অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি): অধ্যায় ৫.১ : প্লেটো, এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.১ : প্লেটো
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. প্লেটোর পরিচয় দাও ।
অথবা, প্লেটো সম্পর্কে তুমি যা জান সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর রাষ্ট্র ব্যবস্থার অগ্রগতির ইতিহাসে যেসব দার্শনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে অনন্য সাধারণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো (Plato) ছিলেন অন্যতম। প্লেটো ছিলেন গ্রিক চিন্তাবিদ সক্রেটিসের একনিষ্ঠ শিষ্য। তাই প্লেটোর চিন্তাধারায় সক্রেটিসের প্রভাব সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত। রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে মৌলিক অবদানের জন্য প্লেটোর নাম সর্বজনবিদিত ।
প্লেটোর পরিচয় : দর্শনের ইতিহাসে প্লেটো ৪২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম নগররাষ্ট্র এথেন্সের আইগিনী দ্বীপে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম এরিস্টন। তিনি বিখ্যাত ‘কোডরাস’ বংশোদ্ভূত ।
প্লেটোর মাতা পেরিস্টিওন এথেন্সের আইনপ্রণেতা সোলোনের বংশধর ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই তার পিতা মারা গেলে প্লেটোর মাতা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্লেটো শিশুকালে অত্যন্ত আদর যতœ ও স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যমেই সৎপিতার বাড়িতে বড় হন । এখানে অ্যাডিয়া ইম্যানটাস ও গ্লুকোন নামে তার দুই ভাই এবং পেটোন নামে এক বোন ছিল।
গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ‘প্লেটো’ নামটি সগৌরবে উচ্চারিত হলেও এটি তার প্রকৃত নাম ছিল না। তার প্রকৃত তথা পারিবারিক নাম ছিল ‘এরিস্টোক্লেস’। সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুঠাম দেহের জন্য তিনি ‘প্লেটো’ নামে পরিচিত হন এবং পরবর্তীতে এটিই তার আসল নাম হয়ে দাঁড়ায় সুদর্শন ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী যুবক প্লেটো সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন।
খেলাধুলার প্রতিও তার আগ্রহ ছিল অনেক। জিমন্যাস্টিকসে অংশগ্রহণ করে প্লেটো দু দুবার দূর পাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতায় সাফল্যের মুকুট অর্জন করেন। তৎকালীন এথেন্সের অভিজাত গোষ্ঠীর নেতা ক্রিটিমাস ছিলেন প্লেটোর কাকা।
ক্রিটিমাস ছিলেন এথেন্সের স্বৈরাচারীর একজন। এ সময় কাকা ক্রিটিয়াস এর প্রভাব এবং এথেন্সের গণতান্ত্রিক শাসনের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও বিশৃঙ্খলা প্লেটোকে রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে এসেছিল । শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবান শিক্ষার প্রভাবে এক নতুন জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ হন।
কিন্তু গণতন্ত্রের যাঁতাকলে পড়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সক্রেটিসের বিচার ও প্রাণদণ্ড প্লেটোকে অত্যন্ত মর্মাহত করে তোলে। এ সময় প্লেটোর বয়স ছিল ২৮ বছর। শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের করুণ পরিণতি প্লেটোকে তৎকালীন গণতান্ত্রিক শাসন ও শাসকের প্রতি বিদ্বেষী করে তোলে আর গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি এরূপ বিদ্বেষই প্লেটোকে তার আদর্শ রাষ্ট্রের সন্ধানে ব্রতী করে তোলে।
যদিও তৎকালীন গণতান্ত্রিক নেতারা প্লেটোর এরূপ বিদ্বেষ ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। এমতাবস্থায় প্লেটো ৩৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিসিলি ও ইতালি যান। এখানে পিথাগোরাস এবং জ্যামিতিক জ্ঞানের সাথে প্লেটোর পরিচয় হয়।
এ সময়ই প্লেটো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ”The Republic’ এ বর্ণিত শিক্ষাতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। অতঃপর ৩৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্সে ফিরে এসে শিক্ষা কেন্দ্র একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। এই একাডেমিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় প্লেটোর বিদ্যাচর্চা ও শিক্ষা কেন্দ্র। এখানে তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর জ্ঞান চর্চা করেন এবং বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। সর্বোপরি ৩৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৮০ বছর বয়সে প্লেটো মৃত্যুবরণ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অত্যন্ত অভিজাত বংশে জন্মগ্রহণ করেও প্লেটো রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক অনন্য নাম । রাষ্ট্রদর্শনের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তার বিচরণ ছিল না। বিশেষ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়নে, শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং শারীরিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্লেটোর অবদান অবিস্মরণীয়।
০২ প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা বর্ণনা কর ।
অথবা, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যে কয়জন দার্শনিক উজ্জ্বল মহিমায় মহিমান্বিত তাদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো অন্যতম। প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার মূলভিত্তি ছিল রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের মানুষের উত্তম জীবনযাপন করা।
এর মাধ্যমে প্লেটো তৎকালীন গ্রিক সমাজে বিদম্যান পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়, অবিচার ও কুশাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে তার “The Republic’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো বা সংগঠনের কথা উল্লেখ করেন
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা : ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো বিশ্লেষণে মানবাত্মাকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে এগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
ক. প্রজ্ঞা বা যুক্তিবোধ : প্রজ্ঞা বা যুক্তিবোধের মাধ্যমে মানুষ শিখে ও জানে। যেহেতু মানুষ জানতে শিখে সেহেতু সে ভালোবাসতেও প্রস্তুত হয়। আর বুদ্ধিমত্তার সাথে কোনো জটিল বিষয়ও সফলতার সাথে বিশ্লেষণ করতে পারে। এজন্যই প্রজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খ. বিক্রম বা সাহস : সাহস বা বিক্রম মানবাত্মার একটি বিশেষ দিক। এর মাধ্যমে মানুষ যুদ্ধে অনুপ্রাণিত হয়। যা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
গ. ক্ষুধা বা ভোগস্পৃহা : ক্ষুধা বা প্রবৃত্তি মানবাত্মার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। যার মাধ্যমে মানুষকে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। প্লেটো মানবাত্মার এই তিনটি উপাদানের সাথে সংগতি রেখে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য তিনি সমাজে তিনটি শ্রেণি প্রত্যক্ষ করেন । যথা :
১. দার্শনিক রাজা বা অভিভাবক শ্রেণি (Philosopher king or Guardian class),
২. যোদ্ধা শ্রেণি (Warrior class) ও
৩. উৎপাদক শ্রেণি ( Producing class)
নিম্নে এ তিন শ্রেণির কাজ বর্ণনা করা হলো-
১. দার্শনিক রাজা বা অভিভাবক শ্রেণি প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোতে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, শাসনকর্তা একজন দার্শনিক রাজার হাতে ন্যস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি আরও বলেন, “যে পর্যন্ত না দার্শনিকরা শাসক হচ্ছেন কিংবা যারা
শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে দর্শনের মিল সাধিত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো আশা নেই।”
২. যোদ্ধা শ্রেণি : আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোর এ পর্যায়ে প্লেটো যোদ্ধা শ্রেণিকে দ্বিতীয় স্থানে আসীন করেছেন। এদের স্থান হবে দর্শনিক রাজার পরপরই। এক্ষেত্রে সাহসী ও দৈহিক বলে বলিয়ান ব্যক্তিগণ এই শ্রেণির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এদের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান ও স্বাধীনতা রক্ষা করা।
৩. উৎপাদক শ্রেণি প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোর তৃতীয় স্তরে রয়েছে উৎপাদক শ্রেণি। এদের প্রধান কাজ হলো দার্শনিক রাজা ও যোদ্ধা শ্রেণির প্রয়োজন মিটানো। আর রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন তার যোগান দিবে উৎপাদক শ্রেণি। মানবাত্মার সর্বনিম্ন স্তরে যেমন ক্ষুধা তেমনি রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন স্তরে উৎপাদক শ্রেণির স্থান ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোকে বাস্তবে রূপদান করা অসম্ভব। কেননা প্লেটো নিজেই বলেছেন তার এই আদর্শ রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন একমাত্র স্বর্গ রাজ্যেই সম্ভব, পার্থিব জগতে নয়। তাই প্লেটোর এই আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণাটিকে অনেকে নিছক কল্পনা ও শ্রেণিবৈষম্যের পথপ্রদর্শক বলে অভিহিত করেছেন।
অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDFফ্রি)অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত MCQ
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
০৩. প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
অথবা, প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা রিপাবলিক’-এ দার্শনিক রাজা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। প্লেটোর মতে, যিনি সর্বোত্তম জ্ঞানের অধিকারী এবং যিনি বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে তার যুক্তি ও জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম তিনিই হচ্ছেন দার্শনিক।
প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের শাসনভার এই দার্শনিক রাজার হাতেই অর্পণ করেন তার মতে, অত্যধিক জ্ঞানী, বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন এবং শাসন করার অধিকারী দার্শনিকই হবেন আদর্শ রাষ্ট্রের জনক।
প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন : প্লেটো বর্ণিত দার্শনিক রাজা একজন পূর্ণবান ব্যক্তি পারিবারিক জীবন তার জন্য নিষিদ্ধ । তিনি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে বসবাস করবেন। সরকারি অর্থে তাদের ভরণপোষণ চলবে। বৈবাহিক সম্পর্কের অনুপস্থিতির ফলে দার্শনিক রাজার কোনো আত্মীয়স্বজন থাকবে না। কাজেই রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই তার আপনজন বলে বিবেচিত হবে।
এ ধরনের নাগরিকদের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনাকেই প্লেটো দার্শনিক রাজার শাসন বলে অভিহিত করেছেন। দার্শনিক রাজার শাসনব্যবস্থায় কোনো আইন থাকবে না । শাসক তার ন্যায়পরায়ণতা ও বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন। সর্বোপরি তিনি তার দার্শনিক জ্ঞানের মাধ্যমে সামাজিক বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করে রাষ্ট্রীয় কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত থাকবেন।
প্লেটো আরও বলেন, রাজা হওয়ার আগে আদর্শ রাষ্ট্রের চিত্র সম্পর্কে দার্শনিক রাজা একটি সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করে নেবেন, যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কেবল স্বর্গরাজ্যে সম্ভব। এ ধারণা অনুযায়ী দার্শনিক রাজা আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।
অর্থাৎ ধারণা ও বাস্তবের মধ্যে তিনি সংগতিবিধান করবেন। প্রাচুর্য ও দরিদ্র যাতে পাশাপাশি অবস্থান করতে না পারে দার্শনিক রাজা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আদর্শ রাষ্ট্রের আয়তন যাতে খুব বড় বা ছোট না হয় দার্শনিক রাজা সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকবেন।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাবেন এবং এটি লঙ্ঘিত হলে তিনি তা সংশোধন করে দেবেন। অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণতার লঙ্ঘন দার্শনিক রাজা সহ্য করবেন না। প্লেটোর ধারণা ছিল রাষ্ট্র যদি ন্যায়বান ও প্রজ্ঞাবান শাসক দ্বারা
পরিচালিত হয় তাহলে গতানুগতিক আইনের কোনো প্রয়োজন হয় না। তার মতে, “শাসক যদি হয় ন্যায়পরায়ণ আইন তাহলে নিষ্প্রয়োজন, আর শাসক যদি হয় দুর্নীতিপরায়ণ আইন সেখানে নিরর্থক।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো সমকালীন গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোতে যে অশুভ শক্তির আধিপত্য লক্ষ করেছিলেন তার হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভের উদ্দেশ্যে তিনি আদর্শ রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও জ্ঞানকে একীভূত করেছেন।
তার মতে, যতদিন না দার্শনিকরা রাজা হচ্ছেন অথবা রাজা ও রাজপুত্ররা দর্শনের ক্ষমতা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ও জ্ঞান এক বিন্দুতে মিলিত না হচ্ছে ততদিন অশুভ শক্তির হাত থেকে দেশ মুক্তি পাবে না।
০৪. প্লেটোর দার্শনিক রাজার গুণাবলি উল্লেখ কর।
অথবা, প্লেটোর দার্শনিক রাজার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করে তার শাসনভার কার ওপর ন্যস্ত করবেন সে ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি তার আদর্শ রাষ্ট্রের শাসনভার দার্শনিক রাজার ওপর ন্যস্ত করেন।
তার মতে, যিনি সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী এবং যিনি বৈজ্ঞানিক প্রমাণসাপেক্ষ তার যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম তিনিই দার্শনিক রাজা । যার ফলে দার্শনিক রাজাই পারেন সৎ ও মহৎ নাগরিক গড়ে তোলার মাধ্যমে আদর্শ রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করতে ।
প্লেটোর দার্শনিক রাজার গুণাবলি : নিম্নে প্লেটো বর্ণিত দার্শনিক রাজার অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো—
১. প্রজ্ঞাবান : প্লেটো বর্ণিত দার্শনিক রাজা হলেন সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী এবং প্রজ্ঞাবান । তিনি হবেন সত্যের উপাসক, সুন্দরের পূজারি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সদাসর্বদা প্রস্তুত থাকবেন । যা দার্শনিক রাজার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
২. পরিবার বর্জিত : প্লেটোর দার্শনিক রাজার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরিবার বর্জিত দার্শনিক রাজা। দার্শনিক রাজা কখনও পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে পারে না কেননা পারিবারিক মায়ামমতা তথা স্ত্রী সন্তানদের প্রতি মায়া দার্শনিক রাজাকে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারে।
৩. যুক্তিবাদিতা : দার্শনিক রাজার অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তিবাদী চিন্তাচেতনা। প্লেটোর মতে, দার্শনিক শুধুমাত্র জ্ঞানের অধিকারীই নন তিনি বৈজ্ঞানিক প্রমাণে তার জ্ঞানকে যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করেন ।
৪. তীক্ষ্ণ মেধাশক্তিসম্পন্ন : প্লেটোর মতে, দার্শনিক রাজা শুধুমাত্র প্রজ্ঞাবান ও যুক্তিবাদীই নন তিনি তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন একজন ব্যক্তি। তাই রাষ্ট্রীয় যেকোনো সংকটাপন্ন মুহূর্তে সে সমস্যার সমাধানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৫. কুসংস্কারমুক্ত : দার্শনিক রাজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি হলেন সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে মুক্ত। কারণ দার্শনিকরা হলেন প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ফলে তাদের মধ্যে কোনো প্রকার কুসংস্কার থাকতে পারে না ।
পার্থিব লোভলালসা মুক্ত : প্লেটো তার দার্শনিক রাজাকে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন । যার ফলে তারা সকল প্রকার লোভলালসা থেকে মুক্ত থেকে সততা …ও নিষ্ঠার সাথে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি পরিচালনায় সচেষ্ট থাকেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো বর্ণিত দার্শনিক রাজার উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান। দার্শনিক রাজার মধ্যে উত্তম শাসকের সকল প্রকার গুণাবলি বিদ্যমান থাকায় প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের শাসনভার দার্শনিক রাজার হাতে অর্পণ করেছেন। এজন্য তিনি যথার্থই বলেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত দার্শনিকরা রাজা না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রগুলো অন্যায় থেকে পরিত্রাণ পাবে না।
০৫. কী কারণে প্লেটো দার্শনিক রাজার শাসন সমর্থন করেছেন?
অথবা, প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে দার্শনিক রাজার শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তার ন্যায়বিচার ও আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কিত আলোচনায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছেন যে, শাসনের ক্ষমতা একমাত্র দার্শনিকের হাতে ন্যস্ত থাকবে।
প্লেটো বলেন, যে পর্যন্ত দার্শনিকেরা তাদের দেশের শাসক না হচ্ছে অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে দর্শনের মিলন না হচ্ছে ততক্ষণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে
মুক্তির কোনো আশা নেই। তাই প্লেটো আদর্শ রাষ্ট্রে দার্শনিক রাজার শাসনকে কামনা করেছেন ।
প্লেটো কর্তৃক দার্শনিক রাজার শাসন সমর্থনের কারণ :
প্লেটো দার্শনিক রাজার শাসনের জন্য বেশকিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন নিম্নে তা আলোচনা করা হলো—
১. আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা : প্লেটোর স্বপ্ন ছিল আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দার্শনিক রাজা ব্যতীত অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে পারেননি। কারণ প্লেটোর দার্শনিক রাজাই ছিল আদর্শ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। তাই তিনি শাসনের ক্ষেত্রে দার্শনিক রাজাকে প্রয়োগ করতে চেয়েছেন ।
২. প্রকৃত ও জ্ঞানী শাসক : প্লেটোর মতে, দার্শনিক রাজাকে জ্ঞানী হতে হবে। তিনি রাষ্ট্রে প্রকৃত শাসক হবেন। দার্শনিক শাসক হচ্ছে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র ধারণার জন্য অনুসিদ্ধান্ত।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে জ্ঞানী শাসকের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মতে, জ্ঞানীরা উত্তম ও প্রকৃত শাসনের জন্য যোগ্য। এজন্য তিনি দার্শনিক রাজার শাসনকে কামনা করেছেন।
৩. ব্যক্তিগত সুখ বিসর্জন : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে দার্শনিক রাজার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি ও পরিবার থাকবে না। তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে সব ধরনের সুখ শান্তি বিসর্জন দিবেন। রাষ্ট্র ও নাগরিকের সেবায় তিনি আত্মনিয়োগ করবেন। তাই প্লেটো দার্শনিক রাজার শাসনের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
৪. অভিজাতকেন্দ্রিক মনোভাব : প্লেটো অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাই তার ধ্যানধারণা সম্পূর্ণ অভিজাতদের শাসনব্যবস্থার পক্ষে রায় দিয়েছে। দার্শনিকরা অনেকাংশে অভিজাত হওয়ায় তিনি শাসনব্যবস্থায় দার্শনিকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।
৫. সদগুণ ও নম্রতার প্রতীক : দার্শনিক প্লেটোর মতে, দার্শনিক রাজা হবেন সদগুণে গুণান্বিত ও নম্রতার প্রতীক। যেহেতু প্রজ্ঞা, গুণ একজন দার্শনিক রাজার মধ্যে বিদ্যমান তাই দার্শনিক রাজাই সুন্দরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করার যোগ্য। তাই প্লেটো দার্শনিক রাজার শাসনকে কামনা করেছেন।
৬. আইনের অপ্রয়োজনীয়তা : প্লেটোর দার্শনিক রাজা ন্যায় ও যুক্তির দ্বারা পরিচালিত। দার্শনিক রাজা নিজ জ্ঞানে ন্যায়বিচার সম্পন্ন করবেন । অতএব এখানে আইনের কোনো দরকার নেই । দার্শনিক রাজার এ ন্যায়সংগত কারণে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের জন্য দার্শনিক রাজার শাসনকে কামনা করেছেন ।
৭. ছনিয়ন্ত্রিত শক্তি : দার্শনিক প্লেটোর মতে দার্শনিক রাজা হবেন যুক্তিবোধ বা প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তি। প্রজ্ঞা একটি স্বনিয়ন্ত্রিত শক্তি হওয়ায় একে বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণের দরকার হয় না। দার্শনিক রাজার এ স্বনিয়ন্ত্রিত শক্তি রয়েছে বলেই প্লেটো দার্শনিক রাজাকে শাসনের জন্য যোগ্য মনে করেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো প্রদত্ত আদর্শ রাষ্ট্রে দার্শনিক রাজাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। প্লেটোর মতে, দার্শনিক রাজাই পরিপূর্ণ ও উত্তম জ্ঞানের অধিকারী।
সুতরাং জ্ঞানই যদি পুণ্য হয় তবে যিনি পুণ্যবান তিনি হলেন জ্ঞানের অধিকারী দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক। তাই রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি তার ওপর ন্যস্ত থাকবে। আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একমাত্র দার্শনিক রাজার পক্ষে সম্ভব। আর একারণে প্লেটোর দার্শনিক রাজার তথ্যটি তৎকালে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে
০৬. “প্লেটোর দ্যা রিপাবলিক সর্বাত্মকবাদের নীল নকশা”— আলোচনা কর।
অথবা, “প্লেটোর দ্যা রিপাবলিককে সর্বাত্মকবাদের নীল নকশা” বলা হয় কেন?
উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব মনীষী জ্ঞানের মহিমায় চিরভাস্বর হয়ে আছেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তাদের মধ্যে অন্যতম। প্লেটো তার জীবদ্দশায় যে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন তার মধ্যে ঞযব জবঢ়ঁনষরপ’ অন্যতম।
তার এই বিখ্যাত গ্রন্থের মাধ্যমে আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো তথা ন্যায়বিচার, সাম্যবাদ, শিক্ষা ও দার্শনিক রাজার শাসন বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। মূলত প্লেটো ছিলেন গণতন্ত্রের ঘোরবিরোধী একজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ।
প্লেটোর দ্যা রিপাবলিক ‘সর্বাত্মকবাদের নীল নকশা’ কি না :
আধুনিক যুগে প্লেটো একজন সর্বাত্মকবাদী দার্শনিক এবং তার ‘The Republic’ গ্রন্থকে সর্বাত্মকবাদের নীল নকশা বলে অভিহিত করা হয়।
নিম্নে প্লেটোর দ্যা রিপাবলিক ‘সর্বাত্মকবাদের নীল নকশা’ বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলো-
১. শ্রেণিস্বার্থ প্লেটো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের যে তিন শ্রেণির কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে দার্শনিক রাজাই ছিলেন স্বাধীনচেতা ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
উৎপাদক শ্রেণির স্বার্থ এখানে সংরক্ষিত হয় না। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের সুখের চেয়ে দার্শনিক রাজার সুখটাই প্লেটোর কাছে বড় ছিল, যা সর্বাত্মকবাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
২. রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্যক্তি স্বার্থের অপেক্ষা রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতিকে বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন, যা সর্বাত্মকবাদের নামান্তর মাত্র। এ মতবাদে বলা হয়, “Everything is for the state, nothing beyond the state, everything above the state. ”
৩. ন্যায়তত্ত্ব : প্লেটো তার দ্যা রিপাবলিক গ্রন্থের অনেকাংশ জুড়ে যে ন্যায়তত্ত্বের বর্ণনা দিয়েছেন তা তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এরিস্টটলের মতে, প্লেটোর ন্যায়তত্ত্বের বলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে, যা আধুনিক যুগে সর্বাত্মকবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ।
৪. সর্বাত্মকবাদী শিক্ষাব্যবস্থা : প্লেটো তার “The Republic’ গ্রন্থে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত যে শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন তা সমাজের সকল শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য ছিল না তার শিক্ষাব্যবস্থায় ছিল সংগীতের অভূতপূর্ব সমাহার এবং ব্যয়বহুল। যা সমাজের অভিজাত শ্রেণির জন্যই প্রযোজ্য ছিল। কাজেই এই ব্যবস্থাকে সর্বাত্মকবাদী বলে মনে করা হয়।
৫. দার্শনিক রাজা : প্লেটো তার ”The Republic’ গ্রন্থে যে দার্শনিক রাজার বর্ণনা দিয়েছেন তা ছিল সর্বাত্মকবাদী শাসনব্যবস্থার নায়ক। দার্শনিক রাজা যা বলবে তাই আইন। তিনি কোনো আইনের বেড়াজালে সীমাবদ্ধ নন তাই অনেকে একে স্বৈরশাসনের পথপ্রদর্শক বলে অভিহিত করেছেন ।
৬. গণতন্ত্রকে উপেক্ষা : প্লেটো গণতন্ত্রকে মূর্খ ও অযোগ্যতার শাসন বলে অভিহিত করেন। তার মতে, গণতন্ত্রের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি হলো উপভোগের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা যার ফলে স্বাধীনতা বিপর্যস্ত হয়। গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর এই ধারণা থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, প্লেটো ছিলেন একজন সর্বাত্মকবাদী দার্শনিক।
৭. সম্পত্তির উচ্ছেদ : প্লেটো তার ”The Republic’ গ্রন্থে শাসক শ্রেণির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও পরিবার প্রথার বিলোপ সাধনের কথা বলেন যা মানব মনের চিরন্তন সত্যকে অস্বীকার করে। তাই অনেক সমালোচক শাসক শ্রেণির ব্যক্তিগত জীবনের স্বাধীনতা হরণকে সর্বাত্মকবাদের নামান্তর বলে অভিহিত করেছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো তার অমর গ্রন্থ ”The Republic’ এ আদর্শ রাষ্ট্রের যেসব প্রত্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মতানুসারে তা ফ্যাসিবাদ, সর্বাত্মকবাদ তথা একনায়কতন্ত্রকেই উৎসাহ প্রদান করে।
প্লেটো ব্যক্তিকে সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্রের দাসে পরিণত করেছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, প্লেটোর রিপাবলিক সর্বাত্মকবাদের তথা একনায়কতন্ত্রের নীল নকশা।
০৭. প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা কি কাল্পনিক? সংক্ষেপে লেখ ।
অথবা, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণাকে তুমি কি কাল্পনিক মনে কর?
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো তার কালজয়ী সৃষ্টি ঞযব জবঢ়ঁনষরপ’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা অঙ্কন করেন। প্লেটো তৎকালীন গ্রিক নগররাষ্ট্রের সামাজিক অবস্থার পরিমার্জিত, পরিকল্পিত, সংযত ও সমন্বিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা উপস্থাপন করেন।
তিনি মূলত, মানুষদেরকে ন্যায়বিচারে উদ্বুদ্ধ করতেই তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা উপস্থান করেন । প্লেটোর উন্নত জীবনই হচ্ছে আদর্শ রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা কাল্পনিক কি না : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা বিশ্লেষণ করলে এটিকে বর্তমান কালের প্রেক্ষাপটে অনেকটাই অবাস্তব বা কাল্পনিক হিসেবে অভিহিত করা হয় নিম্নে কাল্পনিক হিসেবে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-
১. মানবপ্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে অভিভাবক শ্রেণির জন্য পরিকল্পিত সাম্যবাদের কথা বলেন যা মানবপ্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করে। তাই অনেকে একে বাস্তবের সাথে সম্পর্কহীন ও কাল্পনিক ধারণা হিসেবে মনে করেন ।
২. সংবিধানের অনুপস্থিতি : প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কোনো সংবিধান ছিল না। এখানে দার্শনিক রাজার অনুশাসনকেই আইন হিসেবে মনে করা হয়। অথচ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস সংবিধান ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই পরিচালিত হতে পারে না। এজন্যই প্লেটোর এ ধারণাকে কাল্পনিক বলে মনে করা হয় ।
৩. পারিবারিক ও বৈবাহিক সম্পর্ক উচ্ছেদ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের অভিভাবক শ্রেণির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও বৈবাহিক সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করেছেন কিন্তু আধুনিককালে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদকে অনৈতিক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থি হিসেবে মনে করা হয় ।
৪. কল্পনাবিলাস: অনেকে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো কল্পনাবিলাসী হিসেবে মনে করেন। অধ্যাপক জেনেটের মতে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন বর্তমান বিশ্বে অসম্ভব।
৫. বাস্তবের সাথে সম্পর্কহীন : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তর করা অসম্ভব। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গেলে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। ডব্লিউ. এ. ডানিং এই আদর্শ রাষ্ট্রকে নিছক রোমাঞ বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
৬. অভিজ্ঞতাতান্ত্রিক : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অভিজ্ঞদের পক্ষপাতিত্ব করেছেন। তিনি তার আদর্শ রাষ্ট্রের সাধারণ লোকের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ দেননি। তাই গ্লুকন এটিকে শূকরের রাষ্ট্র’ (City of the pigs) বলে বিদ্রুপ করেছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের যে গঠন কাঠামো ও কার্য পরিধির বর্ণনা করেছেন তা বাস্তবের সাথে সংগতিপূর্ণ কি না তা বিবেচ্য বিষয় অর্থাৎ আদর্শ রাষ্ট্র কীরূপ হওয়া উচিত,
প্লেটো সেই চিন্তাই করেছেন। কেননা প্লেটো নিজেই বলেছেন, তার বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্র “একমাত্র স্বর্গেই সম্ভব, পার্থিব জগতে নয়। তাই আমরা বলতে পারি, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো একটি কাল্পনিক ধারণা।
০৮. প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার স্তরগুলো কী কী?
অথবা, প্লেটো বর্ণিত শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন কারিকুলাম উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো কল্পিত আদর্শ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হলো শিক্ষাব্যবস্থা। প্লেটো তার কালজয়ী সৃষ্টি ‘ঞযব জবঢ়ঁনষরপ’ গ্রন্থে প্রজ্ঞাবান দার্শনিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক মহান ও যুগান্তকারী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। মানবপ্রকৃতি গঠন এবং সুসংবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের সহায়ক হিসেবে বিশ্বনন্দিত এই দার্শনিক শিক্ষার ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেন।
প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার স্তরসমূহ : মানবজীবনের বয়সের স্তরভেদে প্লেটো শিক্ষাব্যবস্থাকে ২ ভাগে বিভক্ত করেন। যথা :
ক. প্রথমিক শিক্ষা এবং খ. উচ্চতর শিক্ষা । প্রাথমিক শিক্ষা : প্লেটো প্রাথমিক শিক্ষাকে আবার ২টি ভাগে ভাগ করেছেন । যথা :
১. প্রথম ভাগ : প্লেটোর মতে, প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম ভাগ হলো শৈশব থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। এ সময়ে শিশুর মানসিক বৃত্তিগুলো সুষ্ঠু বিকাশ এবং নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করে। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষার এ স্তরে শিশুকে গণিত, সংগীত ও সাহিত্য শিক্ষা দেওয়া হবে। যার মাধ্যমে জনসাধারণ আত্মসংযম, শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করতে সক্ষম হয়।
২. দ্বিতীয় ভাগ : প্লেটো ১৮-২০ এই দু’বছর শরীর ও সামরিক শিক্ষায় নিয়োজিত থাকার পরামর্শ প্রদান করেন। তার মতে, এ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো দেহকে সুস্থ সবল ও সুসংগঠিত করে গড়ে তোলা
খ.উচ্চতর শিক্ষা : উচ্চশিক্ষার বিস্তৃতি হলো ২০ থেকে ৫০ বছর । প্লেটো উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাকে ৩ স্তরে বিভক্ত করেন যথা :
১. প্রথম স্তর (২০-৩০ বছর) : উচ্চশিক্ষার প্রথম স্তরে (২০-৩০ বছর) শিক্ষার্থীকে উচ্চতর গণিত, জ্যামিতি, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং সংগীত শিক্ষা প্রদান করা হয়। অতঃপর ৩০ বছর বয়সে একটা নির্বাচনি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং কৃতকার্যরা পরবর্তী শিক্ষার সুযোগ পাবে।
২. দ্বিতীয় স্তর (৩০-৩৫ বছর) : এ স্তরে শিক্ষার্থীকে উচ্চতর দর্শন, অধিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যা শেখানো হবে। প্লেটোর মতে, এখানেই মূলত পুথিগত বিদ্যার সমাপ্তি ঘটে এবং এদের মধ্য থেকেই রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি নির্বাচন করা হয়।
৩. তৃতীয় স্তর (৩৫-৫০ বছর) : ৩৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যবর্তী এই সময়ে শিক্ষার্থীগণ ব্যবহারিক ও বাস্তব শিক্ষা গ্রহণ করবে । এ সময়ে শিক্ষার্থী সরকারি বিভিন্ন কাজের সাথে সংযুক্ত হয়ে অভিজ্ঞতা প্রসূত ও বাস্তব শিক্ষা অর্জন করবে। অতপর, দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা তত্ত্বটি তার কালজয়ী সৃষ্টি। বয়সের স্তরভেদে তার এ শিক্ষাতত্ত্বটি মানব প্রকৃতি গঠনে বেশ ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া প্লেটো অভিভাবক শ্রেণির জন্য সমগ্র জীবনব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
সুতরাং বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে যারা পরম জ্ঞানলাভ করবে তাদের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য উত্তম ব্যক্তি মনোনীত হবেন। যিনি তার অর্জিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা রাষ্ট্রের সুশাসন কায়েম করবেন।
০৯. “প্লেটোর রিপাবলিক শিক্ষার ওপর লিখিত এ যাবৎকালের সর্বোত্তম গ্রন্থ।”—বক্তব্যটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “প্লেটোর ‘দ্যা রিপাবলিক’ শিক্ষার ওপর রচিত সর্বোত্তম গ্রন্থ।”—বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : জ্ঞানবিজ্ঞান নিয়ে যুগে যুগে এই ধরাধামে বিভিন্ন মহামনীষী আগমন করেছেন। তাদের চিন্তা চেতনা যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের রাজ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্লেটো ছিলেন সেই মহাজ্ঞানীদের একজন। তার রচিত অমর গ্রন্থ ‘ঞযব জবঢ়ঁনষরপ’. রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছে। প্লেটোর সুপ্রসিদ্ধ তত্ত্বগুলো এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে সেগুলো নানাভাবে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
“প্লেটোর রিপাবলিক শিক্ষার ওপর লিখিত এ যাবৎকালের সর্বোত্তম গ্রন্থ।”—বক্তব্যটির ব্যাখ্যা : মহান দার্শনিক প্লেটোর দ্যা রিপাবলিক গ্রন্থে বর্ণিত চারটি মূলনীতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। প্লেটো আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেন, তা বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি এক আদর্শ শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেন।
তার শিক্ষাপদ্ধতির বৈচিত্র্য এবং যৌক্তিকতায় মুগ্ধ হয়ে ফরাসি দার্শনিক রুশো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থটিকে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট এক আলেখ্য বলে অভিহিত করেন। মূলত তার শিক্ষাপদ্ধতি ছিল প্রগতিশীল।
অনেক বিজ্ঞজন তার শিক্ষাব্যবস্থাকে মহান বস্তু বলে অভিহিত করেছেন। শিক্ষার মাধ্যমে মানব মনকে সুনিয়ন্ত্রিত করে আদর্শ রাষ্ট্রের উপযোগ শিক্ষাব্যবস্থার বিষয়বস্তু ছিল দ্বিবিধ। যথা ১. শরীর গঠনমূলক এবং ২. মন উন্নয়নমূলক।
শরীর গঠনমূলক বিষয়সমূহে নাগরিকদের শরীরচর্চা তথা দৈহিক গঠনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আর মন উন্নয়নমূলক বিষয়সমূহে নাগরকিদের মানসিক বিকাশ সাধনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্লেটো তার এই শিক্ষাব্যবস্থাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন যথা ১. প্রাথমিক শিক্ষা এবং ২. উচ্চশিক্ষা ।
১. প্রাথমিক শিক্ষা : প্লেটোর মতে প্রাথমিক শিক্ষার বয়ঃসীমা হচ্ছে শৈশব হতে ২০ বছর পর্যন্ত। এর ভেতরে ১৮ বছর পর্যন্ত কেবল সাহিত্য, সংগীত ও প্রাথমিক গণিত শিক্ষাদান করা হবে এবং বাকি বছর সংরক্ষিত থাকবে মূলত শরীরচর্চা ও সামরিক কৌশল শিক্ষার জন্য। এই দুই বছর অপর কোনো বিষয় অধ্যয়নের বিশেষ কোনো সুযোগ থাকবে না ।
অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৪:রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা অতিসংক্ষিপ্তত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:(ফ্রি PDF) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
২. উচ্চতর শিক্ষা উচ্চতর শিক্ষা তিনটি স্তরে বিভক্ত। যথা :
ক. ২০ বছর থেকে ৩০ বছর : এ স্তরের পাঠ্য হবে উচ্চতর গণিত, জ্যামিতি, জ্যোতিষশাস্ত্র ও সংগীত। এ স্তরে বিষয়গুলো গভীরভাবে অনুশীলন করানো হবে এবং গণিতের জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হবে
খ. ৩০ থেকে ৩৫ বছর : এ স্তরের মূল পাঠ্যসূচি হবে উচ্চতর দর্শন। উচ্চতর দর্শন অধ্যয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উত্তম কী এবং সকল জ্ঞানের মধ্যকার ঐক্যসূত্র কী তা জানতে পারবে। এর পূর্বে উচ্চতর দর্শন সম্পর্কে কোনো শিক্ষাদান করা হবে না কেননা পরিপক্ব বয়স ছাড়া দর্শনের গুরুত্ব উপলব্ধি শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
গ. ৩৫ হতে ৫০ বছর : প্রকৃত প্রস্তাবে দ্বিতীয় স্তরেই প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু এর পরে আরো একটি স্তর রয়েছে। যখন শিক্ষালব্ধ জ্ঞানের সঙ্গে বাস্তব কর্মসাধনার সংযোগ চেষ্টা করবে। এই সময় তাদেরকে তুলনামূলক নিম্নমানের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং তারা শাসকের অভিজ্ঞতা লাভ করার চেষ্টা চালাবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একটি সুশৃঙ্খল আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তার এ শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রে সম্পূর্ণ উপযোগী না হলেও অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য ও উপযোগী।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। আর রিপাবলিকে বর্ণিত প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্যও ছিল রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ কামনা। তাই প্লেটোর রিপাবলিক শিক্ষার ওপর এ যাবৎকালের সর্বোত্তম গ্রন্থ এ বক্তব্যটি সঠিক।
১০. প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিককালে কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
অথবা, প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানকালে কতটুকু প্রযোজ্য?
উত্তর : ভূমিকা প্লেটোর ‘দ্যা রিপাবলিক’ শিক্ষার ওপর রচিত এ যাবৎ কালের সর্বোত্তম গ্রন্থ। প্লেটো সমসাময়িক সময়ে মানুষের চাহিদার পরিধি ছিল ছোট কিন্তু বর্তমানে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তদুপরি একবিংশ শতাব্দীতে আমরা প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তব অনুশীলন দেখতে পাই।
অর্থাৎ প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে যার গ্রহণযোগ্যতা আজও বিদ্যমান। আধুনিককালে প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা :
অনেকাংশে প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা বর্তমানকালেও পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
১. রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা : প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা। তিনি বিশ্বাস করতেন “প্রত্যেক জ্ঞানেই লক্ষ্য থাকবে সম্পূর্ণতাকে জয় করা। তাই শিক্ষাব্যবস্থা সরকার নিয়ন্ত্রিত হওয়া আবশ্যক।” আর বর্তমানে পৃথিবীতে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ছাড়াও অনেক জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্র বা সরকার নিয়ন্ত্রিত।
২. বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন তাতে সমাজের সকল স্তরে বিশেষ করে শিশুজীবন থেকে শুরু করে নাগরিকত্বের শেষ ধাপ পর্যন্ত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যা আধুনিক শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বাস্তবে অনেক দেশেই প্রচলিত ।
৩. সুনাগরিক গড়ে তুলতে : প্লেটো শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল সুনাগরিক ও আদর্শ শাসক গড়ে তোলার মাধ্যমে আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আধুনিক বিশ্বের সকল দেশেই সুনাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
৪. নারীর অধিকার : প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়ই সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় আমরা দেখতে পাই নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই ।
৫. শিক্ষাই জ্ঞান : আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্লেটো বলে গেছেন শিক্ষাই জ্ঞান। তিনি প্রজ্ঞাবান দার্শনিক গড়ে তোলার জন্য এক মহান ও যুগান্তকারী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এরই সূত্র ধরে বর্তমান সময়ে শিক্ষাকে আরও বেশি গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা হয়।
৬. সংগীত শিক্ষা : শিশুর মানসিক উৎকর্ষের জন্য সংগীত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আর বর্তমানকালে প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সংগীত শিক্ষার প্রচলন বহুমাত্রায় লক্ষণীয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো বর্ণিত শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন গ্রিক নগররাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বর্তমানকালের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তার শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বাস্তবধর্মী। এককথায় প্লেটোর শিক্ষাব্যবস্থা মৌলিকত্বের জন্য কালোত্তীর্ণ হয়েছে এবং আধুনিককালে তা সমাদৃত হচ্ছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)