আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানব, ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (ডিপ্লোমাঃ পর্ব – ১) বিস্তারিতঃ
অনেকেই প্রশ্ন করেন কোন সাবজেক্ট/ডিপার্টমেন্ট সবচেয়ে ভাল হবে।
অনেকে বলেন সিভিল/ইলেকট্রিক্যাল/কম্পিউটার/মেকানিক্যাল/পাওয়ার/ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি।
আবার অনেকেই বলেন সব সাবজেক্টই ভাল। আমিও বলব হ্যা অবশ্যই সব সাবজেক্টই ভাল।
তবে ভাল না আমরা।
– কেন ? প্রথমেই বলব আপনি যেটা পড়তে ভালবাসেন সেটাই পড়বেন। আপনি যা পেশা হিসেবে নিতে চান তাই নিবেন।
কেই যদি আপনাকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে চায় তাহলে আপনি সফল হতে পারবেন না।
প্রায়ই যে সকল সাবজেক্টগুলো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতে দেখি সেগুলো হল- ১। সিভিল ২। কম্পিউটার ৩। মেকানিক্যাল ৪। ইলেকট্রিক্যাল মাত্র কয়েকটা দিলাম…
আমি এখানে সব সাবজেক্ট এর বর্ননা দিতে পারলাম না বিধায় দু:খিত।
তর্কে-বিতর্কে যাওয়ার আগে কিছু জ্ঞানের কথা জেনে নিই-
বিভাগ-সমূহঃ ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
সিভিল বিভাগঃ
১) সিভিল -‘সিভিল’ পৃথিবীর চেহারা পরিবর্তনের ইঞ্জিনিয়ারিং।
পৃথিবীর বড় বড় স্থাপত্য থেকে শুরু করে আপনি যে বাড়িটির নিচে বসে আসেন তা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবদান।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সবচেয়ে বড় উদাহরনগুলো হল দুবাই এর ব্রুজ খলিফা এর মত স্কাই-স্ক্রাপারগুলো, এর মধ্যে আছে ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল কমার্স সেন্টার, মক্কা ক্লক টাওয়ার ইত্যাদি।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ এসকল স্থাপত্যগুলোর ডিজাইন থেকে শুরু করে কি ধরনের ম্যাটারিয়ালস ব্যাবহার করা হবে এবং পরিপূর্ন রুপ দেওয়া এবং কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের সকলপ্রকার কলাকৌশল করা হয়।
যেদিন থেকে মানুষ একসাথে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে সেদিন থেকেই মূলত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উৎপত্তি।
তবে এর সত্যিকারের রিভুলিউশনটা শুরু হয় গ্রিকদের থেকে। গ্রিকদের থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এর সবোর্চ্চ উন্নতি হয়ে চলছে।
এসব উন্নতির পিছনে শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবদানই না অন্য সকল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবদানও কম নয়।
ইলেকট্রিক্যাল বিভাগঃ ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
২) ইলেকট্রিক্যাল – বলতে গেলে ষোড়শ শতাব্দীর আগেও পৃথিবী অন্ধকার ছিল।
বেঞ্জামিন যখন বিদ্যুতের ধারনা দিলেন তখনো মানুষ জানতো না যে ভবিষ্যতের পৃথিবী কোন দিকে যাচ্ছে।
এডিসন তা সারা পৃথিবীর মানুষকে জানিয়ে দিলেন। মানুষ বুজতে পারলো যে কি হতে যাচ্ছে।
একটু চিন্তা করে দেখুন বিদ্যুতের প্রয়োনীয়তা কি। বাসায় মাত্র ১ঘন্টা বিদ্যুত না থাকলে তা অবশ্যই বুঝতে পারবেন।
পৃথিবীর বড় বড় পাওয়ার প্লান্টগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন য়ে প্রতিদিন কি পরিমান চাহিদা পূরন করছে।
এমন এক সময় আসবে যখন সব ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে।
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মূলত পাওয়ার প্লান্ট ডিজাইন থেকে শুরু করে বিদ্যুত উৎপাদন এবং বন্টনের কলাকৌশল নিয়ে গভেষনা এবং বাস্তব রূপ দেওয়া হয়।
শুরুতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক প্রসার না থাকলেও গত ৬০-৭০ বছরে অনেক বিস্তার লাভ করছে। আর তা ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌছবে তা সময়ই বলে দিবে।
কম্পিউটার বিভাগঃ ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
৩) কম্পিউটার – আধুনিক পৃথিবীর রূপকার কম্পিউটার ।
গত ৫০ বছরে যে যন্ত্রটা পিছিয়ে থাকা মনূষ্য সভ্যতাকে ৫০০০ বছর এগিয়ে নিয়েছে তা হল কম্পিউটার ।
গত ৫০০০ বছরেও কোন যন্ত্র পৃথিবীর উন্নতির পিছনে এত অবদান রাখতে পারেনি যা কম্পিউটারের অবদানে গত ৫০ বছরে হয়েছে।
একটা কাজ হাজার মানুয়ের করতে সারজীবন লাগলেও কম্পিউটার তা এক সেকেন্ডে করে দিতে পারে।
কম্পিউটার বলতে শুধু আপনার ঘরের ডেস্কে রাখা কম্পিউটারকে বোঝায় না। আপানার হাতের ঘড়ি থেকে শুরু করে চায়নার MilkyWay-2 Supercomputer, IBM এর DeepThought সবই কম্পিউটারের আওতায়।
শুধু পৃথিবীতে না পৃথিবীর বাইরে এমন কি এখন সৌড়জগতের বাইরেও একটি কম্পিউটার অবস্থান করছে।
কম্পিউটারের রিভিলিউশন মাত্র শুরু হল। মাত্র ৫০ বছর আগামী ৫০ বছরে হয়ত পৃথিবী পরিবর্তন হয়ে যাবে।
ভবিষ্যতের পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করবে কম্পিউটার। এখনই শুরু হয়ে গেছে। যার বড় প্রমান ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন।
আর এসবের পিছনে নিউরাল নেটওয়ার্ক এবং আর্টিফাইসিয়াল ইন্টিলিজেন্ট-AI কাজ করছে।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ মূলত আধুনিক থেকে আধুনিকতর কম্পিউটার তৈরীর জন্য ডিজাইন এবং প্রোগ্রাম করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্য থাকে মানুষের কাজকে আরও সহজ করা।
এমন এক সময় আসবে যখন আপনার বাড়ির প্রতিটি জিনিস কম্পিউটারে প্রিন্ট হবে। যার বড় প্রমান বর্তমানের থ্রিডি প্রিন্টার।
মেকানিক্যাল বিভাগঃ
৪) মেকানিক্যাল – মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর রিভিলিউশনটা শুরু হয় অটোমেটা আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই ১২০০ সালের দিকে।
যখন রোমানরা অনুভব করল জীবন যাত্রার মান সহজ এবং দ্রুত করতে বিকল্প উপায় খোজা প্রয়োজন তখনই আবিষ্কার হতে লাগল নতুন নতুন যন্ত্র।
যদিও শুরুটা হয়েছিল গ্রিকদের থেকে তবে জটিল যন্ত্র নির্মান শুরু হয় পনের শতকের দিকে। ভিন্চির গ্রেট মডেল তার বড় প্রমান।
এর পরে অনেক জটিল এবং বেশি কার্যকর অনেক যন্ত্র আবিষ্কার হয় যেমন-এরোপ্লেন,বড় বড় জাহাজ, টারবাইন ইত্যাদি।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সবথেকে বড় উদাহরন হল CERN এর ২৭ কিলোমিটার বৃত্তাকার টানেল যা সুইজারল্যান্ড এর মাটির নিচে অবস্থিত যেখানে পৃথিবীর উৎপত্তি রহস্য নিয়ে গভেষনা করা হয়।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মূলত যন্ত্রের সহজ ডিজাইন এবং সহজ ব্যবহার নিয়ে গভেষনা এবং বাস্তব রুপ দেওয়া হয়।
এবার কিছু কাট-ছাট কথা বলবঃ ডিপ্লোমার সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
আপনার যা কাজ, যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে আপনি তাই ভাল করে শিখুন।
মনে করেন আপনি ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়ে গেলেন সিভিল ডিপার্টমেন্টে। এখন কিছুদিন পর আপনার মনে হচ্ছে আপনার ডিপার্ট্মেন্ট সেরা। আপনি অন্যদেরকেও সিভিলে পড়ার জন্য মোটিভেট করছেন।
হাজারটা লজিক দিচ্ছেন সিভিল নিয়ে পড়ার জন্য।
এখন কথা হচ্ছে আপনার বিষয়ে আপনার কাছে ভালো লাগলেই আপনি অন্য বিষয়গুলোকে কেন ছোট করে দেখবেন?
আমি যদি প্রশ্ন করি আপনি কি পারবেন ইলেকট্রিক্যাল ছাত্রদের মত ১ ইউনিট বিদ্যুত তৈরী করে দেখাতে?
আপনি কি পারবেন তাদের মত একটা ট্রান্সফরমারের ডিজাইন করতে?
আপনি কি পারবেন তাদের মত একটা সার্কিট বোর্ড ডিজাইন করতে?
কম্পিউটার ছাত্রদের মত আপনি কি পারবেন ১০০ লাইন প্রোগ্রাম লিখতে?
পারবেন একটা প্রসেসর এর মাত্র ১০টা লজিক এর বর্ননা দিতে যেখানে কয়েক লক্ষ লজিক থাকে?
আপনি কি পারবেন একটা ছোটখাট সফ্টওয়্যার তৈরী করতে যেখানে একটা সফ্টওয়্যারে কয়েকহাজার লাইন থেকে শুরু করে কয়েক মিলিয়ন লাইন কোড লিখতে হয়?
আপনি কি পারবেন একটা যন্ত্রের গঠন বর্ননা করতে?? বলেন পারবেন?? পারবেন না কারন আপনি আপনার সাবজেক্টও ভাল করে জানেন না!! তাহলে আপনি অন্যদের ছোট করে দেখবেন কেন?
ডিপ্লোমায় কোন বিষয়ই ছোট নয়। যদি আপনি মন দিয়ে আগ্রহ দিয়ে পড়েন।
এই আর্টিকেলে মোটামুটি ধারণা আশাকরি আপনাদেরকে দিতে পেরেছি।
ডিপ্লোমায় কোন বিষয় শেরা – এর দ্বিতীয় পর্বে আমরা দেখব, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট কেন তাদের নিজ নিজ জায়গায় বেস্ট তা নিয়ে বিস্তারিত।
উক্ত বিষয় সর্ম্পকে যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।