HSC | বাংলা ২য় | আলোচ্য বিষয়ঃ খুদে গল্প ১৬-২৩ | PDF Download: বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব খুদে গল্প গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু খুদে গল্প নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
১৬. ‘দুর্ঘটনা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
দুর্ঘটনা
হঠাৎ রিকশার ডান চাকাটি খুলে দৌঁড়াতে লাগল। আমি আর বনি ছিলাম রিকশার যাত্রী। আমি আর রিকশাচালক বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়লাম। কিছুটা ঘোর কাটতেই আমি বুঝতে পারলাম প্রকৃত ঘটনা।
রিকশাচালক বেশ দ্রæত গতিতে রিকশাটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দেয় রিকশাটিকে। সেই ধাক্কাতেই রিকশার চাকাটি খুলে সামনের দিকে গড়িয়ে যেতে থাকে। পেছনে থাকিয়ে দেখি গাড়িটি আর নেই।
অর্থাৎ রিকশাটিকে ধাক্কা মেরেই গাড়িটি সঙ্গে সঙ্গে দ্রæতগতিতে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। প্রচন্ড রাগ হলো সে গাড়ি চালকের উপর। নূন্যতম সৌজন্য কিংবা দায়বোধ নেই তাই।
হঠাৎ মনে হলো বনি কোথায়? আমি আতঙ্ক আর আশঙ্কায় দৌঁড়ে গেলাম রিকশার কাছে। গিয়ে দেখি বনি পড়ে আছে রিকশাটির নিচে। আমার ডান পাশে বসে ছিল বনি আর রিকশার ডান চাকাটি খুলে গেছে। রিকশাটির কাছে যেতেই রিকশা চালককে দেখতে পাই।
সে খুব ব্যথা পায়নি। তবে তারও বেশ লেগেছে। রিকশাটি তুলতে যাবো এমন অবস্থায় সামনে তাকিয়ে দেখি স্কুলের পোশাক পড়া একটি শিশু রাস্তায় পড়ে আছে। বুঝতে বাকি রইল না যে, রিকশার চাকাটি সামনের দিকে দ্রæত গিয়ে শিশুটির সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। আর সেই কারণে শিশুটি পড়ে গেছে। একটু কাছে যেতেই দেখি শিশুটির মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। এমন অব¯’ায় শিশুটির দিকে তাকাতে সাহস হলো না।
ততক্ষণে রিকশাওয়ালা বনিকে উদ্ধার করেছে। বনিও বেশ আহত। তবে বনিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে হাঁটতে পারবে। বনিকে বললাম, বনি দ্রæত এসো। শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বনি রিকশাচালককে কিছু না বলে দৌঁড়ে এলো আমার কাছে। আমরা দুজনে শিশুটিকে ভর্তি করলাম হাসপাতালে। কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটিকে দেখে বললেন, আঘাত লেগে ওর বেশ রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাছাড়া মাথায়ও গুরুতর আঘাত লেগেছে।
আপনারা সময়মতো না আনলে ওকে বাঁচানো যেত না। যাই হোক, শিশুটিকে এখুনি রক্ত দিতে হবে। আপনারা ই+ রক্তের ব্যবস্থা করুন। বনি বললো স্যার আমার রক্তের গ্রুপ ই+। আপনি আমার রক্ত নিন। আমি বনিকে বললাম,বনি তুমি এমনিতে আহত,তার ওপরে…। বনি আমাকে বাঁধা দিয়ে বললো, এই মুহূর্তে শিশুটির জীবন বাঁচানো সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আমি কিছু না বলে গেলাম ওষুধ আনতে। ওষুধ এনে দেখি বনি ও শিশুটি বেডে শুয়ে আছে।
রক্ত ট্রান্সফার শেষ হলে বনি উঠে দাঁড়ায়। আমি বনিকে বাইরে আনি। ডাক্তার বললেন, ঘন্টাখানেক আগে শিশুটির জ্ঞান ফিরবে না। আপনারা অপেক্ষা করুন। ঘন্টাখানেক বাইরে ঘুরে আমি ও বনি হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম। এতক্ষনে আমরা বেশ ক্লান্ত। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি হাসপাতালের ভেতর। সেই বেডটির দিকে এগিয়ে যেতে দেখি শিশুটিকে কোলে নিয়ে একটি মহিলা আদর করছে, তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন লুঙ্গি পড়া এক ব্যক্তি।
লোকটিকে চেনা চেনা মনে হলো। এগিয়ে যেতেই দেখি লোকটি সে রিকশাওয়ালা। রিকশাওয়ালা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শিশুটির দিকে। আমরা বুঝতে পারলাম সে শিশুটি ছিল সেই রিকশাওয়ালার। আমি ও বনি বেশ বিস্মিত হলাম। আমরা এগিয়ে গিয়ে রিকশাচালককে রিকশার ভাড়া দিতে গেলে রিকশাওয়ালা আমাদের হাত ধরে কেঁদে ফেললেন।
১৭. ‘রক্তঝরা ফাগুন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
রক্তঝরা ফাগুন
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি। আনিসের কাছে তখন ঢাকা শহরের পরি¯ি’তি বেশ উত্তপ্ত মনে হতে লাগল। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের মিটিং, মিছিল আর বিক্ষোভ চলছিল। এখানে ওখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও চলতে থাকে। এমন পরি¯ি’তির মধ্যেই আনিসের শ্বশুর তার স্ত্রী লতাকে নিয়ে একদিন ঢাকায় চলে এলেন। অবশ্য লতার এই আগমন ঠেকানোর জন্য সেবার আনিসের আর তেমন কিছুই করার ছিল না।
আনিসের সঙ্গে লতার বিয়ে হয়েছিল দুই বছর আগে। আনিস মাঝে মাঝে বাড়িগিয়ে দু-তিন দিন থেকে আবার ঢাকায় ফিরে আসত। সরকারি চাকরির সুবাদে সে ঢাকায় একটা ছোট ঘর ভাড়া করে থাকত । তার চাকরির বয়স তখন মাত্র আড়াই বছরের মতো। বিয়ের পর থেকেই লতার ইচ্ছে ছিল ঢাকায় স্বামীর কাছে বেড়াতে যাবে। কিন্তু বাড়তি খরচের ভয়ে আনিস নানা অজুহাতে এতদিন লতার সেই ঢাকা আসার ইচ্ছাটা ঠেকিয়ে রেখেছিল।
যতবারই আনিস বাড়িতে গেছে লতা ওকে ঢাকায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবদার করেছে। আনিস নানা অজুহাতে তাকে বারণ করেছে। এবারও লতার ঢাকা আসা হতো না, যদি বাবা জমিজমা সংক্রান্ত কাজে ঢাকায় না আসতেন। লতাকে নিষেধ করতে আনিসেরও বিবেকে বাঁধল। বিয়ের পর থেকে বেচারি লতাকে নিয়ে সে গ্রামের বাইরে কোথাও যায়নি। মেয়েটাও তো আর তেমন কিছু চায়নি।
দুদিনের জন্য ঢাকায় বেড়াতে আসতে চেয়েছে। প্রকৃতিতে ফাল্গুন এসেছে ঠিকই কিন্তু বাঙালির মনে তখন গ্রীষ্মের দাবদাহ চলছে। পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছিল। আনিসের মনও তাই চিন্তিত হয়ে উঠল! লতাকে আনিসের কাছে রেখে আনিসের শ্বশুর একদিন পরেই বাড়িফিরে গেলেন। ঢাকা শহর ঘুরে দেখিয়ে এক সপ্তাহ পরে আনিস লতাকে বাড়িদিয়ে আসবে— এমনটাই সিদ্ধান্ত ছিল।
অফিস থেকে বিকেলে বাসায় ফিরে আনিস লতাকে নিয়ে রিকশায় বেড়াতে বের হয়। বড় বড় দালানকোঠা, বাস-গাড়ি খুব বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে থাকে লতা। রাস্তার পাশে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া দেখে লতা খুবই বিমোহিত হয়ে যায়! কিন্তু আনিসের মনে শঙ্কা জাগে দেশের যা পরিস্থিতি, যেকোনো সময় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে। তাই আর সন্ধ্যার পর বাইরে থাকাটা নিরাপদ মনে করে না আনিস।
রাতে রেডিওতে ভাষা আন্দোলনের খবর শুনে আনিসের মন আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। খবরে বলল, আগামীকাল ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সারারাত প্রায় নির্ঘুম কাটাতে হলো আনিসকে। অবশ্য লতা অত কিছু বোঝে না। সে গ্রামের মেয়ে। সে শুধু জানে, মাতৃভাষার জন্য শহরের বাঙালিরা আন্দোলন করছে। লতা তাই রাত গভীর হওয়ার আগেই ফাল্গুনের হিমেল বাতাসে ঘুমিয়ে যায় ।
পরদিন ছিল ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ সকালে যথারীতি আনিস অফিসে গেল। লতা স্বাভাবিকভাবেই ঘরে ছিল। হঠাৎ সে বাইরে অনেক হৈ-চৈ শুনতে পেল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল, লোকজন বলাবলি করছে– আজ নাকি পুলিশ ছাত্রদের মিছিলে গুলি করেছে। অনেক লোক আহত হয়েছে। কেউ কেউ মারাও গেছে। চারদিক থেকে লতা মিছিলের তীব্র ¯েøাগান শুনতে পেল ’রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।’
লতার মনে তখন ভয় কাজ করতে শুরু করল। মনটা অস্থির হয়ে উঠল। হঠাৎ দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ। বাইরে আনিসের কণ্ঠ শুনে দরজা খুলে দেয় লতা। । দরজায় কোনো রকমে দাঁড়িয়ে থাকা আনিস লুটিয়ে পড়ে। তার ডান হাতে গুলি লেগেছে। রক্তে ভেসে গেছে জামা। লতা এক টুকরো কাপড় এনে আনিসের ক্ষতস্থানে বেঁধে দেয়। লতার হাত কাঁপতে থাকে। তার চোখে পানি, হাতে রক্ত।
১৮. ‘শব্দদূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
শব্দদূষণ
মাইকের তীব্র শব্দে রাশেদুল কান চেপে ধরে। মাইক বহনকারী সিএনজিটা চলে গেলেও কিছুক্ষণ কানের ভেতর বোঁ বোঁ করতে থাকে। এই সমস্যাটা বেশ কিছুদিন ধরে সে অনুভব করছে। রাশেদ এর কোনো কারণ ও সমাধান খুঁজে পায়নি। আর পাবেই বা কী করে? রাজধানীতে এসেছে প্রায় এক বছর হতে চলল। সেই আসা অবধি অসহনীয় শব্দ শুনছে চারদিকে। বিচিত্র সব শব্দের শহর এ ঢাকা।
পথে চলতে গেলে বাস ট্রাকে হর্ণের তীব্র শব্দে কান পাতা দায়। এছাড়াও আছে বিল্ডিং তৈরির ইট ভাঙার মেশিনের নিকট শব্দ, ছাদ পেটানোর শব্দ, কলকারখানার মেশিনের শব্দ ইত্যাদি। উচ্চ স্বরে গানবাজনা তো এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। প্রথমে রাশেদের ঘুরুতর কিছু মনে না হলেও অব¯’াদৃষ্টে তার মনে হচ্ছে কান দুটিই বুঝি শেষ পর্যন্ত নষ্ট হবে।
সে ঢাকা শহরের একটা নামকরা শিশু বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে হাঁটছিল অথচ সে লক্ষ করল শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এমন সময় ট্রাকের হর্নের বিকট শব্দে রাশেদুল কানের ভেতরে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। মনে হয় কানে যেন গরম লোহার শলাকা ঢোকানো হচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রণায় সে ছটফট করতে করতে ফুটপাতের উপর জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে।
দুজন সহৃদয় পথচারী তাকে ধরাধরী করে একটা সিনএনজিতে তুলে ঢাক মেডিকেল এনে ভর্তি করে। ডাক্তাররা কিছুতেই রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা করে তার জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। ইতোমধ্যে দুজন সাংবাদিক এসে হাজির হন। প্রায় ৯ ঘন্টা পর রাশেদুলের জ্ঞান ফিরে।
প্রথমে সে কিছুই মনে করতে পারে না। বুঝতে পারে না। বলে, আমি কোথায়? এখানে এলাম কীভাবে? কর্তব্যরত চিকিৎসক বললেন, তুমি এখন হাসপাতালে। এখন বলো তো তোমার কী হয়েছিল? রাশেদুল দেখতে পায় সাংবাদিকরা তার ছবি তুলছে। তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। সে তখন অকারণে প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে ওঠে। ডাক্তার বুঝতে পারেন না কেন সে চিৎকার দিচ্ছে। সাংবাদিকরা তার কাছে এসে তার এ অদ্ভুত আচরণের কারণ জানতে চান।
প্রশ্ন করেন কেন তার এ চিৎকার। জবাবে রাশেদুল বলে- আমার এ চিৎকার সকল শব্দদূষণের বিরুদ্ধে। শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে। যতদিন না এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যব¯’া না নেওয়া হচ্ছে ততদিন আমার চিৎকার চলবে।
১৯. ‘পানি দূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
পানি-দূষণ
লঞ্চ ভ্রমণের সময় বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দেখে রাহাত বিস্মিত হয়। এ কি নদী না নর্দমা? নদীর পানি একেবারে কালো হয়ে গেছে আর তার সঙ্গে রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। মনে হয় এখনই দম বন্ধ হয়ে আসবে। রাহাতের মনে হচ্ছে এখনই নেমে যায় লঞ্চ থেকে। কিন্তু নদীর এই করুন দশা স্বচক্ষে দেখার জন্য সে চুপ করে তাকিয়ে থাকল নদীর দিকে।
কয়েকদিন আগে রাহাত কোনো একটি পত্রিকায় ‘নদী বাঁচাও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পড়েছিল। কিন্তু সরজমিনে দেখে রাহাত শুধু বিস্মিত হলো না, সাথে সাথে প্রচন্ড রাগ হলো মানুষের ধ্বংসাত্মক এই কর্মকাÐের জন্য। কী করে ফেলেছে নদীটাকে প্রায় দুই কোটি লোকের বাস ঢাকা শহরে। ১৬১০ সালে যখন এই বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা নগরীর পত্তন হয় তখন তার ছিল পূর্ণ যৌবন। কালের বিবর্তনে সেই পূর্ণ যৌবনা বুড়িগঙ্গা আজ মানুষের হাতেই মৃত্যুমুখে পতিত হতে চলেছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। অত্যধিক জনসংখ্যার চাপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে নদীর ওপর। নগরীর অসংখ্য কল কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে যা নদীর এই অবস্থার জন্য দায়ী। লঞ্চে চলতে চলতে দেখল নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য পয়ঃনিষ্কাশন নালা বা প্রতিনিয়ত নদীর পানিকে বিষিয়ে তুলছে। হঠাৎ রাহাত দেখতে পেল কেউ একজন বিস্কুট খেয়ে বিস্কুটের খালি প্যাকেট-পলিথিন ব্যাগে ভরে লঞ্চের জানালা দিয়ে নদীতে ফেলল।
এটাও পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষের এই অসচেতনতা ও স্বার্থান্বেষী মনোভাব বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীর পানি দূষিত হওয়ার প্রধান কারণ। প্রতিদিন অসংখ্য ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলার কারণে তা থেকে যে তেল বা বর্জ্য নিঃসরণ হয় তাও নদীর পানি দূষিত করে। এসব দেখতে দেখতে রাহাতের মনে হলো, এ দেশের মানুষ যতদিন সচেতন না হবে ততদিন প্রকৃতির এই বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হবে না।
২০. ‘আমার শৈশব স্মৃতি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।
আমার শৈশব স্মৃতি
‘হারানো সে দিনের কথা বলব কী রে হায়- সে চোখে দেখা প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।’ হ্যাঁ, আমার জন্ম গ্রামে। বাংলাদেশের হাজারো গ্রামের মতো আমার গ্রামটিও ছায়া সুনিবিড়। জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু আমার শৈশব দিনগুলো আমার স্মৃতিপটে অক্ষয় হয়ে আছে।
স্নিগ্ধ পল্লিপ্রকৃতি ছিল আমার শৈশবের অন্তরঙ্গ বন্ধু। মনে পড়ে শৈশবের সেই দুরন্ত দিনগুলোকে। দস্যিপানায় ছিলাম অদম্য। সারাদিন কাটত ছোটাছুটি, লুটোপুটিতে। চাকরির প্রয়োজনে বাবা থাকতেন বিদেশে। মায়ের আদর ভালোবাসা শাসনের তুলনা ছিল অনেক বেশি। ফলে আমার ইচ্ছাটাই অনেক ক্ষেত্রে প্রাধন্য পেত। তার উপর দাদিমা ছিল আমার সব কাজের পক্ষে।
তবে মাকে ভয়ও পেতাম খুব। সকাল হলেই ছুট দেয়ার জন্য মনটা উড়ু উড়ু করতো। নাশতাটা করতে পারলেই হতো, ছুটে বেরিয়ে যেতাম। বাড়ির পাশেই ছিল আমবাগান। যেখানে বন্ধু রাশেদকে নিয়ে গোপন আস্তানা তৈরি করেছিলাম।
বৈশাখের আম কুড়ানো ছিল সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। ভোর হতেই দাদির তৈরি করে দেওয়া সুপুরির খোলার ব্যাগ নিয়ে আম কুড়াতে বেরোনো, কালবৈশাখীর সময় গাছতলায় ছোটাছুটি ইত্যাদি মধুময় স্মৃতি এখনও মানসপটে জ্বলজ্বল করে। সবচেয়ে যে আমার চেতনায় সদা জাগ্রত সেটা আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীকে।
গ্রামের শীর্ণ নদীতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা ছিল আমার নৈমিত্তিক কাজ। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সাঁতার কাটছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম যে, একবারেই সাঁতরে নদীর ওপারে যেতে পারবো। জেদের বশবর্তী হয়ে সাঁতার দিলাম কিন্তু মাঝ নদীতে গিয়ে পড়লাম ঘূর্ণিস্রোতে। আর এগুতে না পেরে অবশেষে চিৎকার দিলাম, যা শুনে মাছ ধরতে আসা জেলেরা আমাকে উদ্ধার করে। শৈশবের এসব মধুর স্মৃতি মানসপটে এখনও অমলিন। জীবনে সবকিছু ভুলে গেলেও শৈশবের সেই মধুময় স্মৃতিগুলো কখনো ভোলার নয়।
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৬১-১৮৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৪১-১৬০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১২১-১৪০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | বোর্ড ভিত্তিক অনুবাদ ১০১-১২০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | অনুবাদ ৬১-৮০ | Onubad | PDF Download
২১. ‘প্রতিবন্ধী শিশু’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা কর।
প্রতিবন্ধী শিশু
কমল শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওর কোমর পর্যন্ত অংশে কোনো খুঁত নেই। পা ঢেকে চেয়ারে বা বিছানায় বসে থাকা অব¯’ায় দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না ওর পা দুটো বাঁকা, বিকলাঙ্গ। জন্মের সময়ই এই প্রতিবন্ধিকতা নিয়ে জন্মেছে। বিকলাঙ্গ শিশু জন্মদানের অপরাধে কমলের বাবা ওর মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ওর মা এখন অন্যের বাড়িতে বুয়ার কাজ করে, ওকে নিয়ে বস্তিতে থাকে। কমল প্রতিবন্ধি স্কুলে পড়ে।
মহল্লার মোড়ের দোকানদার সেকান্দার আলী কমলের বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দেখে মুগ্ধ হয়ে কমলের মাকে বলেছিল- ‘কমলা, তোর পুলাডারে স্কুলে দে, অয় লেখাপড়া করুক। প্রতিবন্ধীদের চাকরি -বাকরির সুবিধা আছে। সরকার প্রতিবন্ধীগোর লাইগ্যা অনেক সুযোগ সুবিধা দিতাছে। টেলিভিশনে তা প্রায়ই দেহাই।’ কমলা ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। সেকান্দার চাচার কথামতো কমলকে স্কুলে ভর্তি করে।
সেখানে কমলের মতোই শিশুরা পড়ে। শিক্ষকরাও খুব ভালো ব্যবহার করে, প্রতিবন্ধি বলে শিশুদের ঘৃণা করে না। অল্পদিনের মধ্যে কমল সবার পরিচিত হয়ে উঠে ছবি এঁকে। ভাষা আন্দোলনের মিছিলের ছবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের ছবি, মুক্তিযোদ্ধাদের জয় উল্লাসের ছবি, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ প্রভৃতি আঁকে কমল। কমলের ছবি স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে। রঙের এমন নিখুঁত ব্যবহার সে করে, দেখে খ্যাতিমান আঁকিয়েরাও অবাক না হয়ে পারেন না।
কমলের ছবি আঁকা দেখতে পারে না বলে কষ্ট পায় পুষ্পিতা। পুষ্পিতা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সবসময় কালো চশমা পড়ে থাকে। ও সব শুনে শুনে মুখস্ত করে। সাদা কাগজের উপর দিয়ে আঙুল সরিয়ে নেয় আর মুখস্ত করা কবিতা আবৃত্তি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ওদের গানের শিক্ষক স্বস্তিকা পোদ্দার সবাইকে জাতীয় সংগীত শিখিয়েছেন। পুষ্পিতা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও হারমোনিয়াম বাজিয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে পারে।
কমল, পুষ্পিতা একে অন্যের কাজে সাহায্য করে। কমলের মা কমলা ছেলেকে আর বোঝা মনে করে না। ছেলের আঁকা ছবি বাঁধাই করে বাসা বাড়িতে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। শৌখিন লোকেরা উপযুক্ত দাম দিয়ে সেগুলো কিনে নেয়।
২২. ‘শিশু নির্যাতন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো।
শিশু নির্যাতন
শিশু নির্যাতন বাংলাদেশে বেড়েই চলছে। এ নিয়ে সচেতন সমাজ— “মানবতার হাত বাড়াও, নির্যাতিতের পাশে দাঁড়াও” ¯েøাগান দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। তারা ছোটো ছোটো কাগজে এসব ¯েøাগান লিখে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে থাকে এবং তুলে ধরে এমন কিছু শিশুর গল্প যারা নির্যাতনের শিকার, এমনই একজন শিশু হচ্ছে জরিনা। ছোটোবেলায় মা-বাবা ঝগড়া করে আলাদা হয়ে যাওয়ায় আজ তার এই দশা।
খুব ছোটোবেলায় জরিনার বাবা তার মাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। তখন ছোটো জরিনাকে নিয়ে তার মা অথৈ সাগরে পড়ে। কি করবে ভেবে পায় না। জরিনার মা সিদ্ধান্ত নেয় জরিনাকে তার নানীর কাছে রেখে মানুষের বাড়িতে কাজ করবে। জরিনার বয়স যখন আট তখন তার মাও মারা যায়। জরিনার নানী জরিনাকে শহরে একজনের বাড়িতে কাজ করতে পাঠায়। কারণ জরিনার খরচ বহন করা এখন যথেষ্ট।
কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যথারীতি জরিনা শহরে কাজ করার জন্য আসে। যে বাড়িতে কাজ শুরু করে সেখানে তাকে শুরু থেকে স্বাগত জানানো হয়নি। ছোটোখাটো বিষয়ে ভুলভ্রান্তি হলে গায়ে হাত তোলা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। জরিনা তার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারতো না। একা একা বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো। একদিন বিকেলে গৃহকর্ত্রী শাড়ি ইস্ত্রি করতে দেয় জরিনাকে।
জরিনা ইস্ত্রি করতে করতে দেয় জরিনাকে। জরিনা ইস্ত্রি করতে অন্যমনস্ক হয়ে শাড়ি পুড়িয়ে ফেলে। বাড়ির গৃহকর্ত্রী খুব রেগে যায়। জরিনার উপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। মার খেতে খেতে একপর্যায়ে জরিনার হাত ভেঙ্গে যায়। বাড়ির কর্তা জরিনাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জরিনার সাথে দেখা হয় একজন মানবাধিকার কর্মীর। তিনি জরিনার গায়ে মারের চিহ্ন দেখে জরিনাকে জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে? জরিনা সব খুলে বলে।
জরিনা বলে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব অত্যাচারের কথা বলতে বলতেই হুঁ হুঁ করে কেঁদে ওঠে সে। মানবাধিকার কর্মীটি জরিনাকে তার সাথে নিয়ে যেতে চায়। জরিনার গৃহকর্তা আটকলে মানবাধিকার কর্মীটি জানান, জরিনার উপর নির্যাতনের কারণে তিনি ওই গৃহকর্তা ও গৃহকর্তীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। এরপর মানবাধিকার কর্মীটি জরিনাকে ‘শিশু সদন’ নামক আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সেখানে জরিনা অন্যান্য শিশুদের সাথে হেসে খেলে দিন কাটাতে শুরু করে।
২৩. ‘রক্তদানের পুণ্য’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
রক্তদানের পুণ্য
মহান শহীদ দিবসে শহীদ মিনারের পাদদেশে রক্তদান কর্মসূচি চলছে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে ডা. জাওয়াদ সেখানে। উপস্থিত হলেন। সেখানে দেখলেন অ¯’ায়ী ক্যাম্প তৈরি করে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি সংগঠন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। ডা. জাওয়াদ এ সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি পাঁচবার স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন।
ডা. জাওয়াদের স্বেচ্ছায় রক্তদানের শুরুটা ছিল অন্যরকম। এখনো তার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে প্রথম রক্তদানের ঘটনা। তখন ডা. জাওয়াদ ফাইনাল সেমিস্টারের ছাত্র। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হোস্টেল থেকে বের হতেই পেছন থেকে কেউ একজন ডাক দিলো, ‘বাবা শুনছ’। পেছন ফিরতেই চোখে পড়ল পঞ্চাশোর্ধ্ব এক মহিলা।
উদ্ভ্রান্তের মতো চোখ, একটি মলিন শাড়ি পরা মহিলাটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কোনো অজানা বেদনায় বুকে পাথর চাপা দিয়ে আছে। চোখে মুখে সেই বেদনার ছাপ স্পষ্ট। ঘুরে দাঁড়াতেই মহিলাটি দ্রæত পায়ে ব্যস্তভাবে ডা. জাওয়াদের দিকে এগিয়ে এলো। জাওয়াদ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বলে উঠল, “বাবা, আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তার বলেছে যত দ্রæত সম্ভব রক্তের ব্যবস্থা করতে। কোথায় যাব? কী করব? কিছুই বুঝতে পারছি না।
একজন বলল ওই হোস্টেলের গেটে গিয়ে খোঁজ করেন। অনেক ছাত্রই রক্ত দেয়। কিন্তু সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ রাজি হচ্ছে না। ছেলেটা আমার লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত, রক্ত দিতে না পারলে বাঁচবে না…” বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল মহিলাটি। ডা. জাওয়াদ জিজ্ঞেস করলো, “কোন গ্রুপের রক্ত লাগবে?” মহিলাটির সরল উত্তর, “এ নেগেটিভ।” ডা. জাওয়াদের রক্তের গ্রুপ ‘এ নেগেটিভ।’
কিন্তু তিনি কখনো রক্ত দেননি। আর তাছাড়া একটু পরেই তার পরীক্ষা শুরু হবে। মহিলাটির মলিন মুখ দেখে তার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মনে মনে ভাবেন, ‘আমার যদি এমন হতো তাহলে আমার মা-ও তো এভাবে ছুটে বেড়াতেন। যদি মা এভাবে ঘুরে রক্তের ব্যবস্থা করতে না পারেন তাহলে মায়ের মনের হাহাকার কে শুনবে?’ ভাবতেই চোখের কোণে অশ্রæ জমে যায় ডা. জাওয়াদের। মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নেন তিনি মহিলার সাথে রক্ত দিতে যাবেন।
রক্ত দিয়ে একটি রিকশা নিয়ে পরীক্ষার হলের উদ্দেশ্যে রওয়া দিলেন তিনি। চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছিল রক্ত যোগাড় করতে পারার আনন্দে তৃপ্ত একজন মায়ের মুখ। পরীক্ষার হলে যতক্ষণে পৌঁছলেন ততক্ষণে একঘণ্টা শেষ। হলে ঢুকতেই দায়িত্বরত শিক্ষক বললেন, “পরীক্ষার হলে আসতে এত দেরি কেন?” ডা. জাওয়াদ শিক্ষককে সব খুলে বললেন। শিক্ষক সব শুনে খাতা দিলেন আর বললেন, “তুমি তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দেবে।
প্রয়োজনে আমি একাই তোমার পরীক্ষা নেব।” সেদিন থেকে ডা. জাওয়াদ সিদ্ধান্ত নিলেন নিয়মিত রক্ত দেবেন। শহীদ মিনারের পাদদেশে রক্তদান কর্মসূচিতে দেখলেন স্বেচ্ছায় রক্তদানের জন্য দীর্ঘ লাইন। ডা. জাওয়াদের চোখে একটা আনন্দের ঝিলিক খেলা করে গেল । মনে ভেসে উঠল অসংখ্য মায়ের মুখ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।