চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা ব্যাকারণ | এককথায় প্রকাশ ও বাগধারা | PDF: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বিষয়টির ব্যাকারণ অংশ হতে এককথায় প্রকাশ ও বাগধারা ও বিরামচিন্হের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
এককথায় প্রকাশ
নিচের অনুচ্ছেদটি লক্ষ কর :
লোকটি চার রাস্তার ঠিক মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত জলে ভেজা।
কথাগুলো আমরা এভাবেও বলতে পারতাম :
লোকটি চৌরাস্তার ঠিক মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছে। তার আপাদমস্তক জলে ভেজা।এভাবে বললে অর্থেরও কোনো পরিবর্তন ঘটে না, বলতেও সহজ ও দ্রুত হয়।
কথা বলার সময় আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বাক্য বা বাক্যাংশকে সংক্ষিপ্ত করে থাকি। বড় একটি বাক্য বা বাক্যাংশকে একটি শব্দে বা এককথায় বলি।
অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্য বা বাক্যাংশকে ছোট করে প্রকাশ করাকেই বলা হয় বাক্য সংকোচন বা এককথায় প্রকাশ।
নিচে এককথায় প্রকাশের কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো :
বীরত্বে সবার সেরা ———-বীরশ্রেষ্ঠ।
যাওয়া কষ্টসাধ্য এমন ———-দুর্গম।
অত্যন্ত সাহসের কাজ ———-দুঃসাহসিক।
যুদ্ধ করার বিমান ———-যুদ্ধবিমান।
কোনো কিছুই ভয় পায় না যে ———-অকুতোভয়।
বাড়ির নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আটকে রাখার প্রথা ———-অবরোধপ্রথা।
দমন করা যায় না এমন ———-অদম্য।
যিনি আগে চলেন ———-অগ্রদূত।
যাকে সবসময় মানুষ স্মরণ রাখে ———-চিরস্মরণীয়।
বাড়ির ছাদের লাগোয়া ঘর ———-চিলেকোঠা।
যাঁর অনেক জ্ঞান ———-জ্ঞানী।
ভিন্ন জাতির ———-বিজাতীয়।
যারা লোহা দিয়ে জিনিস তৈরি করে ———-কামার।
মায়ের কাছে শেখা ভাষা ———-মাতৃভাষা।
রক্তে যা পিছল হয়েছে ———-রক্ত-পিছল।
সুন্দরবনে যারা মধু সংগ্রহ করে ———-মৌয়াল।
মাংসই যার প্রধান খাদ্য ———-মাংসাশী।
কারও ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো রাগ রয়েছে যার ———-হিংস্র।
পান করা যায় এমন ———-পেয়।
লবণ মেশানো যাতে ———-লবণাক্ত।
বিনয়ী বা সংযত নয় যে ———-দুর্বিনীত।
দুদিকের মধ্যে সমতা বজায় রাখা ———-ভারসাম্য।
কলহ করতে যে পছন্দ করে ———-কলহপ্রিয়।
জনমানুষ নেই যেখানে ———-নির্জন।
রাতে বিচরণ করে এমন ———-নিশাচর।
যে ব্যক্তি বন্দুক ধরে রেখেছে ———-বন্দুকধারী।
যা ফুরিয়ে যায় না ———-অফুরন্ত।
সম্মানের সাথে অভ্যর্থনা ———-সংবর্ধনা।
যে ব্যক্তি বিপদে পড়েছে ———-আর্ত, বিপদগ্রস্ত।
অত্যন্ত চালাক যে ———-সুচতুর।
ইতিহাসসংক্রান্ত ———-ঐতিহাসিক।
পূর্বে যা দেখা যায় নি ———-অভ‚তপূর্ব।
শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে যে সফর করা হয় ———-শিক্ষাসফর।
যাত্রার শেষে মানুষ যেখানে পৌঁছায় ———-গন্তব্য।
প্রতিষ্ঠা করেন যিনি ———-প্রতিষ্ঠাতা।
বাগধারা
নিচের বাক্যটি লক্ষ কর :
সেলিম অগাধ জলের মাছ।
প্রশ্ন জাগতে পারে, একজন মানুষ কীভাবে অগাধ অর্থাৎ গভীর জলের মাছ হতে পারে। আসলে এখানে ‘অগাধ জলের মাছ’ কথাটি একটি বিশেষ অর্থ বোঝাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে- ‘সুচতুর ব্যক্তি’। বাংলা ভাষায় এরকম কিছু শব্দগুচ্ছ আছে যেগুলো বাক্যে বসে যা লেখা থাকে তা না বুঝিয়ে অন্য একটি বিশেষ অর্থকে বোঝায়। এ ধরনের শব্দগুচ্ছ ‘বাগধারা’ নামে পরিচিত।
নিচে কতগুলো বাগধারা ও বাক্যে তাদের প্রয়োগ দেখানো হলো :
অরণ্যে রোদন (নিষ্ফল আবেদন) – ভিক্ষুকটির অরণ্য রোদনে কেউ সাড়া দিল না।
অক্কা পাওয়া (মরে যাওয়া) – গণপিটুনিতে পকেটমার অক্কা পেল।
অর্ধচন্দ্র (গলাধাক্কা) – বেয়াদব ছেলেটাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করে দাও।
অগাধ জলের মাছ (সুচতুর ব্যক্তি) – চৌধুরী সাহেব অগাধ জলের মাছ।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ) – তুমি হলে আমড়া কাঠের ঢেঁকি, তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।
আক্কেল সেলামি (বোকামির দণ্ড) – না বুঝে কাজ করলে আক্কেল সেলামি দিতে হয়।
উড়নচণ্ডী (অমিতব্যয়ী) উড়নচণ্ডী লোকদের ভবিষ্যৎ ভালো নয়।
ইঁদুর কপালে (মন্দভাগ্য) – ফরহাদ ইঁদুর কপালে, তাই এত পড়েও পাশ করল না।
ইঁচড়ে পাকা (অকালপক্ব) – ছেলেটা ইঁচড়ে পাকা বলেই বড়দের সঙ্গে অমন করে তর্ক করছে।
এলাহি কাণ্ড (বিরাট ব্যাপার) – এতো সব আয়োজন! মনে হচ্ছে কোনো এলাহি কাণ্ড ঘটেছে।
কৈ মাছের প্রাণ (যা সহজে মরে না) – চোরটার কৈ মাছের প্রাণ, গণপিটুনি খেয়েও বেঁচে গেল।
গোঁফ খেজুরে (অলস) – গোঁফ খেজুরে মানুষের উন্নতি হয় না।
গোড়ায় গলদ (শুরুতে ভুল) – এ অঙ্ক মিলবে না, কারণ গোড়াতেই তো গলদ রয়েছে।
ঘোড়ার ডিম (অবাস্তব বস্তু) – পড়াশোনা না করলে পরীক্ষায় ঘোড়ার ডিম পাবে।
চোখের বালি (অপ্রিয়/চক্ষুশূল লোক) – মা-মরা ছেলেটি সৎ মায়ের চোখের বালি।
চোখের মণি (অতি প্রিয়) – একমাত্র ছেলেটি মায়ের চোখের মণি।
ঠোঁটকাটা (স্পষ্টভাষী) ঠোঁটকাটা লোকেরা সবকথা সামনাসামনিই বলে।
ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য বস্তু) – চাকরি পেয়ে রফিক ডুমুরের ফুল হয়ে উঠেছে, দেখাই পাওয়া যায় না।
থ বনে যাওয়া (স্তম্ভিত হওয়া) – তার কাণ্ড দেখে আমরা থ বনে গেলাম।
দহরম মহরম (ঘনিষ্ঠতা) – আমার সঙ্গে কবিরের খুব দহরম মহরম।
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) – টাকা থাকলে দুধের মাছির অভাব হয় না।
পটল তোলা (মারা যাওয়া) – অনেকদিন অসুস্থ থাকার পর লোকটি পটল তুলল।
ভরাডুবি (সর্বনাশ) – দোকানে আগুন লেগে ফজলু মিঞার ভরাডুবি হয়েছে।
ভিজে বিড়াল (কপটচারী, ভণ্ড) – সে একজন ভিজে বেড়াল, তাকে চেনা সহজ নয়।
হ-য-ব-র-ল (বিশৃঙ্খলা) – জিনিসপত্র ছড়িয়ে ঘরটাকে তো একেবারে হ-য-ব-র-ল করে রেখেছে।
হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল) – এ টাকা কটিই আমার হাতের পাঁচ।
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাঠান মুলুকে | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | কাজলা দিদি | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাখির জগৎ | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
বিরামচিহ্ন
মানুষ একটানা কথা বলতে পারে না। তাই তাকে মাঝে মাঝে থামতে হয়। তা ছাড়া অন্যকে কথাগুলো বোঝার সময়ও দিতে হয়। লেখার বেলায়ও তেমনি মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হয়। লেখা থামাতে বাক্যে ব্যবহৃত হয় নানা রকম চিহ্ন বা সংকেত। এই চিহ্ন বা সংকেতই বিরামচিহ্ন। একে যতি বা ছেদ-চিহ্নও বলা হয়ে থাকে। বিরামচিহ্ন ব্যবহারের ফলে বাক্যের অর্থ সুস্পষ্ট হয।
লিখিত বাক্যে অর্থ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে মানুষের আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি ব্যক্ত করার জন্য যে চিহ্নসমূহ ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে বিরামচিহ্ন বলে।
নিচে বাক্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার বিরামচিহ্নের নাম, আকৃতি নির্দেশ করা হলো :
বিরামচিহ্নের নাম আকৃতি
কমা ,
সেমিকোলন ;
দাঁড়ি ।
জিজ্ঞাসাচিহ্ন ?
বিস্ময়চিহ্ন !
কোলন :
কোলন ড্যাশ :-
ড্যাশ –
হাইফেন
উদ্ধরণচিহ্ন/উদ্ধৃতিচিহ্ন “ ”
বন্ধনী চিহ্ন ( ), { }, [ ]
বিকল্প চিহ্ন /
ইলেক/লোপচিহ্ন/ঊর্ধ্বকমা ,
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।