ইফতারির ফজিলত ও ইফতারির সময় ।। এইচ বি ফিরোজ।। ইফতার:ইফতার অর্থ সাওম ত্যাগ করা। পরিভাষায়,সাওম (রোজা) ভাঙ্গা/ছাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে যে হালাল খাদ্য গ্রহণ করা হয় তাকে ইসলামী পরিভাষায় ইফতার বলা হয়। রোযাদারকে ইফতার করানোর ফযীলত: এই পবিত্র রমযানুল মুবারকের অন্যতম দান হলো ইফতার।
রসূল (স:) বলেন- কেউ যদি রমযান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ওই ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের কারণ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে একটি রোজার সওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর নেকী মোটেই কমানো হবে না। সাহাবীরা বলেন, হে আল্লাহর রসূল (স:) আমাদের এমন সামর্থ নেই যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি।
তিনি (স:) বলেন, আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন, যে ব্যাক্তি কোন রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে।
আর যে ব্যাক্তি কোনো রোযাদারকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার “হাউজে কাওছার” থেকে এমন ভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে না পৌছানো পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (মেশকাত)
কোন খাবার দারা ইফতার শুরু করবে:
সালমান ইবনে আমের আদ-দাব্বি (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স:) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে তখন তার খুরমা খেজুর দিয়ে ইফতার করা উচিত। তবে যদি সে খুরমা খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ, পানি পবিত্র। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: “রোজাদারকে ইফতার করানো দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- তাকে পেট ভরে তৃপ্ত করানো।”[আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা-১৯]
ইফতারির ফজিলত ও ইফতারির সময়
সলফে সালেহিন খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলেন এবং তাঁরা এটাকে মহান ইবাদত মনে করতেন।
জনৈক সলফে সালেহিন বলেছেন: “দশজন সাথীকে দাওয়াত দিয়ে তাদের পছন্দসই খাবার খাওয়ানো আমার কাছে দশজন গোলাম আজাদ করার চেয়ে প্রিয়।”
সলফে সালেহিনের অনেকে নিজের ইফতার অন্যকে খাওয়াতেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- ইবনে উমর, দাউদ আল-তাঈ, মালিক বিন দিনার, আহমাদ ইবনে হাম্বল। ইবনে উমর এতিম ও মিসকীনদের সঙ্গে না নিয়ে ইফতার করতেন না।
সলফে সালেহিনদের কেউ কেউ তাঁর নিজের ইফতার তার সঙ্গী সাথীদেরকে খাওয়াতেন এবং নিজে তাদের খেদমত করতেন। এদের মধ্যে অন্যতম- ইবনুল মুবারক।
- আরো পড়ুন: কঠিন ৭০ টি বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
- আরো পড়ুন: সানা বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ আরবী
- আরো পড়ুন: তারাবির নামাজ কত রাকাত, নামাজের নিয়ম ও দোয়া
আবু সাওয়ার আল-আদাওয়ি বলেন: বনি আদি গোত্রের লোকেরা এই মসজিদে নামায পড়ত। তাদের কেউ কখনো একাকী ইফতার করেনি। যদি তার সাথে ইফতার করার জন্য কাউকে সাথে পেত তাহলে তাকে নিয়ে ইফতার করত। আর যদি কাউকে না পেত তাহলে নিজের খাবার মসজিদে নিয়ে এসে মানুষের সাথে খেত এবং মানুষকেও খেতে দিত।
ইফতারির সময়
সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা সুন্নত এবং সূর্যান্তের আগে ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকা মুস্তাহাব। অনেক সময় দেখা যায় আমরা ইফতারি তৈরিতে ব্যাস্ত হয়ে পরি তখন একটু দু’আ করার সময়ও পাই না।
অথচ নবী করীম (স:) বলেন, “তিন ব্যাক্তির দু’আ অগ্রাহ্য করা হয় না, কবুল করা হয়; পিতার দু’আ, রোযাদারের দু’আ এবং মুসাফিরের দু’আ। আল্লাহর রসূল (স:) বলেন, লোকেরা ততক্ষন কল্যাণে থাকবে যতক্ষন তারা জলদি ইফতার করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন- আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্দা যে ইফতার সঠিক সময়ে করে। (তিরমিযি)
সমস্ত নাবীদেরও স্বভাব ছিল ইফতারে দেরী না করা। (তাবরানী, মাজমাউজ.যাওয়ায়িদ ২/১০৫পৃঃ) এ হাদীসগুলো প্রমান করে যে, ইফতারের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরী করা মোটেই উচিত নয়।
যদি কেউ ইচ্ছা করে ইফতারে দেরী করে তাহলে সে রসূল (স:)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আল্লাহর নিকট অপ্রিয় হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
রোযাদারের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্যই প্রিয় নবী (স:) দেরি করে সাহরী ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইফতারের এ বিধান ইসলাম ধর্মেরই অনন্য বৈশিষ্ট। ইফতারে ভ্রাতৃত্ববোধ, অন্তর নিঃসৃত ভালোবাসার ছোঁয়া এবং আধ্যত্মিক ভাবের যে প্রতিফলন ঘটে, তা সত্যিই অতুলনীয়।
চলবে…..
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।