংশন জ্বালায় কবিমন উদাসী এক বাউল যেখানে সুখ নেই, নেই কোন আনন্দের বার্তা।
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | PDF Download
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | বহু নির্বাচনি প্রশ্নসমুহ | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ১-৫ | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ৬-১০ | PDF
১৩. “অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে ফুলে-ফুলে সাজানো, সৌরভমুখর মাদকতাপূর্ণ প্রকৃতির প্রতিশ্র“তি নিয়ে। এসেছে বাতাবি লেবুর মন উদাস করা সুবাসে, পাখির গানে, ভ্রমরের গুঞ্জনে আর আম্রমুকুলের সুরভিতে। শীতের জরাজীর্ণতার হয়েছে অবসান। অথচ সাড়ম্বরে জেগে ওঠা প্রকৃতির এতসব আহŸান কবির মনে জাগাতে পারে নি কোন আনন্দের সুর।
আনে নি কোন শিহরণ। কেননা পুষ্পশূন্য, রিক্ত হস্তে কিছুকাল পূর্বেই শীত ঋতু বিদায় নিয়েছে। শীতের আগমন ও বিদায়ে প্রকৃতি থেকেছে নীরব। শীতের এ রিক্ত ও নিঃস্বভাব কবিচিত্তে যে বেদনার সঞ্চার করেছে তার আবেগেই তিনি নির্মোহ এবং নিশ্চল।
কবির ভক্তক‚ল তাঁকে বসন্তের আগমনী সংবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু কবি উদাসীনভাবে বলেছেন, সত্যিই বসন্ত এসেছে কি না কিংবা বসন্তের আগমনী গান বেজেছে কি না তা তিনি জানেন না। কখন চুপিসারে তাঁর দ্বারে বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে তা তিনি লক্ষ্য করেন নি। ফলে তিনি বসন্তকে স্বাগত জানাতে পারেন নি। তাই কবির ব্যথাতুর হৃদয়ের বাণী
“অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?”
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।