অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF ও অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা, পর্ব – ১ ( প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ৩-প্লেটো এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: পর্ব:- ১ (প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ৩-প্লেটো এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা
- পর্ব – ১ ( প্রাচীন যুগ )
- অধ্যায় ৩ – প্লেটো
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৩
খ – বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. প্লেটোর পরিচয় সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, প্লেটো সম্পর্কে তুমি যা জান সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর রাষ্ট্র ব্যবস্থার অগ্রগতির ইতিহাসে যেসব দার্শনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে অনন্য সাধারণ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো (Plato) ছিলেন অন্যতম।
প্লেটো ছিলেন গ্রিক চিন্তাবিদ সক্রেটিসের একনিষ্ঠ শিষ্য। তাই প্লেটোর চিন্তাধারায় সক্রেটিসের প্রভাব সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত। রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে মৌলিক অবদানের জন্য প্লেটোর নাম সর্বজনবিদিত।
প্লেটোর পরিচয় : দর্শনের ইতিহাসে প্লেটো ৪২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম নগররাষ্ট্র এথেন্সের আইগিনী দ্বীপে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এরিস্টন।
তিনি বিখ্যাত ‘কোডরাস’ বংশোদ্ভূত। প্লেটোর মাতা পেরিস্টিওন এথেন্সের আইনপ্রণেতা সোলোনের বংশধর ছিলেন । খুব অল্প বয়সেই তার পিতা মারা গেলে প্লেটোর মাতা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
প্লেটো শিশুকালে অত্যন্ত আদর যত্ন ও স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যমেই সৎপিতার বাড়িতে বড় হন। এখানে অ্যাডিয়া ইম্যানটাস ও গ্লুকোন নামে তার দুই ভাই এবং পেটোন নামে এক বোন ছিল। গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ‘প্লেটো’ নামটি সগৌরবে উচ্চারিত হলেও এটি তার প্রকৃত নাম ছিল না।
তার প্রকৃত তথা পারিবারিক নাম ছিল ‘এরিস্টোক্লেস’ সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুঠাম দেহের জন্য তিনি ‘প্লেটো’ নামে পরিচিত হন এবং পরবর্তীতে এটিই তার আসল নাম হয়ে দাঁড়ায়।
সুদর্শন ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী যুবক প্লেটো সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। খেলাধুলার প্রতিও তার আগ্রহ ছিল অনেক।
জিমন্যাস্টিকসে অংশগ্রহণ করে প্লেটো দু দুবার দূর পাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতায় সাফল্যের মুকুট অর্জন করেন। তৎকালীন এথেন্সের অভিজাত গোষ্ঠীর নেতা ক্রিটিমাস ছিলেন প্লেটোর কাকা।
ক্রিটিমাস ছিলেন এথেন্সের স্বৈরাচারীর একজন। এ সময় কাকা ক্রিটিয়াস এর প্রভাব এবং এথেন্সের গণতান্ত্রিক শাসনের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও বিশৃঙ্খলা প্লেটোকে রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে এসেছিল।
শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবান শিক্ষার প্রভাবে এক নতুন জীবনদর্শনে উদ্বুদ্ধ হন। কিন্তু গণতন্ত্রের যাঁতাকলে পড়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সক্রেটিসের বিচার ও প্রাণদণ্ড প্লেটোকে অত্যন্ত মর্মাহত করে তোলে। এ সময় প্লেটোর বয়স ছিল ২৮ বছর।
অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের করুণ পরিণতি প্লেটো তৎকালীন গণতান্ত্রিক শাসন ও শাসকের প্রতি বিদ্বেষী করে তোলে। আর গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি এরূপ বিদ্বেষই প্লেটোকে তার আদর্শ রাষ্ট্রের সন্ধানে ব্রতী করে তোলে। যদিও তৎকালীন গণতান্ত্রিক নেতারা প্লেটোর এরূপ বিদ্বেষ ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেননি।
এমতাবস্থায় প্লেটো ৩৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিসিলি ও ইতালি যান। এখানে পিথাগোরাস এবং জ্যামিতিক জ্ঞানের সাথে প্লেটোর পরিচয় হয়। এ সময়ই প্লেটো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Republic’ এ বর্ণিত শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন।
অতঃপর ৩৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এথেন্সে ফিরে এসে শিক্ষা কেন্দ্র একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। এই একাডেমিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় প্লেটোর বিদ্যাচর্চা ও শিক্ষা কেন্দ্র। এখানে তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর জ্ঞান চর্চা করেন এবং বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। সর্বোপরি ৩৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ৮০ বছর বয়সে প্লেটো মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অত্যন্ত অভিজাত বংশে জন্মগ্রহণ করেও প্লেটো রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক অনন্য নাম। রাষ্ট্রদর্শনের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তার বিচরণ ছিল না।
বিশেষ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়নে, শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং শারীরিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্লেটোর অবদান অবিস্মরণীয়।
০২. প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা বর্ণনা কর ।
অথবা, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যে কয়জন দার্শনিক উজ্জ্বল মহিমায় মহিমান্বিত তাদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো অন্যতম। প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার মূলভিত্তি ছিল রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের মানুষের উত্তম জীবনযাপন করা।
এর মাধ্যমে প্লেটো তৎকালীন গ্রিক সমাজে বিদম্যান পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, অন্যায়, অবিচার ও কুশাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে তার ‘The Republic’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো বা সংগঠনের কথা উল্লেখ করেন।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা : ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো বিশ্লেষণে মানবাত্মাকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে এগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-
ক. প্রজ্ঞা বা যুক্তিবোধ : প্রজ্ঞা বা যুক্তিবোধের মাধ্যমে মানুষ শিখে ও জানে। যেহেতু মানুষ জানতে শিখে সেহেতু সে ভালোবাসতেও প্রস্তুত হয়। আর বুদ্ধিমত্তার সাথে কোনো জটিল বিষয়ও সফলতার সাথে বিশ্লেষণ করতে পারে। এজন্যই প্রজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খ. বিক্রম বা সাহস : সাহস বা বিক্রম মানবাত্মার একটি বিশেষ দিক। এর মাধ্যমে মানুষ যুদ্ধে অনুপ্রাণিত হয়। যা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে ।
গ. ক্ষুধা বা ভোগস্পৃহা : ক্ষুধা বা প্রবৃত্তি মানবাত্মার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। যার মাধ্যমে মানুষকে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ।
প্লেটো মানবাত্মার এই তিনটি উপাদানের সাথে সংগতি রেখে রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য তিনি সমাজে তিনটি শ্রেণি প্রত্যক্ষ করেন। যথা : ১. দার্শনিক রাজা বা অভিভাবক শ্রেণি (Philosopher king or Guardian class), ২. যোদ্ধা শ্রেণি (Warrior class) ও ৩. উৎপাদক শ্রেণি (Producing class)।
নিম্নে এ তিন শ্রেণির কাজ বর্ণনা করা হলো-
১. দার্শনিক রাজা বা অভিভাবক শ্রেণি : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোতে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, শাসনকর্তা একজন দার্শনিক রাজার হাতে ন্যস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
তিনি আরও বলেন, “যে পর্যন্ত না দার্শনিকরা শাসক হচ্ছেন কিংবা যারা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে দর্শনের মিল সাধিত না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো আশা নেই।”
২. যোদ্ধা শ্রেণি : আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোর এ পর্যায়ে প্লেটো যোদ্ধা শ্রেণিকে দ্বিতীয় স্থানে আসীন করেছেন। এদের স্থান হবে দর্শনিক রাজার পরপরই । এক্ষেত্রে সাহসী ও দৈহিক বলে বলিয়ান ব্যক্তিগণ এই শ্রেণির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এদের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান ও স্বাধীনতা রক্ষা করা।
৩. উৎপাদক শ্রেণি : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোর তৃতীয় স্তরে রয়েছে উৎপাদক শ্রেণি। এদের প্রধান কাজ হলো দার্শনিক রাজা ও যোদ্ধা শ্রেণির প্রয়োজন মিটানো।
আর রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন তার যোগান দিবে উৎপাদক শ্রেণি। মানবাত্মার সর্বনিম্ন স্তরে যেমন ক্ষুধা তেমনি রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন স্তরে উৎপাদক শ্রেণির স্থান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোকে বাস্তবে রূপদান করা অসম্ভব। কেননা প্লেটো নিজেই বলেছেন তার এই আদর্শ রাষ্ট্রের বাস্তবায়ন একমাত্র স্বর্গ রাজ্যেই সম্ভব, পার্থিব জগতে নয়। তাই প্লেটোর এই আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণাটিকে অনেকে নিছক কল্পনা ও শ্রেণিবৈষম্যের পথপ্রদর্শক বলে অভিহিত করেছেন।
০৩. প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র সম্বন্ধে কী জান?
অথবা, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র তত্ত্ব সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যে কয়জন দার্শনিক স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর নাম উল্লেখযোগ্য। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্ব রাষ্ট্রদর্শনের উল্লেখযোগ্য মতবাদ।
প্লেটো তার সমসাময়িক সময়ে গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রে বিদ্যমান হিংসা বিদ্বেষ, অন্যায় অবিচার এর বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Republic’ এ আদর্শ রাষ্ট্রের রূপরেখা উল্লেখ করেন।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র : প্লেটোর শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের প্রাণদণ্ড ও তৎকালীন গ্রিসে বিদ্যমান অন্যায় অবিচার, শাসন শোষণের ফলে সামাজিক ঐক্য ও সংহতি সংকটের মুখে পতিত হলে প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের সন্ধানে ব্রতী হন। এটা বাস্তবের চেয়ে আদর্শের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করেন।
এজন্যই রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তা আদর্শ রাষ্ট্র তত্ত্ব নামে পরিচিতি লাভ করে। প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তার শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের মূলনীতি ‘সদগুণই জ্ঞান’ (Virtue is knowledge) এবং ‘ন্যায়ধর্ম জ্ঞান সমতুল্য’ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন।
অর্থাৎ এই মৌলিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই প্লেটো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা রিপাবলিক’ এ আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্ব আলোচনা করেন। তার আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্বের মূল বিষয় হলো সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের সুন্দর জীবনের বিকাশ সাধন করা। এজন্য প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে জনগণের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি পারস্পরিক সম্পর্কের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা বাস্তবতা সম্পর্কিত কিংবা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে কোনো তত্ত্ব বা মতবাদ নয় । এটি মানবসমাজের পরিমার্জিত, পরিকল্পিত, সম্মিলিত উপস্থাপনাই হচ্ছে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্ব।
প্লেটো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের যে গঠন কাঠামো ও কার্য পরিধির কথা উল্লেখ করেছেন তা বাস্তবের সাথে সংগতিপূর্ণ কি না তা আলোচ্য বা চিন্তার বিষয় নয়, বরং কীভাবে তা চিত্রায়িত করেছেন তাই দেখার বিষয়।
অর্থাৎ আদর্শ রাষ্ট্র কীরূপ হওয়া উচিত প্লেটো সে চিন্তাই করেছেন। তা বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব কি না সে বিষয়ে তিনি কোনো চিন্তা করেননি।
অধ্যাপক স্যাবাইন তাই যথার্থই বলেছেন “নীতিগতভাবে রাষ্ট্র কেমন হওয়া উচিত, প্লেটো সেটিই দেখাতে চেয়েছেন। রাষ্ট্রের বাস্তব অবস্থা যদি নীতি অনুসারে না হয়, তাহলে তা বাস্তব অবস্থারই ত্রুটি বলে গণ্য করতে হবে।”
অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ফ্রি PDF
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রিক সভ্যতার এক ক্রান্তিলগ্নে প্লেটো তার দ্যা রিপাবলিক গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্ব প্রদান করেন যদিও প্লেটোর এই আদর্শ রাষ্ট্র বাস্তবে রূপদান করা সম্ভব নয় তথাপি রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এর মৌলিকত্ব প্লোটোকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন মতভেদ থাকা সত্ত্বেও প্লেটার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা দ্বারা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছে।
০৪. প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের শ্রেণিবিভাগ সংক্ষেপে লেখ ।
অথবা, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের শ্রেণিবিভাগ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক দার্শনিক প্লেটো রাষ্ট্র দর্শনের ইতিহাসে যে অবদানগুলো রাখেন তার মধ্যে আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা অন্যতম। প্লেটোর রজনৈতিক চিন্তাধারার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করা।
প্লেটো তৎকালীন গ্রিসে বিদ্যমান সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করার জন্য তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Republic’ এ তার আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামো বর্ণনা করেন যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা।
প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের শ্রেণিবিভাগ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের সকল মানুষকে তার স্বাভাবিক যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ অনুযায়ী কর্মস্থল প্রদানের কথা উল্লেখ করেন। এই কর্মবিভাগের ওপর ভিত্তি করে প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের সকল মানুষকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। যথা :
- ১. দার্শনিক রাজা বা অভিভাবক শ্রেণি (Philosopher kings or Guardian class),
- ২. যোদ্ধা শ্রেণি (Warrior class) ও
- ৩. উৎপাদক শ্রেণি (Producing class)।
নিম্নে এ তিন শ্রেণি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. দার্শনিক রাজা বা অভিভাবক শ্রেণি : যিনি সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী এবং যিনি বৈজ্ঞানিক প্রমাণসাপেক্ষে তার যুক্তি ও জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম তিনিই দার্শনিক রাজা। প্লেটোর মতে, দার্শনিক রাজা হলেন একজন পূর্ণবান ব্যক্তি এবং তিনি সকল প্রকার পার্থিব লোভ লালসা থেকে মুক্ত। তার কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও পারিবারিক অধিকারের স্বীকৃতি নেই।
এজন্য প্লেটো তার আদর্শরাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এবং সামাজিক সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় দার্শনিক রাজার হাতে সকল ক্ষমতা প্রদান করেন। তার মতে, দার্শনিক রাজা বা অভিভাবক শ্রেণি হবে আদর্শ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং শাসন করার ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে।
এ সম্পর্কে তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, “যে পর্যন্ত না দার্শনিকরা শাসক হচ্ছেন কিংবা যারা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে দার্শনিক মিল সাধিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই।”
২. যোদ্ধা শ্রেণি প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের যোদ্ধা শ্রেণিকে দ্বিতীয় স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। এদের স্থান হবে দার্শনিক রাজার পরপরই। এক্ষেত্রে সাহসী ও দৈহিক শক্তিমান ব্যক্তিরাই এই শ্রেণির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এদের প্রধান কাজ হলো যুদ্ধ পরিচালনা করা, দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা জোরদার করা।
৩. উৎপাদক শ্রেণি : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের শ্রেণিবিন্যাসের ৩য় স্তরে রয়েছে উৎপাদক শ্রেণি। এদের প্রধান কাজ হলো দার্শনিক রাজা ও যোদ্ধা শ্রেণির প্রয়োজন মিটানো।
আর রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন তার যোগান দেওয়া উৎপাদক শ্রেণির অন্যতম কাজ। মানবতার সর্বনিম্ন স্তরে যেমন ক্ষুধা তেমনি রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে উৎপাদক শ্রেণি। এ শ্রেণির কোনো রাজনৈতিক অধিকার থাকবে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে যে তিন শ্রেণির কথা বলেছেন তা সমাজ তথা রাষ্ট্রের বিভিন্ন উপাদানের প্রতিনিধিত্ব করে।
যার সর্বোচ্চ পদমর্যাদার অধিকারী হচ্ছেন দার্শনিক রাজা এবং সর্ব নিম্নস্তরে রয়েছেন উৎপাদক শ্রেণি। এরূপ পদমর্যাদার কারণে প্লেটোর এই আদর্শ রাষ্ট্রকে অনেকে শ্রেণিবৈষম্যের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করে এবং ব্যাপক সমালোচনা করেছেন ।
০৫. প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা রিপাবলিক’-এ দার্শনিক রাজা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। প্লেটোর মতে, যিনি সর্বোত্তম জ্ঞানের অধিকারী এবং যিনি বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে তার যুক্তি ও জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম তিনিই হচ্ছেন দার্শনিক।
প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের শাসনভার এই দার্শনিক রাজার হাতেই অর্পণ করেন। তার মতে, অত্যধিক জ্ঞানী, বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন এবং শাসন করার অধিকারী দার্শনিকই হবেন আদর্শ রাষ্ট্রের জনক।
প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন : প্লেটো বর্ণিত দার্শনিক রাজা একজন পূর্ণবান ব্যক্তি। পারিবারিক জীবন তার জন্য নিষিদ্ধ। তিনি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে বসবাস করবেন। সরকারি অর্থে তাদের ভরণপোষণ চলবে। বৈবাহিক সম্পর্কের অনুপস্থিতির ফলে দার্শনিক রাজার কোনো আত্মীয়স্বজন থাকবে না।
কাজেই রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই তার আপনজন বলে বিবেচিত হবে। এ ধরনের নাগরিকদের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনাকেই প্লেটো দার্শনিক রাজার শাসন বলে অভিহিত করেছেন।
দার্শনিক রাজার শাসনব্যবস্থায় কোনো আইন থাকবে না। শাসক তার ন্যায়পরায়ণতা ও বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন। সর্বোপরি তিনি তার দার্শনিক জ্ঞানের মাধ্যমে সামাজিক বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করে রাষ্ট্রীয় কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত থাকবেন।
প্লেটো আরও বলেন, রাজা হওয়ার আগে আদর্শ রাষ্ট্রের চিত্র সম্পর্কে দার্শনিক রাজা একটি সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করে নেবেন, যে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কেবল স্বর্গরাজ্যে সম্ভব। এ ধারণা অনুযায়ী দার্শনিক রাজা আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। অর্থাৎ ধারণা ও বাস্তবের মধ্যে তিনি সংগতিবিধান করবেন।
প্রাচুর্য ও দরিদ্র যাতে পাশাপাশি অবস্থান করতে না পারে দার্শনিক রাজা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আদর্শ রাষ্ট্রের আয়তন যাতে খুব বড় বা ছোট না হয় দার্শনিক রাজা সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকবেন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাবেন এবং এটি লঙ্ঘিত হলে তিনি তা সংশোধন করে দেবেন।
অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণতার লঙ্ঘন দার্শনিক রাজা সহ্য করবেন না। প্লেটোর ধারণা ছিল রাষ্ট্র যদি ন্যায়বান ও প্রজ্ঞাবান শাসক দ্বারা পরিচালিত হয় তাহলে গতানুগতিক আইনের কোনো প্রয়োজন হয় না। তার মতে, “শাসক যদি হয় ন্যায়পরায়ণ আইন তাহলে নিষ্প্রয়োজন, আর শাসক যদি হয় দুর্নীতিপরায়ণ আইন সেখানে নিরর্থক।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্লেটো সমকালীন গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোতে যে অশুভ শক্তির আধিপত্য লক্ষ করেছিলেন তার হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভের উদ্দেশ্যে তিনি আদর্শ রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও জ্ঞানকে একীভূত করেছেন।
তার মতে, যতদিন না দার্শনিকরা রাজা হচ্ছেন অথবা রাজা ও রাজপুত্ররা দর্শনের ক্ষমতা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ও জ্ঞান এক বিন্দুতে মিলিত না হচ্ছে ততদিন অশুভ শক্তির হাত থেকে দেশ মুক্তি পাবে না ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
Comments ২