অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF), ৩য় অধ্যায় এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৩ : মৌলিক ধারণাসমূহ
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ–বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
৩.০৭. আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, আইন কী? আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : নিয়ম নীতিবিহীন সমাজ বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ থাকে। মানবচরিত্র সাধারণত বাধ্য না হলে আইন মেনে চলতে চায় না। তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মকানুনের ভিতরে রাখতে হয়। সমাজের বিশৃঙ্খলা দূর করা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা এবং অধিকার রক্ষা করার জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ অতি গুরুত্বপূর্ণ আইন সমাজকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে তোলে ।
শব্দগত অর্থে আইন : আইন হলো ফার্সি ভাষার একটি শব্দ যার ই ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Law। এই ‘Law’ শব্দটি এসেছে টিউটনিক ‘Lag’ থেকে। ‘খধম’ অর্থ হলো স্থির, অপরিবর্তনীয় ও সমভাবে প্রযোজ্য। শব্দগত দিক থেকে আইন হলো এমন কিছু নিয়ম যা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
আইন : দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও জনগণের অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের কাজ। রাষ্ট্র এই কাজ সম্পাদনের জন্য কতকগুলো নিয়মকানুন, বিধিনিষেধ প্রণয়ন করে। এসব নিয়মকানুন, বিধিনিষেধ ভঙ্গ করলে শাস্তি পেতে হয়, একেই আইন বলা হয়
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : টমাস হবস (Thomas Hobbes) বলেন, “প্রজাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় নেতাদের আদেশই হলো আইন ।”
বার্কার (Barker) বলেন, “কেবল রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, ঘোষিত ও প্রযুক্ত হলে আইনকে আদর্শ আইন বলা যাবে না। আইনের মধ্যে বৈধতা ও নৈতিক মূল্যবোধ অবশ্যই থাকতে হবে। অধ্যাপক হল্যান্ড (Prof. Holland) বলেন, “আইন হলো সেসব নিয়মকানুন যা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে ও সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা বলবৎ করা হয়।” এরিস্টটল (Aristotle) বলেন, “আইন হলো পক্ষপাতহীন যুক্তি।”
জন অস্টিন (John Austin) বলেন, “আইন হলো অধস্তনের প্রতি ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক কর্তৃত্বের আদেশ।” অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettell) বলেন, “রাষ্ট্র যে সকল নিয়মকানুন সৃষ্টি করে, স্বীকার করে এবং বলবৎ করে তাই কেবল আইন বলে পরিগণিত হয়।”
আইনের সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson ) । তিনি বলেন, “আইন হলো মানুষের প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারা ও অভ্যাসের সে অংশ যা সাধারণ নিয়মের আকারে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে এবং যার পিছনে সরকারের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সমর্থন রয়েছে।”
আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিভিন্ন রাষ্ট্র দার্শনিকগণ আইনের বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে আইনের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাই তাদের সংজ্ঞাগুলো পর্যালোচনা করলেই আইনের বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে । নিম্নে আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. সার্বভৌম দ্বারা প্রণীত : কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তির আদেশ আইন হিসেবে সকলেই মানে। তাই আইন সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক প্রণীত করা হয়। আইনসভায় আলোচনার মাধ্যমে আইন প্রণীত হয়।
২. সার্বভৌম কর্তৃক বলবৎকৃত সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ শুধু আইন প্রণয়ন করেই বসে থাকে না, তারাই আইনকে কার্যকর করে। সমাজের মানুষকে আইন মানতে বাধ্য করে। আইন অমান্য করলে শাস্তি দেয় তাই আইনকে সার্বভৌম শক্তি দ্বারা বলবৎ করা হয়।
৩. জনসম্মতি : সব আইনে অবশ্যই জনসম্মতির প্রয়োজন আছে। জনগণের সম্মতি না থাকলে কোনো আইনই স্থায়ী হয় না। পালন করা হয় না বা মান্য করা হয় না। যে আইন জনগণ সমর্থন করে না তা কখনো আদর্শ আইন হতে পারে না ।
৪. জনস্বার্থ ও সহানুভূতি : সরকার জনগণের স্বার্থ বা কল্যাণ আনয়ন করার জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকে । যেকোনো দেশের সরকার তার জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় তাদের কল্যাণ করার জন্য সে আইন প্রণয়ন করে থাকে ।
৫. রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব : আইনের পিছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বিরাজমান থাকে। এই কারণেই আইন শক্ত ভিত্তি পায়। এজন্যই উড্রো উইলসন বলেছেন, “আইনের পিছনে সরকারের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সমর্থন রয়েছে।”
৬. নৈতিকতার প্রতিফলন : আইন কোনো সময় নৈতিকতার বাইরে গিয়ে প্রণয়ন করা হয় না। কোনো আইন নৈতিক না হলে তা মান্য করা হয় না। বার্কার বলেছেন যে, “কেবল রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, ঘোষিত ও প্রণীত হলেই আইনকে আদর্শ আইন বলা যাবে না। আইনের মধ্যে বৈধতা ও নৈতিক মূল্যবোধ অবশ্যই থাকতে হবে।”
৭. উপযোগিতা : কোনো আইনের উপযোগিতা বা যৌক্তিকতা অবশ্যই থাকে। সমাজের কোনো কাজে না আসলে কোনো নিয়ম আইন বলে গণ্য হয় না। আইনের পিছনে অবশ্যই যৌক্তিকতা থাকতে হয় উপযোগিতা ও যৌক্তিকতা থাকে বলেই মানুষ আইন মেনে চলে ।
৮. লঙ্ঘিত হলে শাস্তি : আইন হলো এমন কতকগুলো নিয়ম যার পিছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বা ক্ষমতার সমর্থন থাকে। তাই আইন ভঙ্গ করলে কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হয় আইন ভঙ্গকারীর শাস্তি প্রদানের জন্য সরকার বিচার বিভাগ, আদালত, জেল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করে।
৯. সমভাবে প্রযোজ্য : আইন শব্দটি এসেছে টিউটনিক শব্দ Lag থেকে যার অর্থ সমভাবে প্রযোজ্য । আইন সকলের জন্যই কার্যকর। তা কারো জন্য কড়াকড়ি আবার কারোও জন্য শিথিল নয়। আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি যেই হোক না কেন, তার শাস্তির বিধান রয়েছে।
১০. পরিবর্তনশীল : আইন প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। আইন তৈরি হয় কোনো পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সমাজের বিভিন্ন দিক ও পরিস্থিতি বদলে যায়। তাই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনকেও বদলাতে হয়। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আইন পরিবর্তন করা যায় ।
১১. শান্তি রক্ষাকারী : আইন সমাজের বা ব্যক্তিজীবনের শান্তিশৃঙ্খলাকে রক্ষা করে থাকে। আইন সুষ্ঠুভাবে বলবৎ করা হলে সমাজে অপরাধের সংখ্যা কমে যায়। মানবজীবন ও সমাজজীবনে শান্তি আসে । তাই আইনকে শান্তি রক্ষাকারীও বলা যায়।
১২. ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত : সমাজের আইনের ওপর ধর্মীয় প্রভাব বিদ্যমান থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশের আইন ধর্মভিত্তিক। যেমন— ইরান, সৌদি আরব ইত্যাদি। এছাড়াও মধ্যযুগে আইনের ওপর ধর্মের ব্যাপক প্রভাব ছিল ।
১৩. স্বাধীনতার রক্ষাকবচ : আইনকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। কোনো সমাজের আইন, সেই সমাজের মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করে। তাই আইনকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলা হয়।
১৪. বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী : আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
১৫. প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারা : আইন কোনো সমাজের প্রতিষ্ঠিত চিন্তাধারা ও অভ্যাস উড্রো উইলসন তার আইনের সংজ্ঞায় এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে আইন বর্তমান রূপ লাভ করেছে। মানবজীবনে আইনের শাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আইনের শাসন যেকোনো সমাজকে সুখী, সমৃদ্ধশালী, সুশৃঙ্খল করে তোলে। আইন মেনে চললে সামাজিক ও ব্যক্তিজীবনে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাই সমাজের মানুষ আইনকে শ্রদ্ধা করে ও মেনে চলে ।
৩.০৮. আন্তর্জাতিক আইন কাকে বলে? আন্তর্জাতিক আইনের উৎসসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, আন্তর্জাতিক আইন তৈরির উৎসসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে কোনো দেশই এককভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সব দেশই অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল । তাই তাদের মাঝে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা এই সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বিশ্বের সব দেশই আন্তর্জাতিক আইন মান্য করে। বর্তমান বিশ্বে সব দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে হলে কোনো দেশের জন্য আন্তর্জাতিক আইন মেনে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক ।
আন্তর্জাতিক আইন : বিশ্বায়নের এ যুগে রাজনীতি আর দেশীয় পর্যায়ে আবদ্ধ নেই। বিশ্বের দেশগুলো ভার্চুয়ালভাবে অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক গঠিত হয়। যেমন— অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কতগুলো আইন বা নীতি দরকার । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেসব আইন প্রণয়ন করা হয় তাদের আন্তর্জাতিক আইন বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
আইনবিদ গ্রোটিয়াস (Grotious) বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন সেসব প্রথা ও সন্ধির শর্তাবলি নির্দেশ করে যেগুলো রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক ব্যবহারের আইনত কার্যকরী বলে বিবেচিত হয় ।” লরেন্স (খধৎিবহপব) বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন হচ্ছে সেসব নিয়মাবলি যা সুসভ্য রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করে।”
ওপেনহিম (Oppenheim) এর মতে, “আন্তর্জাতিক আইন হলো প্রথা ও রীতিনীতির ভিত্তিতে সৃষ্ট সেসব বিধিবিধান যা সুসভ্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে আইনসংগতভাবে পালনীয় বলে বিবেচিত হয় ।”
স্যার সেসিল হার্স্ট (Cecil Hurst) এর মতে, “আন্তর্জাতিক আইন সেসব নিয়মাবলির সমষ্টি যা এক রাষ্ট্রের নিকট থেকে অন্য রাষ্ট্রের অথবা তার অধিবাসীগণের অধিকার সংরক্ষণ করে।”
ব্রিয়ারলি (Briarly) বলেন, “যেসব নিয়ম ও মূলনীতি সভ্য রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলা হয় তাই হলো আন্তর্জাতিক আইন।”
বার্কার (Barker) এর মতে, “আন্তর্জাতিক আইন হলো এমন নিয়মনীতির সমষ্টি যা রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রণয়ন করে এবং নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার প্রয়োজন পালন করে।”
আন্তর্জাতিক আইনের উৎসসমূহ : কোনো দেশ এককভাবে আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করতে পারে না। আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। নিম্নে আন্তর্জাতিক আইনের উৎসগুলো আলোচনা করা হলো—
১. আন্তর্জাতিক সংগঠন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের বিভিন্ন নিয়ম থাকে। প্রতিটি সংগঠনের নিজস্ব শাসনতন্ত্র থাকে। এই সংগঠনের সদস্য দেশসমূহকে সেই আইনগুলো মেনে চলতে হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারণে সেই সংগঠনের নিয়মের প্রভাব থাকে।
২. আন্তর্জাতিক চুক্তি : বিভিন্ন বিষয়ে অনেকগুলো দেশ মিলে সবার স্বার্থে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কোনো স্বাক্ষরকারী দেশ সেই চুক্তি ভঙ্গ করতে পারে না। চুক্তি ভঙ্গ করলে তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। তাই আন্তর্জাতিক চুক্তিকে আইন বলা যায়।
৩. দ্বিপক্ষীয় চুক্তি : দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে দুটি দেশ কোনো বিবাদ মীমাংসায় বা স্বার্থ আনয়নের জন্য স্বাক্ষর করে। তারা শপথ করে যে, চুক্তির ধারা মেনে চলবে। তাই দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে আন্তর্জাতিক আইন বলা যায় ।
৪. আন্তর্জাতিক সম্মেলন : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন দ্বারা আন্তর্জাতিক আইন প্রণীত হয়। এসব সম্মেলনে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করা হয়। বিভিন্ন বিষয়ে আচরণবিধি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাই আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে আন্তর্জাতিক আইনের উৎস বলা যায়।
৫. আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত : আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত আন্তর্জাতিক আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক বিষয়ে দ্বন্দ্ব বা বিরোধ মীমাংসা করার জন্য সালিশি আদালত সিদ্ধান্ত দেয়। সেসব সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে আইন বলে বিবেচিত হয়।
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:(ফ্রি PDF) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি,অধ্যায়৩:মৌলিক ধারণাসমূহ
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
৬. আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন : আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনও অনেক আন্তর্জাতিক আইন তৈরি করে। এ কমিশন বিভিন্ন বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তদন্ত করে। তদন্ত অনুযায়ী তারা সমস্যা সমাধানের বা উন্নতির পথ আবিষ্কার করে। এই নিয়মসমূহ আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে পালিত হয়।
৭. হেগের সালিশি আদালত : নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত এই আন্তর্জাতিক আদালতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান করা হয়। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ, বন্দি হস্তান্তর, সীমান্ত বিষয়ক বিরোধ ইত্যাদি সমস্যার বিচার বা সমাধান এই আদালতে হয়ে থাকে। তাই এই আদালতকে আন্তর্জাতিক আইনের উৎস বলা যায়।
৮. সমুদ্র সমস্যা বিষয়ক আদালত : বর্তমান বিশ্বে সমুদ্র সীমানা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ লেগে আছে। ঐ সকল বিরোধের মীমাংসা করা হয় আন্তর্জাতিক আদালতে। যেমন— ওখঞঙঝ আন্তর্জাতিক আইন তৈরির মাধ্যমে সমুদ্র সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করেছে। তাই একে আন্তর্জাতিক আইনের উৎস বলা যায় ।
৯. আন্তর্জাতিক সনদ : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আইনের মতো বিশ্বের সব দেশে মেনে চলে। যেমন— জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ এদের মধ্যে একটি। ঐ রকম আন্তর্জাতিক সনদকে আন্তর্জাতিক আইনের উৎস বলা যায়।
১০. কূটনৈতিক আইন, ঘোষণা, ডিক্রি বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবে তাদের বৈদেশিক নীতি প্রয়োগ করে। তাদের ঘোষণা, আইন, ডিক্রি আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে মানা হয়। তাই এটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি উৎস হিসেবে কাজ করে।
১১. বিশেষজ্ঞদের রচনাবলি : বিশিষ্ট আইনবিদদের লেখা আইনসমূহ সারা বিশ্বের সম্পর্ক নির্ধারণ করে বা নিয়ন্ত্রণ করে। এদের মধ্যে লরেন্স, গ্রোসিয়াস, অস্টিন, ওপেনহিম প্রমুখ অন্যতম। তাদের রচনাবলিকে আন্তর্জাতিক আইনের উৎস বলা যায়।
১২. জাতিসংঘ : বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো জাতিসংঘ। জাতিসংঘের সনদ বা শাসনতন্ত্র আন্তর্জাতিক আইনের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে।
১৩. প্রথা বা রীতিনীতি : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এর ক্ষেত্রে কতগুলো প্রথা বা রীতিনীতি থাকে। এসব প্রথা যুগ যুগ ধরেই মানা হচ্ছে। এ প্রথাগুলো এক সময় সিদ্ধ নিয়মে পরিণত হয়। তাই প্রথা আন্তর্জাতিক আইনের একটি প্রধান উৎস।
১৪. সম্মতি : সম্মতি আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিশ্বের কিছু দেশ যখন কোনো একটি নিয়ম মেনে চলতে বা চুক্তিতে সম্মতি প্রকাশ করে, তখন তা আইনে পরিণত হয়।
১৫. জাতিসংঘ : জাতিসংঘ হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম উৎস। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের বিধানের ৩৮নং ধারায় আন্তর্জাতিক আইনের উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তা নিম্নরূপ :
ক. চুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট আইন, খ. আন্তর্জাতিক প্রথা, গ. স্বীকৃত সাধারণ আইন, ঘ. বিশিষ্ট আইনবিশারদদের রচনা ও ঙ. আদালতের সিদ্ধান্ত ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সব রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। বস্তুত পৃথিবীর সকল শান্তিকামী মানুষ এই আশা ব্যক্ত করে যে, আন্তর্জাতিক আইন যথাযথভাবে আইনের ভূমিকা পালন করে
বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হবে। কেননা আন্তর্জাতিক আইনের পিছনে রয়েছে বিশ্বজনমত অর্থাৎ জাতিসংঘ। তাই আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করলে যেকোনো দেশই অসুবিধায় পড়ে। এই আইনকে কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন আদালত ও ইন্টারপোল গঠিত হয়েছে।
৩.০৯. স্বাধীনতার রক্ষাকবচসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : স্বাধীনতা হলো মানুষের জন্মগত অধিকার। কিন্তু এ জন্মগত অধিকার প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত হয় না। বিভিন্ন দিক থেকে স্বাধীনতার পথে বাধাবিপত্তি আসে। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতাকে রক্ষা করা কঠিন।
স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য একটি সমাজের অনেকগুলো উপাদান থাকে। এসব উপাদানসমূহকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলা হয়। স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো আনয়নের দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়। এ দায়িত্ব সমাজের সকল মানুষের। যেকোনো দেশের সবাই যদি সচেতন থাকে, তবেই স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব।
স্বাধীনতার রক্ষাকবচ : স্বাধীনতা মানুষের একটি জন্মগত অধিকার। এ অধিকারকে রক্ষা করার জন্য অবশ্যই অনুকূল অবস্থার প্রয়োজন। এ অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য কতগুলো শর্ত অপরিহার্য। এ শর্তগুলোকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলা হয় স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো—
১. আইনের শাসন : আইনের শাসন হচ্ছে স্বাধীনতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী রক্ষাকবচ। আইন সৃষ্টি করা হয় মানুষের নিরাপত্তা, অধিকার, সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য। কোনো দেশে আইনের শাসন চালু হলে, সে দেশের মানুষ তাদের অধিকার পায় ও নিরাপদভাবে বাঁচতে পারে। তাই আইনের শাসনকে বলা হয় স্বাধীনতার রক্ষক।
২. মানবাধিকারের প্রয়োগ : মানবাধিকারের প্রয়োগ এর দ্বারা কোনো দেশের মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। জাতিসংঘ এর প্রণীত মানবাধিকারের সনদে যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তাতে মানুষের জন্মগত অধিকার বা স্বাধীনতা রক্ষা করা হয়েছে। এজন্য মানবাধিকারের প্রয়োগকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলা যায় ।
৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : কোনো দেশের মানুষের স্বাধীনতা রক্ষিত হয় সঠিক বিচারের মাধ্যমে। কোনো মানুষের স্বাধীনতা কারো দ্বারা লঙ্ঘন করা হলে এর সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন। দৃষ্টান্তমূলক বিচার যা স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে, তার জন্য প্রয়োজন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। স্বাধীন বিচার বিভাগ কোনো প্রভাব ছাড়া সঠিক বিচার করে মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা করে। তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।
৪. শিক্ষার প্রসার : কোনো দেশের মানুষ শিক্ষিত হলে সেই দেশ সবদিক থেকে সমৃদ্ধ ও সুখী হয়ে ওঠে। শিক্ষিত ব্যক্তিগণ তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে। তাদের অধিকার বা স্বাধীনতার লঙ্ঘন তারা মেনে নেয় না। সরকারকে তারা বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। তাই কোনো দেশের মানুষের স্বাধীনতা রক্ষিত হয় তাদের শিক্ষার মাধ্যমে ।
৫. সচেতনতা বৃদ্ধি : সচেতনতা হলো নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য, অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কে অবগত থাকা। সচেতনতা বৃদ্ধি মানুষকে সভ্য করে তোলে। সচেতন ব্যক্তি অন্য কারও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না বা তার স্বাধীনতাও ক্ষুণ্ণ হতে দেয় না। তাই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মানুষের সচেতনতা খুব দরকার ।
৬. সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা : সংবাদ মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা হয়। মানুষ এর দ্বারা জানতে পারে কোনোভাবে তাদের বা অন্য কারোও স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না। তারা স্বাধীনতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করে। মানুষ গণমাধ্যমের মাধ্যমে স্বাধীনতা লঙ্ঘন বিষয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে। সরকার তখন সচেতন হয়ে ওঠে। তাই বলা যায় যে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হলো স্বাধীনতার রক্ষাকবচ ।
৭. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা : কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা যদি গণতান্ত্রিক না হয় তাহলে, সেদেশের মানুষের স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হয়। গণতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ ভোটাধিকারের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। গণতন্ত্রকে শাসনব্যবস্থায় কোনো দল স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে না। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে গণতন্ত্রে মানুষ মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার পায়। তাই বলা যায় গণতন্ত্র হলো স্বাধীনতার সবচেয়ে কার্যকরী রক্ষাকবচ।
৮. স্থানীয় সরকারের স্বচ্ছতা : কোনো দেশে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সচেতন ও শিক্ষিত কম থাকে। তারা তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন থাকে না। ফলে জ্ঞানহীন মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকার লঙ্ঘন করা স্থানীয় সরকারের সদস্যদের দ্বারা খুব সহজ হয়। তাই স্থানীয় সরকারের স্বচ্ছতা স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ।
৯. ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধ : কোনো দেশের ক্ষমতা যদি একজনের হাতে থাকে, তাহলে তার দ্বারা স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা খুব সহজ হয়। এজন্য লর্ড অ্যাকটন বলেন, “ক্ষমতা মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে, অধিক ক্ষমতা মানুষকে অধিক দুর্নীতিগ্রস্ত করে।” তাই কারো দ্বারা মানুষের স্বাধীনতা লঙ্ঘন রোধ করার জন্য, ক্ষমতায় কেন্দ্রীকরণকে রোধ করা দরকার।
১০. সৎ ও দক্ষ পুলিশ : কোনো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান, অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষণাবেক্ষণ করে ঐ দেশের পুলিশ। তাই এক্ষেত্রে পুলিশের উচিত দুর্নীতি না করে সৎভাবে মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা করা। তাই সৎ ও দক্ষ পুলিশকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলা হয়।
১১. আমলাতন্ত্রের স্বচ্ছতা : বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রকে নিয়ে দুর্নীতিবাজ ও গতিহীন বলে অভিযোগ রয়েছে। আমলারা বিভিন্নভাবে মানুষকে সেবা করে ও তাদের অধিকার রক্ষা করে। তাই আমলাতন্ত্রের গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা মানুষের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।
১২. সন্ত্রাসবাদ রোধ : সন্ত্রাসবাদ হলো গণমানুষের স্বাধীনতা হত্যাকারী সন্ত্রাসীরা সাধারণ মানুষকে হত্যা করে ও আতঙ্কিত করে। তাই সন্ত্রাসবাদ রোধ করা উচিত। সন্ত্রাসবাদ দমন করলে স্বাধীনতা রক্ষা পাবে।
১৩. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ : মৌলিক অধিকার পাওয়া হলো মানুষের জন্মগত স্বাধীনতা। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের স্বাধীনতা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য। এসব মৌলিক চাহিদা বা অধিকার পূর্ণ হলে মানুষের স্বাধীনতা রক্ষিত হয় । মৌলিক অধিকারকে স্বাধীনতার রক্ষক বলা যায়।
১৪.. নেতাদের জনমুখিতা : দেশের নেতাদের দ্বারা মানুষের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। যারা গণমানুষের নেতা, তারা মানুষের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কাজ করে। যারা গণমানুষের নেতা, তারা মানুষের স্বাধীনতা রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ। তাই ক্ষমতায় থাকা নেতাদের জনমুখিতা স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো দেশে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য উল্লিখিত রক্ষাকবচগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষ যদি এ রক্ষাকবচগুলো পায়, তাহলে বিভিন্নভাবে তাদের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। গণতন্ত্রে স্বাধীনতা হলো সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। তাই কোনো গণতান্ত্রিক দেশের সরকার ও মানুষের উচিত স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো অক্ষুণ্ণ রাখা।
৩.১০. সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যকার পরিপূরক ও বিপরীত সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : স্বাধীনতা বলতে বুঝায় অন্যের ক্ষতি না করে নিজের ইচ্ছামত কাজ করা। এছাড়াও স্বাধীনতার ধারণার মধ্যে সাম্যেরও একটি দিক জড়িত। সমাজে অন্যের মতো অধিকার পাওয়া, সম্মান পাওয়া ও রাজনৈতিক অধিকার পাওয়া এক ধরনের স্বাধীনতা।
এগুলোকে বলা হয় সাম্য। তাই সাম্য ও স্বাধীনতা একটি আরেকটির সাথে জড়িত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন ধনতান্ত্রিক সমাজে সাম্য ও স্বাধীনতা বিরোধী। সাম্য ও স্বাধীনতার পরিপূরক সম্পর্ক :
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDF)
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
নিম্নে সাম্য ও স্বাধীনতার পরিপূরক সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :
১. আইন প্রয়োগে সাম্য : আইন প্রয়োগ করার সময় যদি সবার ক্ষেত্রে আইন সমানভাবে প্রয়োগ করা হয় তাহলে মানুষের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। তাহলে কারো দ্বারা আইন প্রভাবিত হয় না। ফলে, সবাই আইনের শাসন পায় যার দ্বারা তাদের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে সাম্য স্বাধীনতাকে রক্ষা করে।
২. বিচার প্রদানে সাম্য সঠিক বিচার পাওয়া প্রত্যেক মানুষের অধিকার। যদি কোনো স্বাধীনতা ভলকারীর সঠিক বিচার করা হয়। সাম্যের ভিত্তিতে তাহলে মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা হয়। বিচার কার্যে সাম্য থাকলে কেউ বিচারকে প্রভাবিত করতে পারে না। এক্ষেত্রে অপরাধী বা স্বাধীনতা ভঙ্গকারী যেই হোক না কেন তার বিচার করা হয় । এ সংস্কৃতি মানুষের স্বাধীনতা রক্ষায় সহায়ক।
৩. চাকরি পাওয়ার সাম্য : যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। এক্ষেত্রে যদি কোনো স্বজনপ্রীতি না হয় ও কোটা পদ্ধতি না থাকে তাহলে সবাই যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পায়। চাকরির ক্ষেত্রে সব প্রার্থীর সাম্যের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হলে মানুষ যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পায়। ফলে তার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষিত হয়।
৪. অর্থনৈতিক সাম্য : “I am urging that great inequalities of wealth make impossible that attainment of freedom.” অর্থাৎ, অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে যদি সাম্য না থাকে তাহলে স্বাধীনতা রক্ষিত হয় না। অর্থনৈতিক অসাম্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অসাম্য তৈরি করে। এটি মানুষের স্বাধীনতা নষ্ট করে। অর্থনৈতিক সাম্য স্বাধীনতা রক্ষা করে।
৫. জাতিবর্ণভেদে সাম্য : জাতিবর্ণভেদে সমানভাবে অধিকার পাওয়া ও বিবেচিত হওয়া মানুষের জন্মগত স্বাধীনতা। যদি কোনো সমাজে সাম্য থাকে তাহলে সব ধর্ম, গোত্রের মানুষ সমানভাবে বিবেচিত হয়। তাই সাম্য সব ধরনের মানুষের স্বাধীনতাকে রক্ষা করে থাকে।
৬. অধিকারে সাম্য : সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সবার সমানভাবে ভোগ করার স্বাধীনতা রয়েছে। সাম্য থাকলে সব মানুষ দেশের অধিকার সমানভাবে ভোগ করতে পারে। তাই বলা যায় যে, অধিকারের সাম্য মানুষের স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করে।
৭. রাজনৈতিক সাম্য : রাজনৈতিক অধিকার পাওয়া আমাদের সবার স্বাধীনতা। নির্বাচনে ভোট দেয়া ও মত প্রকাশ করা এদেশের মানুষের স্বাধীনতা। সবার ভোট দেবার অধিকার থাকা দরকার। তাহলে, রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক সাম্য মানুষের স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করে। রুশো, মেইটল্যান্ড, লাক্সি, বার্কার, কোল এরা মনে করে সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পূরক।
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি পিডিএফ) অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ফ্রি পিডিএফ
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ৪টি ফ্রি পিডিএফ
সাম্য ও স্বাধীনতার বিপরীত সম্পর্ক : নিম্নে সাম্য ও স্বাধীনতার বিপরীত সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :
১. ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন : সাম্য মানে বুঝানো হয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমান ক্ষমতা থাকাকে। সাম্য মানুষের স্বাধীনতার ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। একজন মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা হলো যে তার আর্থিক, রাজনৈতিক সামর্থ্য বা ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু সাম্য এর বিরোধী। তাই বলা যায় যে সাম্য স্বাধীনতার বিরোধী।
২. সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ : সাম্য ও স্বাধীনতার দ্বন্দ্ব সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদের দ্বন্দ্ব বলা যায়। সমাজতন্ত্র মানে সকলেই সমান ক্ষমতা ও অর্থসম্পন্ন থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতা বা ব্যক্তিস্বাধীনতা কারো অর্থ বৃদ্ধির স্বাধীনতার অনুমতি দেয়। একে পুঁজিবাদও বলা যায় বিশ্বে সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব দেখা যায় । তাই বলা যায়, সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী।
৩. ইচ্ছার ওপর বাধা : স্বাধীনতা মানে বুঝায় অন্য কারো ক্ষতি না করে নিজের ইচ্ছামত যা কিছু করা। যে কেউ অন্যের ক্ষতি না করে নিজের ইচ্ছামত বিশেষ কিছু করতে পারে। কিন্তু সাম্য কাউকে বিশেষ কোনো সুযোগ সুবিধা দেয় না।
বিভিন্ন দার্শনিকগণ সাম্য ও স্বাধীনতার বিপরীত সম্পর্কের কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে লর্ড অ্যাকটন, ডি. টকভিল, হার্বার্ট স্পেন্সার, বেজহট, লেকি অন্যতম। লর্ড অ্যাকটন বলেন, “সাম্যের জন্য আবেগ স্বাধীনতার হাতে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য লক্ষ করা যায় না। উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজমান। স্বাধীনতাবিহীন সাম্য যেমন অসম্পূর্ণ তেমনি সাম্যবিহীন স্বাধীনতাও অপূর্ণাঙ্গ।
মূলত নিমূর্ল হয়।” ডি. টকভিল বলেন, “সাম্য ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।” সাম্যের মাধ্যমে স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা সাম্যকে বজায় রাখে। এদের একটি ছাড়া আরেকটি সম্ভব নয়। এরা একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)