অনার্স প্রথম বর্ষ, লোকপ্রশাসন পরিচিতি | রচনামূলক প্রশ্নোত্তর > অনার্স প্রথম বর্ষ, লোকপ্রশাসন পরিচিতি, অধ্যায় ২ : প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭ এর রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF: লোকপ্রশাসন পরিচিতি বিষয়টি হতে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য অনার্স প্রথম বর্ষ, লোকপ্রশাসন পরিচিতি, অধ্যায় ২ সহ সকল বিষয়টি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্ন উত্তর দিচ্ছি।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর Honours 1st year |অনার্স প্রথম বর্ষ এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
[box type=”info” align=”aligncenter” class=”” width=””]অনার্স প্রথম বর্ষ বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি অধ্যায় ২ : প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭ গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর[/box]
- ২.০৫ সংগঠনের সনাতন মতবাদ ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
- অথবা, সনাতন মতবাদ ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর।
উত্তর : ভূমিকা আধুনিক লোকপ্রশাসনিক আলোচনায় সংগঠনের ধারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অষ্টম শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেকেই তাত্ত্বিক সংগঠন সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন।
তন্মধ্যে সনাতন মতাবাদ ও আধুনিক মতবাদ সাংগঠনিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আধুনিক বিশ্বে সুসংগঠিত সংগঠন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয় তাই প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো, শক্তিশালীকরণে এসব মতবাদ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সংগঠনের সনাতন মতবাদ ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য : সংগঠন ব্যবস্থাপনায় সনাতন ও আধুনিক মতবাদ বেশ কার্যকর হলেও এ দুটি মতবাদের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ করা যায়। নিম্নে এসব পার্থক্য আলোচনা করা হলো.
১. সংজ্ঞাগত : সনাতন মতবাদ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সংগঠন পূর্ব ঘোষণার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, আধুনিক মতবাদে সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংগঠনের কর্মীদেরকে কোনো তদন্ত বা কর্ম সম্পাদনের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা না করে বরং কর্মীদের সাথে মানবিক আচরণের মাধ্যমে সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়।
২. কাঠামোগত : সংগঠনের সনাতন মতবাদ কাঠামো ভিত্তিক এবং নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ। এটি আইনের বাইরে গিয়ে কোনো কর্ম সম্পাদন করে না। পক্ষান্তরে, আধুনিক সংগঠনের কাঠামো অনেকাংশে শিথিল এবং এটি আইনের তুলনায় সামাজিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
- অধ্যায় ২ : প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা | রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- Honours 1st | অধ্যায় ৪: উন্নয়ন প্রশাসন‘র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- ফ্রি অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
৩. পদসোপানগত ভিন্নতা : সনাতন প্রশাসনে সম্পূর্ণরূপে পদসোপান নীতি অনুসরণ করা হয়। এখানে প্রশাসনিক সম্পর্ক অধস্তন ও ঊর্ধ্বতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। অপরদিকে, আধুনিক প্রশাসনে পদসোপান নীতির কোনো কড়াকড়ি নেই বরং সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন পরিচালনার জন্য এখানে ঊর্ধ্বতন অধস্তনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
৪. প্রকৃতিগত : সাধারণত সনাতন মতবাদ অনেকাংশে সংকীর্ণ ও সাদাসিধে ধরনের হয়ে থাকে। এটি সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ বিধায় এখানে সৃজনশীলতার কোনো স্থান নেই পক্ষান্তরে, আধুনিক মতবাদে সংগঠনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাঠামোর প্রকৃতি সব বিষয়ের ওপর নজর দিয়ে তার কর্ম পরিচালনা করে থাকে।
৫. দক্ষতার ক্ষেত্রে : সংগঠনের সনাতন মতবাদ অনুসারে কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে আধুনিক মতবাদে সংগঠনের উদ্দেশ্য ও কর্মচারীদের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে সংগঠন পরিচালনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
৬. সমন্বয়গত : সাধারণত সংগঠনের সমন্বয়ের দিক থেকে সনাতন মতবাদ ও আধুনিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় সনাতন সংগঠনে সমন্বয়ের তেমন কোনো উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় না বিধায় এতে প্রায়শই সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। অপরপক্ষে, আধুনিক মতবাদে যথাযথ সমন্বয়ে নীতি অনুসৃত হয়।
৭. ক্ষমতার ব্যবহারে তারতম্য : সনাতন প্রশাসন জোরজবরদস্তিমূলকভাবে প্রশাসনিক আইন দ্বারা প্রশাসন পরিচালনা করে। কর্মীদেরকে সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। অপরদিকে, আধুনিক সংগঠনে আইনের পরিবর্তে প্রশাসন পরিচালনায় কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখায় নীতি গ্রহণ করা হয় ।
৮. কর্মী সংগঠন : সনাতন মতবাদের সংগঠনে সীমিত পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে চাহিদার চেয়েও স্বল্প সংখ্যক কর্মী বা শ্রমিকের মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করা হয়। অন্যদিকে, আধুনিক সংগঠনে চাহিদা মোতাবেক কর্মী ও শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
৯. যান্ত্রিকতা ও মানবিকতা : সাধারণত সনাতন প্রশাসন অনেকটাই নিয়মতান্ত্রিক হয়ে থাকে। এখানে মানবিকতার দিকটি উপেক্ষিত হয়। অপরপক্ষে, আধুনিক প্রশাসন অনেকাংশে মানবিক দিক বিবেচনা করে এবং সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রশাসন পরিচালনা করা হয়।
১০. কর্মভিত্তিক : সনাতন মতবাদ অনুসারে সংগঠন কার্যভিত্তিক হয়ে থাকে। অন্যদিকে, আধুনিক মতবাদ হলো একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থা এবং তুলনামূলক কার্যক্রম প্রকৃতির ।
১১. যৌক্তিকতার বিচার : যৌক্তিকতা বিচারে সনাতন প্রশাসন অনেকাংশে ন্যায়ানুগ আচরণ করে না। পক্ষান্তরে, আধুনিক সংগঠন ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এবং এটি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কল্যাণসাধনের জন্য নিয়োজিত ।
১২. স্বয়ংসম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে : সনাতন মতবাদে প্রশাসনের সব দিক ফুটে ওঠেনি বিধায় এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। অপরদিকে, আধুনিক মতবাদকে আধুনিক মতবাদ তার পূর্বেকার সনাতন মতবাদ ও নব্য সনাতন মতবাদের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে বিধায় তাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মতবাদ বলে গণ্য করা হয়। এটি সনাতন প্রশাসনের ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধন করে প্রশাসনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাংগঠনিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক কাঠামোতে সনাতন ও আধুনিক মতবাদ উভয়েরই অবদান রয়েছে। সনাতন মতবাদ কালের বিবর্তনে সমালোচনা ও সীমাবদ্ধতার মুখোমুখী হলেও সংগঠনের বিকাশে এর অবদান কোনো অংশে কম নয়। অন্যদিকে, যুগের চাহিদা অনুযায়ী এবং মানবিক ব্যবস্থাপনায় সংগঠনের আধুনিক মতবাদ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- ০৬. প্রশাসনিক সংগঠনের সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ আলোচনা কর।
- অথবা, সংগঠনের আনুষ্ঠানিক মতবাদটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সময়ের বিবর্তনে সংগঠনের কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে বিভিন্ন মতবাদ গড়ে উঠেছে। এসব মতবাদ বিভিন্ন সময়ে যেমন পরিবর্তিত হয়েছে, তেমনি আবার নতুন নতুন মতবাদ জন্মলাভ করেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন বিজ্ঞানীগণ সংগঠনের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এসব মতবাদ প্রণয়নের প্রয়াস পেয়েছেন।
প্রবহমান যুগের চাহিদা ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে সংগঠনের তত্ত্বসমূহ পরিবর্তিত ও সংশোধিত হয়েছে সংগঠন সম্পর্কিত বিভিন্ন মতবাদ পরিলক্ষিত হলেও তিনটি প্রধান মতবাদের মধ্যে সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত।
প্রশাসনিক সংগঠনের সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ : সংগঠন সম্পর্কিত মতবাদসমূহের মধ্যে সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদ একটি গ্রহণযোগ্য মতবাদ হিসেবে বিবেচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এ তত্ত্বের প্রবর্তন হয়। সনাতন মতবাদের প্রবক্তা হিসেবে লুথার গুলিক, ম্যাক্স ওয়েবার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
আনুষ্ঠানিক মতবাদ হলো, সংগঠনের এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সংগঠন গড়ে ওঠে। এ জাতীয় সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আইনের মাধ্যমে বা পূর্ব ঘোষণায় ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে থাকে ।
এ মতবাদ অনুসারে সংগঠনের পদসোপান নীতি অনুযায়ী যাবতীয় ক্ষমতা ঊর্ধ্বতনের দিক হতে নিম্নতনের ভিত্তিতেই সনাতন সংগঠন পরিচালিত হয় এবং সনাতন মতবাদের মূলভিত্তি হলো ব্যক্তি ও সম্পদের মধ্যে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে সংগঠনের মূল উদ্দেশ বাস্তবায়ন করা।
এডউইন ও স্টেইন (Edwin & Stain) সনাতন প্রশাসন সম্পর্কে বলেন, “Formal Origination is a number of persons who systematically and consciously combine their individual efforts for the accomplishment of a common task.
” অর্থাৎ, আনুষ্ঠানিক সংগঠন হচ্ছে এমন কতকগুলো ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি যারা সুসংগঠিত এবং সচেতনভাবে নিজেদের কর্মপ্রচেষ্টাকে একটি সাধারণ কর্ম সম্পাদনে সংঘবদ্ধ করে। পাশে রেখাচিত্রের সাহায্যে সনাতন বা আনুষ্ঠানিক সংগঠনকে ব্যাখ্যা করা হলো :
পরিশেষে বলা যায় সনাতন বা আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এমন এক প্রশাসনকে বুঝায় যেখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সরাসরি উপর হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ এখানে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন ধারা বজায় থাকে ।
সনাতন মতবাদের ভিত্তিসমূহ : সংগঠন সম্পর্কিত রীতি প্রবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে এ ধারা গড়ে উঠেছে বিধায় সনাতন মতবাদ আদিম মতবাদ বলে বিবেচিত। সনাতন মতবাদ চারটি প্রধান নীতির ওপর প্রতিষ্ঠত। নিম্নে এসব নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো.
১. শ্রমবিভাগ শ্রমবিভাগ হলো সনাতন মতবাদের অন্যতম মূলভিত্তি। এ বিভাগকে কেন্দ্র করে সংগঠনের অন্যান্য উপাদানের সৃষ্টি সনাতন মতবাদে শ্রমবিভাগের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এখানে কর্মচারীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কার্যক্ষমতা লাভ করে এবং তারা সেবা ও মননকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনিক সংগঠনকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে। পদসোপান এবং কার্যগত পদ্ধতি বিকাশের জন্যই শ্রমবিভাজন আবশ্যক।
২. পদসোপান : সনাতন সংগঠন পদসোপান নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এ নীতির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাদের অধস্তন কর্মচারীর মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত একটি আদেশ জারি করেন যা বিভিন্ন পদক্রম অনুসারে কর্মরত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর মাধ্যমে ক্রমে সিঁড়ি বেয়ে অতিক্রম করে নিম্নতম কর্মচারী পর্যন্ত পৌঁছায়।
৩. কাঠামো : সনাতন সংগঠনে অন্যতম ভিত্তি হলো কাঠামো যা বলতে ব্যবস্থা ও পদ্ধতিকে বুঝায়। সংগঠনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য এ কাঠামো গড়ে তোলা হয়। এখানে কর্মরত প্রতিটি কর্মচারীর মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
কাঠামোতে বর্ণিত ক্ষমতা ও দায়িত্বের ভিত্তিতে এ সংগঠন পরিচালিত হয় যেখানে প্রতিটি কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে থেকে তার ওপর দায়িত্বসমূহ যথাযথভাবে সম্পাদনের প্রচেষ্টা চালায়।
৪. নিয়ন্ত্রণ : সংগঠনের সনাতন মতবাদে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার মধ্য দিয়ে প্রশাসন পরিচালনার চেষ্টা করা হয়। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কতজন অধস্তন কর্মচারী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা নিয়ন্ত্রণের পরিধি নির্দেশ করে ।
প্রখ্যাত প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ভি এ গ্যাবকিউনাস এ সংখ্যা ৫ থেকে ৭ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত বলে মনে করেন। নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কর্মচারীর সংখ্যা কম না বেশি হবে তা চারটি উপাদানের ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো কাজের প্রকৃতি, ব্যক্তিত্ব, সময় এবং স্থান।
সনাতন মতবাদের ধারা : সনাতন মতবাদের তিনটি ধারা বিদ্যমান। এ তিনটি ধারার বাস্তব কার্যকারিতা প্রায় অভিন্ন উদ্দেশ্যের দিক থেকে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ধারা তিনটি হলো— ১. আমলাতন্ত্র, ২. প্রশাসনিক তত্ত্ব ও ৩. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা । নিম্নে ধারাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. আমলাতন্ত্র : আমলাতন্ত্র একটি সর্বজনীন ধারণা যার প্রথম ও প্রধানতম প্রবক্তা হলেন ম্যাক্স ওয়েবার ( Max Weber) | সাধারণভাবে সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত স্থায়ী বেতনভুক্ত ও দক্ষ কর্মচারীগণ আমলা নামে পরিচিত। ম্যাক্স ওয়েবারের মতে উচ্চস্তরের কর্মকর্তাগণ যারা সরকারের সিদ্ধান্ত ও নীতি নির্ধারণ করেন এবং নিম্নস্তরের কর্মকর্তা যারা এ সিদ্ধান্ত মেনে চলেন, আমলাতন্ত্র তাদের মধ্যবর্তী হিসেবে কাজ করে।
২. প্রশাসনিক তত্ত্ব : সনাতন মতবাদের দ্বিতীয় প্রধান ধারা হলো প্রশাসনিক তত্ত্ব। বিখ্যাত ব্যবস্থাপনাবিদ হেনরি ফেয়ল ১৯১৬ সালে এ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। সংগঠন বিষয়ক আলোচনা অধ্যয়ন ও গবেষণায় এ তত্ত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তত্ত্বের প্রবক্তা কতিপয় মূলনীতি প্রদান করেছেন। যেমন— শ্রমবিভাজন কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব কেন্দ্রীয়করণ পদবিন্যাস ইত্যাদি।
৩. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা : সনাতন সংগঠন তত্ত্বের তৃতীয় ও শেষ ধারাটি হলো বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা। এ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা হলেন টেইলর। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় স্বল্প ব্যয় ও অধিক মুনাফাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টেইলর বলেন, সংগঠন ব্যবস্থাপনা সমস্যার সর্বোত্তম সমাধানের জন্য কারিগরদের মধ্যে শৃঙ্খলা আদর্শ ও মুক্তিবাদিতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে ।
সনাতন মতবাদের সমালোচনা : সংগঠন সম্পর্কিত সনাতন মতবাদ অনেক পুরানো হলেও তা সমালোচনামুক্ত নয় এবং কতিপয় সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ মতবাদকে সমালোচকবৃন্দ যান্ত্রিক এবং মানবেতর গুরুত্ববিহীন বলে মতামত প্রদান করেছেন যেখানে মানুষ বা কর্মচারীদেরকে যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করে তাদেরকে কাজ করানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সনাতন মতবাদের অন্যতম ভিত্তি হলো কাঠামো। এখানে সংগঠনের কর্মচারীদের কর্মসম্পাদনের ওপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয় কিন্তু তাদের সুযোগ সুবিধা, কর্মপরিবেশ বা প্রেরণার বিষয়টি এতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ক্লাসিক্যাল বা সনাতন মতবাদের ওপর ভিত্তি করে সংগঠনের অন্যান্য মতবাদ বিকাশ লাভ করেছে। সনাতন মতবাদে কর্মীদের আবেগ অনুভূতি রুচি ও
মূল্যবোধ এবং অন্যান্য মানবিক চাহিদাগুলোকে যথাসম্ভব পূরণের মাধ্যমে কর্মীদের স্পৃহা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। প্রশাসনিক সাফল্য ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সনাতন মতবাদ তথা আনুষ্ঠানিক সংগঠনের ভিত্তি ও ধারাসমূহ অত্যন্ত কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ।
- ০৭. প্রশাসনিক সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ আলোচনা কর ।
- অথবা, সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এক অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে সাংগঠনিক কাঠামো। সংগঠনের উপস্থিতি ও সহায়তা ছাড়া মানুষ কোনো প্রশাসনিক উদ্দেশ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে না। সংগঠনের মাধ্যমেই মানুষের সব ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যার ফলে মানবগোষ্ঠীর কল্যাণসাধনের জন্য প্রশংসাযোগ্য ভূমিকার প্রসার ঘটে।
কালের বিবর্তনে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ বিকাশ লাভ করে। বর্তমান সময়ের প্রশাসনিক উন্নয়নে নব্য সনাতন মতবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
প্রশাসনিক সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ : সংগঠনের সনাতন মতবাদের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিত নব্য সনাতন মতবাদ জন্মলাভ করেছে। বিংশ শতাব্দীর ২০ ও ৩০ এর দশকে নব্য সনাতন মতবাদ একটি সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।
- উন্নয়ন প্রশাসন‘র রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (Honours 1st)
- Honours 1st: উন্নয়ন প্রশাসন‘র রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- Honours 1st | উন্নয়ন প্রশাসন‘র অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদ সমাজবিজ্ঞানী, সামাজিক মনোবিজ্ঞানী এবং আচরণবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণা হতে উদ্ভূত। তারা যান্ত্রিক সাংগঠনিক পদ্ধতি হতে নিজেদের দূরে সরিয়ে না রেখে সংগঠনের ধারাণায় মধ্যপন্থা অনুসরণ করে থাকেন বলে তাদের মতবাদকে অভিহিত করা হয়। নব্য সনাতন মতবাদ অতীতে প্রশাসন ব্যবস্থায় মানবিক সম্পর্ক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।
সনাতন মতবাদের সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধাসমূহ দূর করে সংগঠনকে আরও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে নব্য সনাতন মতবাদের প্রবর্তন করা হয়েছে। ব্যক্তি ও কর্মী দলের সদস্য হিসেবে একজন কর্মীর মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা নব্য সনাতন মতবাদের মূলভিত্তি।
এতে সনাতন তত্ত্বের তুলনায় মানুষের অভিপ্রায় এবং অনানুষ্ঠানিক গোষ্ঠীর কার্যকলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকে। নব্য সনাতন মতবাদে সাংগঠনিক আবরণকে অত্যন্ত জটিল হিসেবে গণ্য করে সাংগঠনিক বিশ্লেষণ ও সমাধানের জন্য মানবিক আচরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে ।
এ মতবাদের সমর্থক মানবতাবাদী ও আচরণবাদীদের ধারণা অনুসারে সংগঠন এমন এক প্রকার ‘Team work’ স্বরূপ যেখানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেকে সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত থাকে। এ মতবাদ অনুসারে সংগঠন যুক্তিভিত্তিক না হয়ে বরং আবেগভিত্তিক হয়ে থাকে ।
অনানুষ্ঠানিক মতবাদে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পদমর্যাদা বংশগত বা ভাষাগত পার্থক্য, শিক্ষাগত মান এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ প্রতিফলিত হয়। এছাড়াও নব্য সনাতন মতবাদ প্রথা হতে উদ্ভূত আইনের দ্বারা বিধিবদ্ধ নয়। প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অধ্যাপক সি. আই. বার্নার্ড (Prof. C. I. Barnard) বলেন, “By informal organization I mean the aggregate of the personal contradicts and interactions and the associated grouping of peopled.”
ফিফনার ও শেরউড (Pfiffner and Sherwood) এর মতে, “সংগঠনে কতকগুলো জটিল সম্পর্ক ও উপাদান কাজ করে চলেছে এবং তারা ক্লাসিক্যাল তত্ত্বকে পরিবর্তন করে সংগঠনে মানবিক সম্পর্কের নতুন ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটাতে আগ্রহী।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় নব্য সনাতন মতবাদটি সনাতন মতবাদের মধ্যেই গড়ে ওঠে এবং এখানে যান্ত্রিক চিন্তাচেতনার চেয়ে মানবিক চিন্তাচেতনাই অধিক প্রাধান্য পায়। নব্য সনাতন মতবাদের প্রধান সূত্রসমূহ : সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদের প্রধান সূত্রসমূহ নিম্নরূপ :
ক. সংগঠনের কর্মীরা যন্ত্রাংশ নন তারা মানুষের দেহ ও মন এ দুয়ের সমষ্টি, তাদের যোগ্যতা, বিশ্বাস ও চিন্তাধারার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। কাজেই তাদের মনোভাব, আশা-আকাঙ্ক্ষা, অভাব অভিযোগ প্রভৃতির প্রতি নজর দিলে ব্যবস্থাপনার কাজ অধিকতর ফলপ্রসূ হবে ।
খ. সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ সামাজিক প্রয়োজনেই সংগঠনের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তোলে । স্বভাবতই একজন কর্মচারী অপরজনকে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এরূপ সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের চেয়ে কম শক্তিশালী নয় ।
গ. কাজের স্বীকৃতির প্রত্যাশা করা মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য আর অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনার মূলকথা হচ্ছে কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কর্মীগণের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে কর্মীদের সাথে পরামর্শ করা হলে তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং এতে সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-
- ১. নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদের সমর্থকগণ সংগঠনতত্ত্বে আচরণবিজ্ঞান সামগ্রিকভাবে ব্যবহার করেছেন।
- ২. নব্য সনাতন মতবাদ সংগঠনের চারটি মৌল স্তম্ভ যেমন— শ্রমবিভাগ, পদসোপান, কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ সীমার ওপর অবস্থিত।
- ৩. এ মতবাদটি শাসন সম্পর্কের সাথে সংশ্লিষ্ট।
- ৪. বিশেষ স্বার্থগোষ্ঠী এবং যোগাযোগব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয় নব্য সনাতন মতবাদের মূলভিত্তি, যা এর বিকাশ ও অগ্রগতির সহায়ক।
- ৫. নব্য সনাতন মতবাদ সংগঠনে কর্মরত মানুষের সামাজিক ও অর্থনেতিক দিকগুলো সূক্ষ্মভাবে বিচার করে।
- ৬. এ মতবাদটি আইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, এটি প্রথা হতে উৎসারিত।
- ৭. নব্য সনাতন মতবাদটি অলিখিত লিখিত অবস্থায় বিরাজ করে না। এটি রেখাচিত্রের জন্য প্রযোজ্য নয়।
- ৮. এ মতবাদ আবেগভিত্তিক এবং ব্যক্তিনির্ভর।
- ৯. অনানুষ্ঠানিক মতবাদ কর্মচারীকেন্দ্রিক প্রভৃতি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংগঠনের নব্য সনাতন বা অনানুষ্ঠানিক মতবাদটি একটি মানব সম্পর্কভিত্তিক প্রথা হিসেবে সনাতন মতবাদের দোষত্রুটি নির্ণয়ে সহায়ক। সনাতন বা আনুষ্ঠানিক মতবাদের কতিপয় ত্রুটি বা অপূর্ণতা দূরীকরণের জন্যেই মূলত নব্য সনাতন বা আনুষ্ঠানিক তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে। সাংগঠনিক কাঠামো উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে নব্য সনাতন মতবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।