অধ্যায় ১ঃ দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সাজেশন) সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিষয়: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
অধ্যায় ১: দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয়
বিষয় কোড: ২১১৫০১
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা কর।
অথবা, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত এই ভূখন্ডটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য। এখানে যেমন আছে সমতল ভূমি আবার আছে অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ি অঞ্চল। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশ সত্যিই অপূর্ব।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো:
ক. অবস্থান : বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত। ২০ক্ক৩৪’ উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬ক্ক৩৮‘ উত্তর ৮৮ক্ক০১’ থেকে ৯২ক্ক৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিস্তৃতি। বাংলাদেশের মধ্যভাগ দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ তিনদিকে স্থল এবং একদিকে জল দ্বারা বেষ্টিতে। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম। পূর্বে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং মিয়ানমার। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
খ. আয়তন : বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। তার মধ্যে নদনদী অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৯,৩৮০ বর্গকিলোমিটার। বনাঞ্চলের আয়তন ২২,৫৮৪ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল এবং অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল। আয়তনের দিক দিয়ে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান ৯০ তম।
গ. সীমারেখা : বাংলাদেশের মোট সীমারেখা ৫,১৩৮ কি.মি.। যার মধ্যে বাংলাদেশ ভারত সীমারেখা দৈর্ঘ্য ৪,১৫৬ কিলোমিটার। বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমারেখার দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা ৭১১ কিলোমিটার।
ঘ. প্রান্তীয় অবস্থান : সমুদ্রের অবস্থান এবং সমুদ্র হতে দূরত্ব অনুসারে বিভিন্ন দেশের অবস্থান মহাদেশীয় প্রান্তীয় বা উপদ্বীপীয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থান প্রান্তীয়। এরূপ অবস্থানের কারণে এর দক্ষিণে ভগ্ন উপকূলে সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সহজে জলপথে বাংলাদেশের ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে।
অধ্যায় ১ঃ দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সাজেশন)*
ঙ. ভূপ্রকৃতি : বাংলাদেশ পৃথিবীর একক বৃহত্তম বদ্বীপ। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী পশ্চিম-উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একযোগে এ সুবিশাল বদ্বীপের সৃষ্টি করেছে। সীমিত উচ্চভূমি ছাড়া সমগ্র দেশ এক বিস্তার্ণ সমভূমি। এদেশের ভূখন্ড উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু। ফলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদনদী এবং এদের উপনদী, শাখানদীগুলো উত্তর দিক হতে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে।
চ. জনসংখ্যা : অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮ লাখ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭%, নারী ও পুরুষের অনুপাত ১০০ : ১০০.৩ । বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্ব ১০৯০ জন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ নামক ছোট একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে বর্তমান পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান দখল করে আছে। এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান আর ভূপ্রকৃতিতে এর নিজস্ব স্বকীয় সত্তা রয়েছে। যা সুদীর্ঘকাল ধরে ঐ ভূখন্ডে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে প্রভাব বিস্তার করে এসেছে।
২. প্রাচীন বাংলার নগর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর পরিচয় দাও।
অথবা, প্রচীন বাংলার নগর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর নাম লেখ।
উত্তর : ভূমিকা: বাংলাদেশ প্রধানত গ্রামপ্রধান হলেও প্রাচীন বাংলার পুন্ড্রনগর, কোটিবর্ষ, তা¤্রলিপ্তিসহ কয়েকটি নগর ও নগরী খ্যাতি ও মর্যাদা লাভ করেছিল। রাষ্ট্রীয় ও সামরিক প্রয়োজনে নগরগুলো গড়ে উঠেছিল। ব্যবসা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিশেষ শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। শুধু বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, নগরগুলো শিক্ষা ও সংস্কৃতিরও নগরে ছিল।
প্রাচীন বাংলার নগর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র : নিম্নে প্রাচীন বাংলার নগর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো বিবরণ দেওয়া হল:
ক. তা¤্রলিপ্তি ভারতের সুপ্রসিদ্ধ সামরিক বন্দর। এটি আন্তভারতীয় এবং আন্তর্দেশিক স্থলপথের কেন্দ্র ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি ভারতে ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থান লাভ করে। এ নগরী শিক্ষা ও সাংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল।
খ. বর্ধমান : এই নগর দামোদর নদের তীরে অবস্থিত ছিল। এই বর্ধমানপুরেই কান্তিদেবের রাজধানী ছিল।
গ. কর্ণসুবর্ণ : সপ্তম শতকে এটি শশাঙ্কের রাজধানী ছিল। এটি শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। আজও মর্শিদাবাদ জেলার রাঙামাটি ও কানসোনা গ্রাম যথাক্রমে রক্তমৃত্তিকা ও কর্ণসুবর্ণের স্মৃতি বহন করে।
ঘ. বিজয়পুর : সেন রাজাদের প্রধান রাজধানী ছিল বিজয়পুর।
ঙ. দন্ডভূক্তি : মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানা ও দাতন শহর প্রাচীন এ নগরীর স্মৃতি বহন করে।
চ. বাণগড় (কোটিবর্ষ) : বাণগড় বা কোটিবর্ষ অখন্ড দিনাজপুর জেলায় শনাক্ত করা হয়েছে।
অধ্যায় ১ঃ দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সাজেশন)*
ছ. পঞ্চনগরী ও সোমপুর : নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার পাহাড়পুর নামক গ্রামে সোমপুর বিহার গড়ে ওঠে। এই মহাবিহার সমসাময়িক বৌদ্ধধর্ম, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম তীর্থস্থান ছিল।
জ. রামাবতী : রামাবতী নগর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তৃতীয় বিগ্রহপালের পুত্র রামপাল। সন্ধ্যাকর নন্দীর রচনায় রামাবতী অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী নগর ছিল।
ঝ. লক্ষণাবতী : সেন আমলের শেষের দিকে লক্ষণ সেন রামাবতীর অভ্যন্তরে লক্ষণাবতী নামে একটি নগর প্রতিষ্ঠা করেন।
ঞ. বর্তমান রাজশাহী শহরের ৭ মাইল পশ্চিমে গোদাগাড়ি থানার অন্তর্গত দেওপাড়া নামে একটি গ্রাম আছে। প্রাচীন দেওপাড়া গ্রাম বিজয় সেন প্রতিষ্ঠিত বিজয়নগরের একটি অংশ ছিল।
ট. মহাস্থানগড় : মহাস্থানগড় উত্তর বাংলার সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রাচীন নগর। শিক্ষা ও সংস্কৃতিক কেন্দ্ররূপে এর খ্যাতি ছিল বিশ^ব্যাপী বাণিজ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষালয় হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলায় বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী নগর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। এদের মধ্যে কতকগুলো বিশ^বিখ্যাত নগরী ছিল। প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন নগর ও নগরী একাধিক কারণে গড়ে ওঠে। প্রাচীন এ নগরীগুলো বাণিজ্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতির কেন্দ্র ছিল। এসব নগরীকে কেন্দ্র করে বৈদেশিক সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে।
৩. জনপদ কাকে বলে?
অথবা, জনপদ বলতে কী বুঝ?
উত্তর : ভূমিকা : নীহাররঞ্জন রায় বাংলার অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন, “একদিকে উচ্চ পর্বত, দুই দিকে কঠিন শৈলভূমি আর একদিকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র, মাঝখানে সমভূমির সাম্য এটিই বাঙালির ভৌগোলিক অবস্থান।” প্রাচীনকালে এ ভূখন্ড বিভক্ত ছিল বিভিন্ন অঞ্চল বা জনপদে।
জনপদ : প্রাচীনকালে বাংলা এখনাকার মতো একক রাষ্ট্র ছিল না। তখন বাংলার বিভিন্ন অংশ অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চল বা এলাকা ছিল। এসব এলাকা বা অঞ্চল যার যার মতো করে শাসন করতেন।
বাংলার এই অঞ্চল বা এলাকাগুলোকে সমষ্টিগতভাবে জনপদ বলা হয়। বাংলার এসব জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম হল- ক. বঙ্গ, খ. পুন্ড্র, গ. গৌড়, ঘ. হরিকেল, ঙ. সমতট, চ. বরেন্দ্র, ছ. চন্দ্রদ্বীপ, জ. তান্ডলিপ্ত, ঝ. রাঢ়, ঞ. সুহ্ম ও ট. দন্ডভুক্তি।
প্রাক মুসলিম যুগে বাংলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভৌগোলিক এলাকায় অনেক জনবসতি ছিল। এসব এলাকায় বসবাসকারী জনগণের সমষ্টিকে জনপদ বলা হতো। সেন আমলে বাংলার এই জনপদগুলোর নাম পাওয়া যায় । কালের পরিক্রমায় এ ভূখন্ডে বিভিন্ন জনপদের উত্থান, বিকাশ ও পতন ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত বাংলার জনপদগুলোকে সর্বপ্রথম ঐক্যবদ্ধ করেন রাজা শশাঙ্ক। তারপরে পাল ও সেন রাজারা ঐক্যবদ্ধ বাংলা শাসন করেন।
৪. বাংলার প্রচীন জনপদগুলোর নাম উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীনকালে বাংলা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ছিল। এটি একত্রিত কোনো ভূখন্ড ছিল না । আর এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখন্ডগুলোই জনপদ নামে পরিচিত। সমগ্র বাংলা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি জনপদের নাম পাওয়া যায়।
বাংলার প্রচীন জনপদসমূহ : প্রাচীন বাংলায় বেশ কয়েকটি জনপদ বিকাশ লাভ করে। নি¤œ এসব জনপদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করা হলো :
ক. বঙ্গ : বঙ্গ বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন জনপদের নাম। উপজাতীয় নাম হিসেবে বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায় ‘ ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে। তবে বঙ্গ এলাকটি ছিল বাংলার দক্ষিণ- পূর্ব এলাকা জুড়ে।
খ. রাঢ় : গঙ্গা নদীর পশ্চিমে লখনৌতি রাজ্যের বামদিকের অংশে রাঢ় জনপদের অবস্থান। অর্থাৎ ভাগারথীর পশ্চিম এলাকা জুড়ে ছিল রাঢ় অঞ্চল। এর বিস্তৃতি ছিল পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত।
গ. বরেন্দ্র : বাংলার দক্ষিণে বরেন্দ্রের সীমা পশ্চিমে গঙ্গা ও মহানন্দা, পূর্বে করতোয়া, দক্ষিণে পদ্মা এবং উত্তরে কোচবিহার পর্যন্ত বিস্তৃতি ছিল। বরেন্দ্রকে বলা যায় পুন্ড্রবর্ধনের অংশবিশেষ । বর্তমান বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ, রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ নিয়ে বরেন্দ্র অবস্থিত।
অধ্যায় ১ঃ দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সাজেশন)*
ঘ. হরিকেল : সপ্তম শতাব্দীতে বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ছিল হরিকেল রাজ্য। বাকেরগঞ্জ, নোয়াখালী, সিলেট অঞ্চল নিয়ে হরিকেল অঞ্চল গঠিত। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা, সিলেট হরিকেলের অধীনে ছিল।
ঙ. চন্দ্রদ্বীপ : চন্দ্রদ্বীপ একটি জনপদের নাম যা বর্তমান বরিশাল জেলায় অবস্থিত। রামপাল তা¤্রশাসনে চন্দ্রদ্বীপ বলে একটি বিশাল আকৃতির ভূখন্ড পাওয়া যায়, তার নাম চন্দ্রদ্বীপ।
চ. গৌড় : ৬ষ্ঠ শতকে গৌড় জনপদটির অবস্থান ছিল পূর্ববাংলার উত্তরে। তবে আদিকালে গৌড় বলতে বর্তমান মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলাকে বুঝাত। অর্থাৎ মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিয়ে গৌড় অবস্থিত।
ছ. পুন্ড্রবর্ধন : পূবাঞ্চলীয় জনপদগুলোর একটি হলো পুন্ড্রবর্ধন এবং ব্রহ্মপুত্রের পশ্চিম তীরের নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন। বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে পুন্ড্রবর্ধন অবস্থিত।
জ. সমতট : সমতট হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অন্যতম একটি জনপদের নাম। মেঘনার পূর্বদিকে ছিল সমতট অঞ্চল। এ অঞ্চলের কেন্দ্র ছিল কুমিল্লার নিকটবর্তী লালমাই পাহাড়। তবে ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম, দক্ষিণ বাংলা, নোয়াখালী অঞ্চল ছিল সমতট এলাকা। অর্থাৎ বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে সমতট অবস্থিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে বাংলা অঞ্চলের যেসব জনপদের নাম পাওয়া যায় তা ছিলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদে বিভক্ত। বিভিন্ন জনপদ এলাকার মানুষের জীবনমান বিভিন্ন ধরনের ছিল। জনপদগুলো ছিল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপরে প্রতিষ্ঠিত।
৫. বঙ্গ জনপদ সম্পর্কে কি জান?
অথবা, বঙ্গ জনপদের পরিচয় দাও।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলা প্রাচীনকালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ছিল। আর এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশকে বলা হয় জনপদ। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে বঙ্গ জনপদ ছিল অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। বিভিন্ন কারণে বঙ্গ জনপদের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটেছে।
বঙ্গ জনপদ : বিভিন্ন উৎস থেকে বঙ্গ জনপদ সম্পর্কে জানা যায়। বঙ্গ হচ্ছে প্রাচীন বাংলার একটি জনপদ। বর্তমানকালের বাংলাদেশ বলতে যা বুঝায়, প্রচীন ভারতে বঙ্গদেশ বলতে তা বুঝানো হতো না ।
প্রাচীন পুথিতে একে মগ্ধ ও কলিঙ্গ জনপদের প্রতিবেশী বলা হয়েছে। মহাভারতে বঙ্গকে পুন্ড্র, তা¤্রলিপ্ত ও সুহ্মের সংলগ্ন দেশ বলা হয়েছে। চালুক্যরাজাদের দলিলপত্রে বঙ্গের উল্লেখ রয়েছে।
বঙ্গ জনপদ গড়ে উঠেছিল বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায় গঙ্গা ও ভাগীরথীর মাঝখানের অঞ্চলকেই বঙ্গ বলা হতো। এর পশ্চিমের সীমা ছিল পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার কাঁসা নদী পর্যন্ত। পাল ও সেন বংশীয় রাজাদের বঙ্গের আয়তন সংকুচিত হয়ে পড়ে।
অধ্যায় ১ঃ দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সাজেশন)*
হেমচন্দ্র রচিত ‘অভিধানচিন্তামণি’ নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, ‘বঙ্গ’ ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্ব উপকূলে অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাল রাজাদের রাজত্বকালে ‘বঙ্গ’ উত্তর ও দক্ষিণে বিভাজিত হয়েছিল। এই দুটি অংশ ‘উত্তরবঙ্গ’ নামে অভিহিত হয়েছে। পদ্মা ছিল উত্তরাঞ্চলের উত্তর সীমা, দক্ষিণের বদ্বীপ অঞ্চল ছিল দক্ষিণ বঙ্গ।
বল্লাল সেন ও লক্ষণ সেনের আমলেও বঙ্গের দুটি ভাগের পরিচয় পাওয়া যায়। এই ভাগ দুটি নাম ছিল বিক্রমপুর ও অপরটি নাব্য। প্রাচীন শিলালিপিতে বিক্রমপুর ও নাব্য নামে বঙ্গের দুটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়।
বিক্রমপুর গঠিত ছিল বর্তমান বিক্রমপুর পরগনা ও তার সাথে আধুনিক ইদিলপুর পরগনার কিয়দংশ নিয়ে। নাব্য নামে বর্তমানে কোনো জায়গার অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায় না। ধারণা করা হয় ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালীর নি¤œ জলাভূমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বৃহত্তর বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর কিছু অংশ নিয়ে বঙ্গ গঠিত হয়েছিল। বঙ্গ থেকেই বাঙালি জাতির উৎপত্তি ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাসে বঙ্গ জনপদ এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। প্রাচীন বাংলার বঙ্গ জনপদের বিকশিত রূপই বর্তমান বাংলাদেশ। বিভিন্ন তথ্য থেকে অবগত হওয়া যায়, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র একটি জনপদ ছিল বঙ্গ জনপদ।
৬. বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে টীকা লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : আজকের বাংলাদেশের মত প্রাচীনকালে বাংলা একক কোনো ভূখন্ড ছিল না। সমগ্র বাঃলা ছিলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। প্রাচীন বাংলার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলোকে জনপদ বলা হয়। এসব ক্ষুদ্র জনপদের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল বঙ্গ।
বাংলা/বঙ্গ নামের উৎপত্তি : বাংলা/বঙ্গ নামের উৎপত্তি কিভাবে, কখন হলো তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। নি¤েœ এসব তুলে ধরা হলো:
ক. প্রাচীন মতবাদ : বঙ্গ নামের উৎপত্তি হয়েছে প্রাচীনকালেই। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত বঙ্গ ছিল বিভিন্ন জনপদের সমষ্টির নাম। ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে প্রথম বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া মহাভারতেও বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র এ বঙ্গকে ভৌগোলিক ইউনিট হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
খ. মুসলিম শাসনামল : মুসলিম শাসনামলে রচিত বিভিন্ন গ্রন্থে বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। জিয়াউদ্দিন বারানির ‘তারিখ ই ফিরোজশাহি’ গ্রন্থে বঙ্গ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার বিখ্যাত লেখক পর্যপক মিনহাজ ই সিরাজ ‘তবকাত ই নাসিরি’ গ্রন্থে ‘বাঙ্গালা’ নামের উল্লেখ করেন।
তাছাড়াও মুঘল আমলে অনেক পর্যটক, লেখক তাদের বর্ণনায়, নিবন্ধে,গ্রন্থে বাঙ্গালা নামটি উল্লেখ করেন। মুঘল শাসনামলে আবুল ফজল তার বিখ্যাত ‘আইন ই আকবরি’ গ্রন্থে বঙ্গাল নামের ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে বঙ্গ এর সাথে আল বা বাঁধ যুক্ত হয়ে বঙ্গাল নামকরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
অধ্যায় ১ঃ দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সাজেশন)*
গ. ইংরেজ শাসনামল : ইংরেজদের বেঙ্গল Bengal নামকরণ অন্যান্য ইউরোপীয়দের বেঙ্গলা থেকেই নেওয়া হয়েছে। আবার ইউরোপীয়দের লেখনীতে বেঙ্গলা নামের যে উল্লেখ পাওয়া যায় সেটি পর্তুগিজদের Bengala থেকে নেওয়া। ইউরোপীয় পরিব্রাজক ভূজারিক ‘বেঙ্গলা’ নামের দেশের কথা উল্লেখ করেছেন।
তাছাড়াও স্যামুয়েল পর্চাস তার বর্ণনায় বেঙ্গল রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৩ শতকে মার্কো পোলো বেঙ্গালা শহরের কথা উল্লেখ করেন। গ্যাস্টলদি ১৫৬১ শতকে তার মানচিত্রে চারটি গ্রামের পশ্চিমে বেঙ্গালার অবস্থান দেখিয়েছেন।
বঙ্গ বা বাঙ্গালা রাজ্য সম্পর্কে পন্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও এটি যে বর্তমান বাংলাদেশকেই বুঝাত সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে বাংলা অঞ্চলে অনেকগুলো জনপদ ছিল এবং সবগুলো জনপদ একত্রিত হয়ে পরবর্তীতে বঙ্গ বা বাংলা নাম ধারণ করেছে। তবে বঙ্গ নাম থেকে ‘বাঙ্গালা’ এবং পর্যায়ক্রমে বাংলা নামটি আসে মুঘল যুগে।
৭. বরেন্দ্র জনপদ সম্পর্কে কি জান?
অথবা, বরেন্দ্র জনপদের পরিচয় দাও।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমানকালের ন্যায় বাংলা প্রাচীনকালে একক কোনো ভূখন্ড ছিল না। আজকের যে বাংলা তা ছিল আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্তি। এই আলাদা ভাগকে বলা হয় জনপদ। আর এ জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বরেন্দ্র জনপদ।
বরেন্দ্র জনপদ : বরেন্দ্র হচ্ছে বর্তমান উত্তরবঙ্গের একটি জনপদ। ঐতিহাসিকদের মতে বর্তমান রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ এবং দার্জিলিং ও কোচবিহারসহ গঠিত সমগ্র অঞ্চল বরেন্দ্র এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিত’ কাব্যে এ গঙ্গা ও করতোয়া নদীর মধ্যভাগকে বরেন্দ্র নামে অভিহিত করা হয়েছে। আ. কা. ম. যাকারিয়া কর্তৃক সম্পাদিত ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস’ নামক পুস্তকে সমগ্র রাজশাহী বিভাগকেই বরেন্দ্র অঞ্চল নামে অভিহিত করা হয়েছে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে বৃহত্তম দিনাজপুর, মালদহ, রংপুর, বগুড়া, পাবনা, এবং বৃহত্তম রাজশাহী জেলা বরেন্দ্র ভূমির অংশ বলে ধরা হয়। ঐতিহাসিক প্রভাতাংশু মাইতির মতে, পাল শাসনামলে দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে দিব্যের নেতৃত্বে কৈবর্তরা বরেন্দ্রে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।
১৫৭৬ সালে মুঘল সম্রাট মহামতি আকবরের সময় সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এই সময়ে শাহজাদা মুহম্মদ সুজার (১৬৩১- ’৫৯ খ্রি.) বেশকিছু কীর্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে।
অধ্যায় ১ঃ দেশ ও জনগোষ্ঠীর পরিচয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (সাজেশন)*
শিবগঞ্জ উপজেলার ফিরোজপুরে তার কাচারি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। তার সময় গৌড়ের পূর্বাঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ গৌড় নগরীর উপকন্ঠে ফিরোজপুরে স্থায়ীভাবে আস্তানা গড়ে তোলেন।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের (১৬৫৮-১৭০৭ খ্রি.) পর থেকে মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে বাংলার নবাবরা প্রায় স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। নবাব মুর্শিদকুলি খানের (১৭১৭-’২৭ খ্রি.) সময় বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করা হয় সেসময় বরেন্দ্র অঞ্চল বাংলার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পরিনত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলায় যে কটি জনপদ ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল বরেন্দ্র জনপদ। জনপদের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে নিঃসন্দেহে সেসময় বরেন্দ্র অঞ্চলকে বাংলার কেন্দ্রীয় অঞ্চল বিবেচনা করা যায়।
৮. পুন্ড্র জনপদ সম্পর্কে কী জান?
অথবা, পুন্ড্র নগরের পরিচয় দাও।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখন্ড নিয়ে গঠিত হতো একটি জনপদ। বর্তমানের মত প্রাচীনকালে বাংলা নামে একক কোনো দেশ ছিল না। সমগ্র বাংলা আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক বিভক্ত অংশকে বলা হতো জনপদ। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন জনপদ হলো পুন্ড্র জনপদ।
পুন্ড্র জনপদ : প্রাচীন বাংলায় পুন্ড্রবর্ধন নামে গঙ্গা নদীর পূর্বভাগে একটি জনপদ ছিল। এর রাজধানীর নাম ছিল পুন্ড্রনগর। বর্তমানে এই স্থানটি মহাস্থানগড় নামে পরিচিত। এই জনপদের দক্ষিণে পদ্মা, পূর্বে করতোয়া (মতান্তরে যমুনা) এবং পশ্চিমে গঙ্গা নদী ছিল। এই বিচারে পুন্ড্রবর্ধনের ভিতরে প্রায় সমগ্র উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ অঞ্চলই পুন্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভূক্ত ছিল।
বর্তমান রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম কোনো না কোনো সময়ে পুন্ড্রবর্ধন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, পুন্ড্র একটি প্রাচীন জাতিমূলক, পুন্ড্ররা আরব্যভূমির প্রাচ্য-প্রত্যন্ত দেশে বসবাস করতো।
ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় মন্তব্য করেছেন, পুন্ড্রদের আবাসভূমি ছিল মুঙ্গেরের পূর্বদিকে এবং কোশীতীর সংলগ্ন। বৌধায়নের ধর্মসূত্রে উল্লেখ আছে, পুন্ড্ররা বঙ্গ এবং কলিঙ্গ দেশের প্রতিবেশী ছিল।
এই অঞ্চল খ্রিস্টপূর্ব ৩১০ অব্দের দিকে নন্দরাজের শাসনাধীন ছিল। পরে নন্দরাজকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্তের শাসনাধীনে আসে। গুপ্তবংশের রাজত্বকালে পুন্ড্রবর্ধন একটি প্রদেশে পরিণত হয়। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পুরো পুন্ড্রবর্ধনকে কয়েকটি বিভাগে (জেলা) ভাগ করা হয়।
প্রতিটি বিভাগকে আবার বীথি ও মন্ডল নামক প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এই সময় পুন্ড্রবর্ধন প্রাদেশিক শাসনকর্তার দ্বারা শাসিত হতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পুন্ড্রবর্ধন জনপদটি সুপ্রাচীন একটি জনপদ। যদিও এ জনপদের সীমানা নিয়ে বেশ বির্তক আছে তারপর ও প্রাচীন বাংলার একটি সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে পুন্ড্রবর্ধনের গুরুত্ব অনেক।
৯. গৌড় জনপদ সম্পর্কে কি জান?
অথবা, গৌড় জনপদ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমানকালের ন্যায় প্রাচীনকালে বাংলা একক কোনো ভূখন্ড ছিল না। এটি বেশকিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনপদে বিভক্ত ছিল। এ জনপদগুলো পৃথক রাজার অধীনে পরিচালিত হতো। প্রচীন বাংলার জনপদগুলোর মাঝে যে জনপদটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ছিল তার নাম গৌড় জনপদ।
গৌড় জনপদ : প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল গৌড় জনপদ। এর ভৌগোলিক অবস্থান সম্বন্ধে নির্দিষ্ট ধারণা করা বেশ কঠিন। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বঙ্গ, পুন্ড্র ও কামরূপের সাথে গৌড়ের উল্লেখ রয়েছে।
এ জনপদের ভৌগোলিক সীমার যথার্থ উল্লেখ পাওয়া না গেলেও বঙ্গ ও পুন্ড্রের সঙ্গে একত্রে এগুলোর উল্লেখের কারণে এর অবস্থান পূর্বভারতে ছিল বলে ধরা যায়। বাৎসায়ন (তিন- চার শতক) এ জনপদ উল্লেখ করেছেন। পুরাণেও গৌড়কে পূর্বদেশের জনপদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বরাহমিহিরের (খ্রি. ছয় শতক) বৃহৎসংহিতাতেও গৌড়ের উল্লেখ লক্ষণীয়।
এখানে গৌড়, পুন্ড্র, বঙ্গ. সমতট, বর্ধমান এবং তা¤্রলিপ্ত নামে ৬টি জনপদের নাম উল্লেখ আছে। উক্ত বর্ণনানুযায়ী মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমান নিয়ে ছিল প্রাচীন গৌড় রাজ্য। আদি অভিলেখর মধ্যে খ্রিস্টীয় ৫৫৪ অব্দে উৎকীর্ণ মৌখরি বংশীয় রাজা ঈশান বর্মণের হরাহলিপিতে গৌড়বাসীর উল্লেখ রয়েছে।
এ লিপি থেকে জানা যায় যে, ঈশান বর্মণ সমুদ্রতীরের অধিবাসী গৌড়দের পরাস্ত করেন। প্রবোধশিবের (খ্রি. এগারো শতক) গুর্গি লিপি থেকেও এ বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। এতে গৌড়ের রাজাকে সমুদ্রের জলদুর্গে বসবাসকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। উল্লিখিত বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যেকোনো একসময় গৌড়ের অবস্থান উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গৌড় জনপদ ছিল প্রাচীন বাংলার অন্যান্য জনপদ থেকে আলাদা। এ জনপদের সমৃদ্ধি বলে দেয় এ এলাকা অনেকটা শৃঙ্খলিত ছিল। মুসলিম শাসনামলেও গৌড় জনপদের নাম ছিল। পরবর্তীতে এটি লক্ষ্মণাবতী নাম ধারণ করে ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারায়।
১০. সমতট জনপদ সম্পর্কে কী জান?
অথবা, সমতট জনপদের পরিচয় দাও।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমানকালের ন্যায় প্রাচীনকালে বাংলা একক কোনো ভূখন্ড ছিল না। আজকের যে বাংলা তা পূর্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ছিল। যার নাম ছিল জনপদ। আর এ জনপদগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সমতট জনপদ।
সমতট জনপদ : সমতট পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের নিম্নে অবস্থিত আর্দ্র অঞ্চলের একটি জনপদ। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এর মতে, সমতটকে নি¤œদেশ ও কামরূপের দক্ষিণে বিস্তৃত অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সম্ভবত উত্তরের উচ্চ এবং উঁচুনিচু অঞ্চলের চেয়ে এই অঞ্চলের নদীবিধৌত অঞ্চল ছিল সমতল। সেই থেকে সমতট নামটি প্রচলিত হয়েছিল।
কেউ কেউ মনে করেন, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে সমতট গঠিত হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত এই জনপদের বিস্তৃতি ছিল প্রায় ৫০০ মাইল।
সাত শতক থেকে বারো শতক পর্যন্ত বর্তমান ত্রিপুরা জেলা ছিল সমতটের অন্যতম অংশ। একসময় এ জনপদের পশ্চি সীমা চব্বিশ পরগনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্বতীর থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চকেই সম্ভবত সমতট বলা হতো। সাত শতকে সমতটের রাজধানী ছিল কুমিল্লা শহরের ১২ মাইল পশ্চিমে বড়কামতা নামক স্থানটি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমতট অঞ্চলটি প্রাচীন বাংলার জনপদসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি অঞ্চল। এ অঞ্চলে গুপ্ত ও চন্দ্রবংশীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তবে এ জনপদের নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা ছিল না।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।