অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF) ও অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF) সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. রাষ্ট্রচিন্তায় এরিস্টটলের অবদান আলোচনা কর ।
অথবা, রাষ্ট্রচিন্তায় এরিস্টটলের অবদান মূল্যায়ন কর ।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে যে কয়জন মনীষীর নাম পাওয়া যাবে তাদের মধ্যে জ্ঞান সম্রাট এরিস্টটল অন্যতম। জ্ঞানের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে এরিস্টটলের ছোঁয়া পড়েনি।
প্লেটোর ন্যায় একজন যোগ্য শিক্ষকের ছাত্র হওয়ার সুযোগ লাভ করে তিনি তার চিন্তাজগতকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন । প্লেটোর মতো কল্পনার রাজ্যে না থেকে এরিস্টটল তার চিন্তাধারা প্রকাশের পূর্বে প্রায় দেড় শতাধিক শাসনতন্ত্র অধ্যয়ন করেন। আর সে জন্য তাকে বাস্তববাদী দার্শনিক বলা হয় রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তার অবদান অনস্বীকার্য।
রাষ্ট্রচিন্তায় এরিস্টটলের অবদান : রাষ্ট্রদর্শনে এরিস্টটলের চিন্তাধারা বিশ্লেষণ করলে নির্দিধায় তাকে একজন বাস্তববাদী রাষ্ট্র দার্শনিক বলে চিহ্নিত করা যায়। রাষ্ট্রচিন্তায় তার অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা : বর্তমান যুগ হলো কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের যুগ। যার ধারণা এরিস্টটলই প্রদান করেছেন। জাতীয় রাষ্ট্র শুধু জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও বৈদেশিক বিষয়াবলি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু কল্যাণরাষ্ট্র জনগণের সার্বিক উন্নতি বিধানে সচেষ্ট থাকে। তাই রাষ্ট্র এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবে যা জনগণের জ্ঞানের পরিধি বাড়াবে ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।
২. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন : এরিস্টটলই প্রথম ব্যক্তি যিনি নীতিশাস্ত্র থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে পৃথক একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে তার চিন্তাধারাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা (Observation), বিশ্লেষণ করা (Analysis) ) এবং কোনো সিদ্ধান্তে (Decision) উপনীত হওয়া ।
৩. আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন : গ্রিক চিন্তাবিদদের মধ্যে এরিস্টটলই বুঝতে পারেন যে, রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতার সমন্বয় প্রয়োজন । এ সমস্যা সমাধানের জন্য আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনই যে ব্যক্তিস্বাধীনতার মূল চাবিকাঠি তা তিনি বুঝতে পারেন । আইনের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে মানুষ দাসত্ব অর্জন করে না; বরং মুক্তির পথকেই সুগম করে তোলে ।
৪. জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এরিস্টটলকে গণসার্বভৌমত্বের প্রবক্তা বলা হয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই সব ক্ষমতার উৎস । তাই এরিস্টটল বলেন, “সরকারের কাজের গুণাগুণ বিচার করার মালিক জনগণ কোনো ব্যক্তি বিশেষ নয়। এভাবে তিনি জনমতের প্রাধান্য দিয়ে জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
৫. নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জনক : এরিস্টটলকে নিময়তন্ত্রবাদের জনক বলা হয়। আইনের সার্বোভৌমত্ব নীতির মাধ্যমে তিনি যে নিয়মতান্ত্রিক সরকারের সূচনা করেন বিবর্তনের মাধ্যমে তা আজ আমাদের পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণসাধন জনগণের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব।
৬. রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা: মানুষের আদর্শ জীবনযাপনের জন্য রাষ্ট্র একটি মানবীয় সংগঠন। মানুষের প্রয়োজনে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের উন্নততর জীবন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্র সর্বদা সচেষ্ট থাকবে ।
৭. সুনাগরিক: সৃষ্টি এরিস্টটলের মতে, রাষ্ট্রের এলাকা সম্প্রসারণ করা বা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলাই রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য নয়; বরং রাষ্ট্রের প্রধান ও পবিত্রতম লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিকদের জন্য উন্নতর ও মহত্তর জীবন গড়ে তোলা এবং জ্ঞানের সম্প্রসারণ করা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
৮. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি : বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের যে নীতি গ্রহণ করা হয় তা মূলত এরিস্টটলেরই দিকনির্দেশনা। তিনি সরকারি কার্যাবলিকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন যথা ক. শাসন সংক্রান্ত কাজ, খ. আইন সংক্রান্ত কাজ ও গ. বিচার বিভাগীয় কাজ। আধুনিক যুগের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম প্রবক্তা মন্টেস্কু এরিস্টটলের নীতির দ্বারাই প্রভাবিত হন ।
৯. জনমতের প্রাধান্য দান : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বর্তমানে জনমতের গুরুত্ব সর্বাধিক। কিন্তু এরিস্টটলই প্রথম দার্শনিক যিনি জনমতের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। গণসার্বভৌমত্ব ও যৌথ সিদ্ধান্ত নীতির মাধ্যমে তিনি যা বলতে চেয়েছিলেন শাসকদের কার্যাবলি সম্পূর্ণভাবে শাসিতদের মতামতের ওপর নির্ভর করে ।
১০. নৈতিকতার প্রসার : এরিস্টটল নৈতিকতা সম্পর্কে বলেন, রাষ্ট্রের শক্তি অনেকাংশে নির্ভর করে নাগরিকদের সাহস ও নৈতিকতার ওপর। রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে নৈতিকতার অধঃপতন দেখা দিলে সে রাষ্ট্রের সংবিধান যতই উত্তম হোক না কেন রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙ্গে পরবে। তাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে অবশ্যই নৈতিকতা থাকতে হবে।
১১. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উদ্ভব : রাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে এরিস্টটলই প্রথম আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, যোগ্যতার দিক দিয়ে সব মানুষ সমান নয়, কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে সমান বানাতে যাওয়া প্রাকৃতিক নীতির বিরোধিতা। তাই যোগ্যতানুযায়ী সব নাগরিক সমান সুযোগ পাবে।
১২. সরকারের শ্রেণিবিভাগ : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এরিস্টটলই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য সরকারের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। ”The Politics’ গ্রন্থে সরকারের শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে তিনি সরকারের বিকৃত রূপ ও স্বাভাবিক রূপের আশ্রয় নেন যা পরবর্তীতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
১৩. রাষ্ট্র বিজ্ঞানকে: স্বতন্ত্র মর্যাদায় উন্নীতকরণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে নীতিশাস্ত্র থেকে পৃথক করে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞানের মর্যাদা দান করেন এরস্টিটল। আর সেজন্য তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
১৪. বিপ্লব তত্ত্ব : আজ হতে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে বিপ্লবের যে কারণ এরিস্টটল নির্দেশ করে গেছেন তা আজও সত্য বলে প্রমাণিত। তিনি তার বিপ্লব তত্ত্বে বলেন, সমাজের মধ্যে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করলে রাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিতিশিলতা বিরাজ করে। এই বিপ্লব নিবারণের উপায়ও এরিস্টটল বলে গেছেন ।
১৫. সম্পত্তি ও পরিবারের অপরিহার্যতা : প্লেটোর সাম্যবাদের সমালোচনা করতে গিয়ে এরিস্টটল ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও পরিবার প্রথাকে সমর্থন করে বলেন, ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য সম্পদের প্রয়োজন আছে এবং মানবিক চরিত্রের বিকাশের জন্য পরিবারের ভূমিকাও অপরিসীম ।
১৬. বাস্তবসম্মত ধারণা প্রদান : কল্পনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বাস্তবতাকে মনে ঠাঁই দিয়ে এরিস্টটল তার চিন্তাধারা ও গবেষণার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তৎকালীন ১৫৮টি দেশের সংবিধান আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে তার বাস্তবসম্মত ধারণা প্রকাশ পেয়েছে।
১৭. শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : সেই প্রাচীনকালে এরিস্টটল ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষার মাধ্যমেই আদর্শ নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব, যা আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু শিক্ষাই পারে ধনীগরিবের ব্যবধান কমিয়ে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে ।
১৮. মধ্যবিত্তের শাসন : এরিস্টলই প্রথম মধ্যবিত্ত শ্রেণি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। ধনী ও গরিবের মাঝামাঝি শ্রেণির ওপর রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা দান করে ভারসাম্য সৃষ্টির কথা তুলে ধরেছিলেন।
১৯. স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা : স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা যেকোনো উন্নয়নকামী রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। এরিস্টটল এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি রাষ্ট্র ততদিনই টিকে থাকবে যতদিন সেখানে তার সরকার ব্যবস্থা টিকে থাকবে ।
২০. আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য : এরিস্টটল তার রাষ্ট্রচিন্তায় আদর্শ রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করেন এবং তার কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন । একটি আদর্শ রাষ্ট্রের আয়তন, জনসংখ্যা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, বৈবাহিক অবস্থা, সমাজকাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এরিস্টটল ছিলেন তার গুরু প্লেটো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্লেটো যেখানে আদর্শ রাষ্ট্র গড়ে তোলার কল্পনা করেন এরিস্টটল সেখানে বাস্তবতার আলোকে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সব ধারণা পোষণ করেন।
এরিস্টটল তার অনুসৃত পদ্ধতি, তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ মতামত, চিন্তার মৌলিকত্ব ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করেছেন। তাই এ আলোচনা থেকে বলা যায় যে, রাষ্ট্রচিন্তায় এরিস্টটলের অবদান অনস্বীকার্য।
০২. মধ্যতন্ত্র বা পলিটি কী? মধ্যতন্ত্র সরকার ব্যবস্থার সপক্ষে এরিস্টটলের যুক্তিসমূহ সমালোচনাসহ বর্ণনা কর
অথবা, মধ্যবিত্ত শ্রেণির সরকার ব্যবস্থা এরিস্টটল সমর্থন করেছেন কেন? যুক্তি দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : বাস্তববাদী দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক নামে খ্যাত এরিস্টটল এথেন্সের স্ট্যাগিরা নামক স্থানে ৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধান ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন।
তিনি তার সরকার ব্যবস্থায় রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মধ্যবর্তী একটি শাসনব্যবস্থার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তার মতে, যেকোনো ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়। আর সে কারণে তিনি শাসনব্যবস্থার পরিচালনার জন্য মধ্যপন্থা বা ‘Polity’ এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি‘এরিস্টটল অতিসংক্ষিপ্ত PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি PDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
মধ্যতন্ত্র বা পলিটি : এরিস্টটল তার ”The Politics’ গ্রন্থে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে মধ্যতন্ত্র বা ”Polity’ সর্বাপেক্ষা বাস্তবধর্মী ও উত্তম সরকার ব্যবস্থা ।
শাব্দিক অর্থে বলতে গেলে মধ্যতন্ত্র হলো রাষ্ট্রের বা সমাজের স্বার্থ রক্ষার্থে সাধারণ নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত শাসনব্যবস্থা । তবে অন্যভাবে বলতে গেলে মধ্যতন্ত্র হলো চরম প্রকৃতির ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের ত্রুটিগুলো পরিহার করে তাদের গুণাবলির বিকাশ সাধন করা।
এরিস্টটলের মতে, মধ্যতন্ত্র এমন এক ধরনের বাস্তবভিত্তিক রাষ্ট্র যা ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উগ্রতাকে বাদ দিয়ে উভয়ের সংমিশ্রণে এক নতুন শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে।
জে. পি. সুদা (J. P. Suda) বলেন, “পলিটিকে এমন এক ধরনের গণতন্ত্র বলে অভিহিত করা যায়, যা ধনিকতন্ত্রের কাছাকাছি। আবার তাকে এমন এক ধরনের ধনিকতন্ত্র বলে অভিহিত করা যায়, যা গণতন্ত্রের কাছাকাছি।”
অধ্যাপক স্যাবাইন পলিটিকে এমন এক শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করেছেন, যেখানে “শুধু ধনীরা নয় কিংবা এককভাবে শুধু দরিদ্ররা নয়; বরং ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্রের উপাদানসমূহের সুসমন্বিত অংশের প্রাধান্য বিরাজ করে।
মধ্যতন্ত্র সরকার ব্যবস্থার সপক্ষে এরিস্টটলের যুক্তিসমূহ : এরিস্টটল তার সরকারের শ্রেণিবিভাগের মধ্যতন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এর সপক্ষে বেশকিছু যুক্তি প্রদর্শন করেন, যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
১. মধ্যবিত্তের শাসন : বিশ্বের প্রায় সব শাসনব্যবস্থায়ই অতি ধনী, অতি দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত এই তিন শ্রেণির মানুষের পদচারণা দেখা যায়। এরিস্টটল বলেন ধনীরা স্বেচ্ছাচারী শাসনের প্রবণতা প্রদর্শন করে; দরিদ্র শ্রেণি শাসনকার্য পরিচালনার অনুপযোগী কারণ তাদের মনোবৃত্তি অনেক নিচু। এই দুই শ্রেণির শাসন রাষ্ট্রে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বয়ে আনবে। তাই তিনি মনে করেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাষ্ট্র শাসনের উপযুক্ত।
২. দক্ষ শাসক : সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগণ বেশি বিত্তশালীও নয় আবার একেবারে বিত্তহীনও নয়। তারা ঐশ্বর্য ও দারিদ্র্য উভয়ের মধ্যে অবস্থান করে আছে বলে এদের হাতে নিশ্চিতভাবে শাসনভার অর্পণ করা যায় ।
৩. ভারসাম্য রক্ষা : প্রতিটি শাসনব্যবস্থারই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষা করা। মধ্যবিত্ত শ্রেণির শাসনের মূলনীতিই হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভারসাম্য আনয়ন করা ।
৪. সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন : একটি রাষ্ট্রে মধ্যবিত্ত ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি থাকে এরিস্টটল বলেন, সংখ্যার মধ্যে আমরা নিরাপত্তা লক্ষ করতে পারি আর মধ্যবিত্ত শ্রেণিই হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার।
৫. শাসনকার্য পরিচালনায় দক্ষ : মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মনোভাব ধনিকশ্রেণির উগ্র স্বভাব এবং দরিদ্র শ্রেণির দামোচিত মনোভাব থেকে মুক্ত। এক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণি রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিক দক্ষতার পরিচয় দেয়। আর সেজন্য এরিস্টটল মধ্যতন্ত্রকে সবচেয়ে দক্ষ শাসনব্যবস্থা হিসেবে অভিহিত করেছেন ।
৬. বিপ্লব নিবারণ : বিপ্লব থেকে প্রতিকারের জন্য এরিস্টটল মধ্যবিত্তের শাসনের ওপর আস্থা রেখেছেন। তিনি বলেন ধনিকতন্ত্র ও গণতন্ত্র উভয়ই এক প্রকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়। ফলে বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকে । তাই এরিস্টটল মধ্যতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
৭. মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন : ‘Polity” বা মধ্যতন্ত্র হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব । এই ব্যবস্থায় ধনিক শ্রেণির শোষণ বা দরিদ্র শ্রেণির নিচু প্রবণতা নেই । তাই এটি একটি উত্তম সরকার ব্যবস্থা।
৮. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন লাভ : কোনো সরকার ব্যবস্থাই চিরস্থায়ী নয়। সরকার ব্যবস্থা টিকে থাকতে হলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন থাকতে হবে। সেই কারণেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনুরাগ অর্জন করা অধিকতর শ্রেয় ।
৯. আস্থাভাজন শাসনব্যবস্থা : মধ্যবিত্ত শ্রেণি অন্য যেকোনো শ্রেণি (ধনী বা দরিদ্র) যাই হোক তাদেরকে কখনও ঘৃণা করে না। উভয় শ্রেণির জনগণের আস্থাভাজন হওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি কখনও ষড়যন্ত্রের শিকার হয় না। যার ফলে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় না।
১০. সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি : রাষ্ট্রের তিনটি শ্রেণির মধ্যে যখন সুসম্পর্ক বিরাজ করবে তখন রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও স্থিতিশীলতা আসবে । তাই রাষ্ট্রে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিতে মধ্যবিত্তের অবদান রয়েছে।
মধ্যতন্ত্রের সমালোচনা : এরিস্টটলের মধ্যতন্ত্রের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি থাকার পরেও বিভিন্নভাবে এটি সমালোচিত হয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
প্রথমত, যদি এরিস্টটলের মধ্যতন্ত্র সর্বাপেক্ষা উত্তম সরকার ব্যবস্থা হতো তবে বর্তমানে সর্বত্র গণতন্ত্রের জয়জয়কার দেখা যেত না।
দ্বিতীয়ত, এখানে শুধু মধ্যবিত্ত শ্রেণির গুণগাণ করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রের বিরোধী।
তৃতীয়ত, এরিস্টটল মধ্যতন্ত্রকে উত্তম শাসনব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করলেও এর বাস্তবায়ন দেখতে পাওয়া যায় না ।
চতুর্থত, অধ্যাপক ম্যাক্সি বলেন, “Middle class mediocrity is no shining ideal for the foundation of a state.” অর্থাৎ, মধ্যবিত্তের শাসন রাষ্ট্রীয় ভিত্তির কোনো উজ্জ্বল আদর্শ নয়।
পঞ্চমত, মধ্যবিত্তকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে অন্য সব শ্রেণিকে এরিস্টটল অবজ্ঞা করেছেন।
ষষ্ঠত, এরিস্টটলের মধ্যতন্ত্র বাস্তবে প্রয়োগ করা খুব কঠিন
সপ্তমত, এরিস্টটলের মধ্যতন্ত্র সর্বাপেক্ষা উত্তম সরকার হলে বর্তমান বিশ্বে শুধু মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিয়েই শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠত কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এরিস্টটলের পলিটি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে । তবে এ কথা ঠিক যে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি থাকলে সেই সরকার অনেক স্থিতিশীল হয়।
তাছাড়া রাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষায়ও এরিস্টলের মধ্যতন্ত্র যে অপরিসীম ভূমিকা পালন করেছে তা অনস্বীকার্য। তাই পরিশেষে অধ্যাপক গেটেলের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে পারি যে, তৎকালীন যুগে এরিস্টটলের মধ্যতন্ত্রই ছিল সর্বোত্তম বাস্তববাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা।
০৩. পর্যালোচনা কর। এরিস্টটলের দাসতত্ত্ব সমালোচনাসহ।
অথবা, দাসপ্রথা সম্পর্কে এরিস্টটলের মতবাদ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এরিস্টটল এক অমর প্রতিভার নাম। জ্ঞানের এমন কোনো পরিসর নেই যেখানে এরিস্টটলের পদচারণা নেই। রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনায় তিনি বিভিন্ন তত্ত্ব ও এসবের বিশ্লেষণের মাধ্যমে সহজভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছেন।
তার রচিত ‘পলিটিক্স’ গ্রন্থের অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয় হলো দাস সম্পর্কে আলোচনা। আজ হতে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে তিনি তৎকালীন সামাজিক অবস্থা ও মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণ পরিপেক্ষিতে দাসদের নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে দাসপ্রথাকে তার রচনায় গুরুত্ব দিয়েছেন ।
এরিস্টটলের দাসতত্ত্ব : এরিস্টটল তার কালজয়ী গ্রন্থ ”The Politics’ এ দাসপ্রথা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এ গ্রন্থে তিনি আইনগত ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দাসপ্রথা ন্যায়সংগত বলে অভিহিত করেন। তার মতে, দাসপ্রথা প্রকৃতির একটি শাসন নীতি। এ নীতি হচ্ছে আদেশ ও আনুগত্যের সমন্বয় ।
এরিস্টটলের দাসপ্রথা তার পরিবার ও নাগরিক চিন্তাধারার সাথে সম্পর্কিত। তার মতে, পরিবারের যাবতীয় কার্য সম্পাদনের জন্য … কিছু যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। আর দাস হচ্ছে এরূপ একটি যন্ত্র । এরিস্টটল বলেন, একজন দাস কেবলমাত্র তার প্রভুরই দাস নয়, সে তার সমস্ত দেহ মন ও কর্ম প্রভুর নিকট সমর্পণ করে, কিন্তু প্রভুর দায়িত্ব ও কর্তব্য তার প্রতি নিতান্তই কম।
দাসের যুক্তিবোধ বলে কিছু নেই এবং সে পশু প্রাণীর মতোই যুক্তি বিবর্জিত এবং নির্বোধ। দাসের নিজস্ব সত্তা বা স্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না এবং সে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে প্রভুর সেবায় উৎসর্গ করবে। তাই এরিস্টটল বলেন, যে ব্যক্তি প্রকৃতিগতভাবে নিজের নয়; বরং অপরের সে ব্যক্তিই প্রকৃতিগতভাবে দাস ।
দাসের পরিচয় ও প্রকৃতি : দাসের পরিচয় ও প্রকৃতি নির্ধারণে এরিস্টটল বলেন, প্রকৃতিগতভাবে কিছুসংখ্যক লোক প্রজ্ঞার অধিকারী এবং এরা আদেশ প্রদানে সক্ষম। অন্যদিকে, কিছু লোক কেবল দৈহিক বলে বলীয়ান এবং এ কারণে তারা কায়িক পরিশ্রমে সক্ষম। এ শ্রেণির লোকের মধ্যে প্রজ্ঞার অভাব থাকার কারণে তারা আদেশ দিতে পারে না।
তাদের একমাত্র যোগ্যতা প্রজ্ঞাবানদের আদেশ মান্য করা। এখানে প্রথম শ্রেণির মানুষেরা হলেন প্রভু (Master) এবং অপর শ্রেণির মানুষেরা হলো দাস (Slave)। উদাহরণের মাধ্যমে এরিস্টটল বলেন, কোনো শিল্পকর্ম পরিচালনার জন্য যেমন বিভিন্ন প্রকার যান্ত্রিক উপকরণের প্রয়োজন হয় তেমনি সংসারকর্মও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দুই ধরনের উপকরণ প্রয়োজন যথা : ১. অজৈব যন্ত্রপাতি (Inanimate tools ) : খাদ্য, পোশাকপরিচ্ছদ, সম্পদ ইত্যাদি। ২. জৈব যন্ত্রপাতি ( Animate tools) গৃহপালিত পশু, ক্রীতদাস ইত্যাদি।
এরিস্টটল বলেন, “A slave is a living possession of his master and an instrument of action.” যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদে পরিণত হতে পারে এবং নিজে বিচারবুদ্ধির অধিকারী না হয়েও অন্যের বিচারবুদ্ধিকে বুঝতে পারে, সেই প্রাকৃতিকভাবে দাস দাসপ্রথার মূলনীতি দুটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে এরিস্টটল দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন। সেগুলো হলো-
প্রথমত, এরিস্টটল নাগরিকের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিই হলো দাসপ্রথা। পুণ্যশীল জীবন (Virtuous Life) গঠনের জন্য নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় কাজে সক্রিয়ভাবে যোগদান বা অংশগ্রহণ করতে হয়। এ দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালনের জন্য তাদের পরিপূর্ণ অবসর প্রয়োজন।
সেই সাথে তাদেরকে উন্নত গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। দাসদের দৈহিক পরিশ্রমই প্রভুদের উন্নত গুণাবলি চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় অবসর প্রদান করতে পারে। তাই দাসপ্রথা রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের বস্তুগত নৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি রচনা করে ।
দ্বিতীয়ত, এরিস্টটলের মতে, দাসরা কর্মের উপকরণ, উৎপাদনের উপাদান নয় (Instrument of action, Not instrument of production)। নৈতিক জীবন গড়ে তোলার জন্য প্রভুদের যে অবসরের প্রয়োজন সেই অবসরের লক্ষ্য যতক্ষণ দাসপ্রথা প্রচলিত হয় ততক্ষণ তা কর্মের উপাদান হিসেবে কাজ করে যার ফলে জীবনের নৈতিক ভিত্তি রচিত হয়।
তবে দাসের শ্রম যদি প্রভুদের অবসর যাপন ও নৈতিক গুণাবলি চর্চার কাজে ব্যবহৃত না হয়ে সম্পদ বৃদ্ধির কাজে ব্যবহৃত হয় তাহলে দাসপ্রথার নৈতিক ভিত্তি থাকে না। সেই প্রথা ন্যায়ের মানদণ্ডে অচল । এই যুক্তির ভিত্তিতে গৃহ দাসপ্রথা ন্যায়সংগত কিন্তু শিল্প দাসপ্রথা ন্যায়সংগত নয়। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্পপতিদের সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
দাসের শ্রেণিবিভাগ : এরিস্টটল ‘পলিটিক্স’ এর ৬ষ্ঠ পুস্তকে দাসপ্রথার শ্রেণিবিভাগ দেখিয়েছেন তিনি দাস শ্রেণিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন যথা : ১. প্রাকৃতিক দাস ও ২. আইনগত দাস।
১. প্রাকৃতিক দাস : প্রাকৃতিক দাসরা ছিল সাধারণত জন্মভিত্তিক । জন্মসূত্রেই এরা দাস হিসেবে পরিচিত হয়।
২. আইনগত দাস : আইনগত দাস হলো আইনগত প্রথার কারণে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়া। যেমন— যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক হলে দাসত্ব বরণ করা।
দাসদাসীর কার্যক্ষেত্র : এরিস্টটল তার ”The Politics’ গ্রন্থে দাসদাসীদের কার্যক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, দাসদাসী হলো রাষ্ট্রের সম্পত্তি বিশেষ, তারা সংস্কৃতি ও জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা জানে না। আর সেজন্য তাদের কায়িক শ্রমই কাজ বলে এরিস্টটল মনে করেন।
- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDFফ্রি)অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত MCQ
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
পরিবারের দেখাশোনা, সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও দাসত্ব করা অর্থাৎ প্রভুর সেবায় নিয়োজিত রাখার মধ্যেই দাসদাসীদের কর্মক্ষেত্র সীমিত। যদিও দাসপ্রথাকে সমর্থন করেন তবুও এরিস্টটল কখনও চাননি যে গ্রিসের লোকজন দাসদাসী হোক ।
এ প্রসঙ্গে F. Thilly তার ‘A History of Philosophy’ ‘ গ্রন্থে বলেছেন, “তিনি দাসত্বকে একটি স্বাভাবিক বিষয় বলে বিবেচনা করেন। তবে যেসব বিদেশি গ্রিসে বসবাস করতো, তিনি এ প্রথাকে তাদের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করতেন ।
দাসতত্ত্বের সমালোচনা : এরিস্টটলের দাসতত্ত্ব পর্যালোচনা করার পর বুঝা যায় যে, এই তত্ত্বের কিছু ত্রুটি আছে। নিম্নে এ তত্ত্বের কিছু সমালোচনা দেওয়া হলো-
- ১. সমাজে শ্রেণি বৈষম্য : এরিস্টটল সামাজিক মানুষকে প্রভু এবং দাস এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে সমাজে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছেন তাই এটি কিছুতেই যুক্তিসংগত নয় ।
- ২. অবাস্তব ধারণা : একদল লোক শুধু মহৎ কাজ করবে আর অন্যদল তাদের দাসত্ব করবে এ ধারণা অবাস্তব ।
- ৩. মানবতাবিরোধী : দাসপ্রথা ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে অন্তরায়। তাই এই প্রথা সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী ও অগ্রহণযোগ্য।
- ৪. শোষণের হাতিয়ার : এরিস্টটল দাসের ওপর প্রভুদের প্রভুত্ব বিস্তারের যেসব দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তা মূলত শোষণেরই হাতিয়ার।
- ৫. গণতন্ত্র বিরোধী : গণতন্ত্র যেখানে মানুষের সমান অধিকারের কথা বলে সেখানে দাসপ্রথা মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয় যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক তাই দাসপ্রথা গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচ্য নয়।
৬. যন্ত্রের সাথে তুলনা : প্রভুদের যেকোনো দরকারে দাসেরা সর্বদা প্রস্তুত থাকবে এবং প্রভুরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী দাসের ব্যবহার করবে বলে এরিস্টটল যে মতামত পেশ করেন তা দাসদের যন্ত্রে পরিণত করে। তাই এ প্রথা যুক্তিযুক্ত নয়।
৭. বিপ্লবের সম্ভাবনা : বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চনার শিকার হয়ে আসা দাসেরা হঠাৎই একত্রিত হয়ে বিপ্লব ঘটাতে পারে যা রাষ্ট্রের বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, এরিস্টটল প্রাচীন গ্রিসের বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ব্যক্তি হলেও তিনি দাসপ্রথার চিন্তা হতে বের হয়ে আসতে পারেননি। আবার বর্তমান বিশ্বে কোনো যুক্তিতেই দাসপ্রথাকে সমর্থন করা যায় না।
তবে এ কথা সত্য যে, তিনি তার জীবদ্দশায় কয়েকজন দাসকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই বলা যায়, এরিস্টটল দাসপ্রথাকে সমর্থন করলেও অবাধ ও প্রবিন্ধকতা দাসপ্রথাকে পরিহার করার পক্ষেও তিনি মত প্রদান করেছেন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)