আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
ডিপ্লোমা, আমরা এই নামটা শুনলেই মনে করি অর্ধেক মানে হাফ ইঞ্জিনিয়ার!
বাস্তব জীবনে এমনটা নয়। একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার যতটা দক্ষ হয় তার থেকে বেশি দক্ষ একজন ইঞ্জিনিয়ার বিএসসি কিংবা উচ্চশিক্ষা ছাড়া কখনই পাবেন না।
একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায় অনেকটাই জানতে পারে তাদের পড়ুয়া জীবনে।
অনেকেই আবার ডিপ্লোমা শেষ করে উচ্চশিক্ষা না করে চাকরী করে। কারন, তারা ভালো চাকরী পেলে তার মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে চায়। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরী করে।
হ্যাঁ! একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের জীবন এতোটাও সহজ হয় না। তাদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতনঃ
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদেরকে নিয়ে অনেকের মনেই একটা ভুল ধারণা আছে।
আর তা হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, বিএসসি কিংবা উচ্চ শিক্ষা ছাড়া ভালো বেতনের চাকরী সম্ভব না।
কারন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এর মান এইচএসসি এর সমমান।
এটা অবশ্য ঠিক, তবে আপনি কি জানেন?
- আরও পড়ুনঃ কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ? (ডিপ্লোমাঃপর্ব-২)
- আরও পড়ুনঃ ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (ডিপ্লোমাঃপর্ব-১)
একজন এইচএসসি সনদ-ধারী তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেন, বেতন স্কেল – মূল বেতন ৪৭০০/- সর্বসাকুল্যে ৯৭৪৫/- এবং তাকে সারাজীবন একই পদে চাকরি করে যেতে হয় অর্থাৎ তার কোন পদোন্নতি হয় না।
আর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেন।
বেতন স্কেল-মূল বেতন ৮০০০/ -সর্বসাকুল্যে ১৬৫৪০/- তারা ক্রমে ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হতে পারেন।
যা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত কাউকে পেতে হলে অন্ততপক্ষে মাস্টার্স অথবা বিসিএসধারী হতে হয়।
এইটা তো শুধু সরকারি ভাবে চাকরীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতনঃ
চলুন এবার জেনে নেই কর্পোরেট জবের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কেমন? কারা সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরী পায় এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে কোন ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করলে বেশি বেতনের চাকরীর সুযোগ আছে।
কর্পোরেট জব! আমরা সবাই জানি কর্পোরেট জব কি?
আচ্ছা যারা জানেন না তাদের উদ্দেশ্যে আমি ছোট করে বলছি,
কোন ধরনের বেসরকারি কিংবা সরকারের আওতাধীন নয় এমন কোন কোম্পানি অথবা এক মালিকানাধীন কোম্পানি গুলোকে কর্পোরেট কোম্পানি বলা হয়।
আর এই কর্পোরেট কোম্পানিতে যারা চাকরী করে তাদেরকে বলা হয় কর্পোরেট এমপ্লই বা কর্পোরেট চাকুরীজীবী।
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক, কর্পোরেট ফিল্ডে কোন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা সবচেয়ে এগিয়ে।
- আরও পড়ুনঃ কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ? (ডিপ্লোমাঃপর্ব-২)
- আরও পড়ুনঃ ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (ডিপ্লোমাঃপর্ব-১)
ডিপ্লোমার পরে ইঞ্জিনিয়ারদের বেতনঃ
ইঞ্জিনিয়ার বলতে চাহিদা প্রচুর যদি ইঞ্জিনিয়ার এর মত ইঞ্জিনিয়ার হওয়া যায়।
সেটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হোক আর ইলেক্ট্রিক্যাল হোক।
তবে বাংলাদেশে বর্তমানে চাহিদা রয়েছে- সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স মেকানিক্যাল এগুলোর।
আর একজন ইঞ্জিনিয়ারের বেতন নির্ভর করে তার কাজ অনুযায়ী।
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন
বিভিন্ন প্রজেক্ট,কনস্ট্রাকশন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে বেতন নির্ধারণ করা হয়। নির্দিষ্ট কোনো বেতন ফিক্সড করা থাকেনা অনেক ক্ষেত্রেই।
তবে, বর্তমানে বাংলাদেশে ডিপ্লোমা পাশ সিভিল ইন্জিনিয়ারের (সাইড ইন্জিনিয়ারের) বেতন সর্বনিম্ন -২০,০০০ টাক তবে কর্ম দক্ষতার ভিত্তি করে তা বাড়তে পারে।
আর বিএসসি ইন্জিনিয়ার দের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন-৩৫,০০০ টাকা তবে কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে তা বাড়তে পারে।
ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
সরকারি সেক্টরে এন্ট্রি লেভেলে সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে বেতন শুরু হয় প্রায় ৩২,০০০ টাকা থেকে। তবে এটা চ্যালেঞ্জিং। আপনাকে কম্পিটিশন করতে হবে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর সাথে।
যদিও এটা কোম্পানির উপর নির্ভর করে। যাদের অভিজ্ঞতা নেই তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি ১৫,০০০ টাকা শুরু করে থাকে।
ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র ইন্সট্রাকটর হিসেবে সরকারি এবং বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজগুলোতে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে। মোবাইলফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে।
দেশের বাইরে সুপারভাইজার অথবা হেড ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবেও কাজের সুযোগ আছে। ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন সর্বনিম্ন ১২০০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০০০ বা ৩০০০০ টাকা হতে পারে।
তবে কিছু কিছু কোম্পনি নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী এবং প্রার্থির যোগ্যতা বিবেচনা করে ৪০-৬০ হাজার টাকা বেতন দিয়েও একজন ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়ে থাকে।
ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
এন্ট্রি লেভেলে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক বেতন সাধারণত ৳১৫,০০০ – ৳৪০,০০০ হতে পারে। এক্ষেত্রে মাসিক আয় কাজ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ বিবেচনা করা হয়।
এইবার আসি ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের কথায়। এইটার জন্য অনেকেই হয়তো অপেক্ষা করে আছেন।
ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের বেতন শুরু হয় ১৫-২৫ হাজার টাকা থেকে। অপরদিকে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন শুরু হয় ৫০-৭০ হাজার টাকা থেকে।
ক্যারিয়ারের মূল সময় (বেশ কিছু বছর এক্সপ্রিয়েন্সের পড় যখন আপনি সিনিয়ার পোস্টে চাকরি করবেন) তখন একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সর্বোচ্চ ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করে।
কিন্তু ওপর দিকে একজন নরমাল ইঞ্জিনিয়ার ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করে। যদি বাইরের দেশে যান তবে নরমাল ইঞ্জিনিয়াররেরা মাসে ৭-৮ লাখ টাকা আয় করে।
একজন ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের অনেক ইনকাম সোর্স থাকে। যেমন,
- (ফ্রিল্যান্সিং) একজন ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ফ্রিল্যান্সিং করতে পারে।
- (আইটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা) কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার নিজের আইটি প্রতিষ্ঠান খুলতে পারে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে।
- (সফটওয়্যার ফার্ম) ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার যদি সঠিক ভাবে পড়াশোনা এবং দক্ষ হয় তাহলে সে চাইলেই একটি সফটওয়্যার ফার্ম দিয়ে নিজেই একটি স্টার্টআপ দাঁর করাতে পারে।
- (অনলাইন জব) চাকরী দেশের বাইরে হোক কিংবা ভীতরে একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ হচ্ছে কম্পিউটারে তাই সে চাইলেই ঘরে বসে কাজ করতে পারে।
সর্বশেষ কিছু কথাঃ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন
একটা ইঞ্জিনিয়ারিং মন্ত্রণালয় অথবা প্রতিষ্ঠানে যেখানে ১০ জন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার লাগে সেখানে ১০০ এর উপরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী লাগে।
তাই নিয়োগের সময় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ হয় প্রায় ১০-১৫ গুন বেশি।
একদল মানুষ যেখানে ডিপ্লোমাদের ৭-৮ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করবে বলে অবহেলা করছে সেখানে তারা জানেই না যে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরির শুরুতেই ৭০ হাজার টাকা মাসিক বেতনেরও চাকরি আছে।
জ্বি হ্যা, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বেশিরভাগ চাকরি ই PGCB, EGCB, DESCO, NESCO, RPCL, GTCL এর মত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
- আরও পড়ুনঃ কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ? (ডিপ্লোমাঃপর্ব-২)
- আরও পড়ুনঃ ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (ডিপ্লোমাঃপর্ব-১)
আর এগুলোতে চাকরির শুরুতে একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বেতন পড়ে প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি।
কেবল ২২-২৩ বছরের একটা ছেলে তার বয়সের চেয়েও তিনগুন বেশি বেতনের চাকরি করছে।
আপনি জেনারেলে বা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়লেই যেমন বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাবেন না তেমনি ডিপ্লোমা পড়লেই আপনি সফল হবেন না।
পরিশ্রম, ধৈর্য এবং পড়ালেখা ছাড়া কোনো জায়গাতেই সফলতা আসবে না।
জেনারেলের স্টুডেন্টরা যেমন পাশ করে অনেকেই বেকার ঘুরতেছে তেমনই অনেক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরাও পড়াশোনা ভাল করে না করার কারনে এবং কাজ না জানার কারনে বেকার ঘুরতেছে ।
দিনশেষে আসলে জয়টা প্রতিষ্ঠানের নয়, পরিশ্রমীদের-ই হয়।
উক্ত বিষয় সর্ম্পকে যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
5 comments
Pingback: কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায় - Jagorik
Pingback: ছাত্র জীবনে অনলাইনে আয় করার সহজ পদ্ধতি - Jagorik
Pingback: প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য - Jagorik
Pingback: গুগল এ্যাডসেন্সে কাজ করার জন্য কিছু হাই পেয়িং নিশ - Jagorik
Pingback: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি কোথায় করবেন এবং কিভাবে - Jagorik